রোহিঙ্গাদের পাকস্থলি ইয়াবার খনি

সারাদেশে ইয়াবা পাচারের পরিচিত রুট কক্সবাজার। মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা জেলার টেকনাফ-উখিয়া হয়ে সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এসব ইয়াবা পাচারে নানা কৌশল করেও জড়িতরা ধরা পড়েছে। তবে এবার গোল্ড স্মাগলিংয়ের মতো রোহিঙ্গাদের পাকস্থলি করে ইয়াবা পাচার পদ্ধতি কাজে লাগাচ্ছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এতে একজন তিন হাজারের বেশি ইয়াবা পাচার করতে পারায় পদ্ধতিটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যানুযায়ী, সাম্প্রতি পাকস্থলি করে ইয়াবা পাচারের সময় ৫০ জনের বেশি রোহিঙ্গা ধরা পড়েছে। এর মধ্যে ইয়াবাসহ র‌্যাব সাতজনকে, পুলিশ ১৩ জনকে, বিজিবি ১৫ জনকে এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বিভাগ আটজনকে আটক করে। বাকিরা কোস্টগার্ডের হাতে ধরা পড়েন। এছাড়া এক বছরে ইয়াবা বহন, সেবন ও কেনা-বেচার অভিযোগে ১০০টি মামলায় দেড় শতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। এদের বেশির ভাগই পাকস্থলি করে ইয়াবা বহন করছিলো। তাছাড়া রাজধানীতে ময়নাতদন্তের সময় দুই ব্যক্তির পাকস্থলিতে ইয়াবার সন্ধান পাওয়া যায়।

টেকনাফের লেদা শিবিরের ডেভেলপমেন্ট কমিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, হঠাৎ পাকস্থলি করে ইয়াবা বহনকারী রোহিঙ্গা ধরা পড়ছে। এভাবে ইয়াবা বহনের সময় ২০ জনের বেশি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আটক হয়েছে। পুলিশ বিভিন্ন ক্যাম্পে মাদকবিরোধী সচেতনতার সভা করছে। বিষয়টি ইতিবাচক।
কক্সবাজারের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সহকারী পরিচালক সোমেন মণ্ডল বলেন, একটি চক্র রোহিঙ্গাদের পাকস্থলি করে ইয়াবা বহন করাচ্ছে। এক বছরে কক্সবাজারের ইয়াবাসহ ৪০ রোহিঙ্গাকে আটক করেছি। তাদের কাছ থেকে এক লাখ ২০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ১৭টি মামলা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, এপ্রিল মাসের শেষের দিকে মিয়ানমার থেকে আসার সময় ২৬ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। এক্স-রের মাধ্যমে তাদের মধ্যে ১৩ জনের পেটে ইয়াবার অস্তিত্ব মেলে। তাদের একেক জনের পেটে তিন হাজারের বেশি ইয়াবা পাওয়া যায়। এর বিনিময়ে তারা জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে পায় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়। এভাবে ইয়াবা বহন অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে।

উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, ১০ মাসে মাদক বহনের সময় ৩০ জনের বেশি রোহিঙ্গাকে আটক করেছি। অসহায়ত্ব ও অভাবের সুযোগে কিছু লোক রোহিঙ্গাদের মাদক পাচারে জড়িত করছে। দেশীয় মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারাও জড়াচ্ছে।

র‌্যাব-১৫-এর টেকনাফ ক্যাম্পের ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট মির্জা শাহেদ মাহতাব বলেন, ১০ মাসে মাদকসহ ৫১ রোহিঙ্গাকে আটক করেছি। তাদের কাছ থেকে চার লাখের বেশি ইয়াবা উদ্ধার করেছি। এ ঘটনায় মাদক আইনে ৩৫টি মামলা হয়েছে। র‌্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে অনেক ইয়াবা পাচারকারী রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। যে কারণে শিবিরগুলোতে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।

কক্সবাজারের অ্যাডিশনাল এসপি ইকবাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গারা মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ায় সবাই উদ্বিগ্ন। তবে ক্যাম্পগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অভিযান পরিচালনার পর থেকে ইয়াবা ব্যবসা অনেকটা কমে গেছে। কিন্তু সম্প্রতি রোহিঙ্গারা পেটের ভেতরে করে ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ছে।

তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের মাদক থেকে দূরে রাখতে ক্যাম্পে ক্যাম্পে মাদকবিরোধী সভা পরিচালনা করছে পুলিশ। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রোহিঙ্গাদের তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

টেকনাফের ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান বলেন, সীমান্তে মাদক ঠেকাতে বিজিবি দায়িত্ব পালন করছে। এপ্রিল মাসে ৭১ হাজার ৬৩৯ ইয়াবাসহ ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে মাদক পাচার রোধে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)