দেবহাটার ছাত্রলীগের নেতা ফয়জুল্লাহ’র অপকর্ম ঢাকতে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পাল্টা মানববন্ধন
দেবহাটায় ছাত্রলীগের নেতা ফয়জুল্লাহ’র চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মঙ্গলবার মানববন্ধন করে দেবহাটা সরকারী কেবিএ আহসান উল্লাহ কলেজের শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা। কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়জুল্লাহ বিভিন্ন সময় কলেজ প্রশাসনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করে আসছে।
গত ২০ তারিখ সোমবার ১৫ হাজার টাকার দাবী জানালে সেটি অপারগতা স্বীকার করলে ফয়জুল্লাহ অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে দাড়িয়ে অশোভন আচরণ ও গালিগালাজ করতে থাকে। এমনকি অধ্যক্ষ সহ ২ শিক্ষককে মারপিটের হুমকি দেয়। শিক্ষকদের প্রতি অশোভন আচরণ, ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা করায় বর্তমান কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করার জন্য ৪৮ঘন্টার আল্টিমেটাম দিলেন শিক্ষক ও কর্মচারী বৃন্দ।
যদি দেবহাটা উপজেলা ছাত্রলীগ ফয়জুল্লাহ কে বহিষ্কার না করে তাহলে আমাদের এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ চলমান থাকবে এবং আমরা জেলা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বরাবর অভিযোগ পত্র জমা দেব। আসা করি জননেত্রী শেখ হাসিনার ছাত্রলীগ আমাদের কে একটি সুন্দর শৃঙ্খল ছাত্রলীগ উপহার দেবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ রিয়াজুল ইসলাম, শিক্ষক গোলাম জাকারিয়া, পবিত্র মোহন দাশ, মোল্লা সাব্বীর হোসেন, কামিদুল ইসলাম, শংকর কুমার দাশ, আজহারুল ইসলাম, আব্দুল আজিজ, শেখ মিজানুর রহমান, শহীদুল ইসলাম, মইনুদ্দিন খান, ফেরদৌসি পপী, শেখ হাবিবুল্লাহ, আছফারজ্জামান, এ,এস,এম মিজানুর রহমান, মনিরুল ইসলাম, আকবর আলী, মোশারফ হোসেন, শাহানুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবীর, স্বপন কুমার মন্ডল, আকরাম হোসেন, আজিজুর রহমান, মাসুদ করিম, শচীন্দ্রনাথ মন্ডল, রঞ্জন কুমার মন্ডল, অভিজিৎ কুমার বসু, আব্দুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান সহ সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রীরা।
এদিকে, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে ফয়জুল্লাহ, নিজের দোষ ঢাকতে একই দিন বিকালে কলেজের অধ্যক্ষ রিয়াজুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের পাল্টা অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়জুল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়জুল্লাহ বলেন, প্রকৃতপক্ষে কলেজটির অধ্যক্ষ রিয়াজুল ইসলাম কলেজের বিভিন্ন দুর্নীতি-অনিয়মের সাথে জড়িত। এসকল বিষয়ে প্রতিবাদ সহ চলমান দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় অধ্যক্ষ রিয়াজুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার সহ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।
এদিকে কলেজের অধ্যক্ষ রিয়াজুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়ম ও ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে দূর-ব্যবহারের অভিযোগে মানববন্ধন করেছে ঐ কলেজের ছাত্র না হয়েও ছাত্র সেজে মানববন্ধন করা ছাত্ররা। বুধবার বেলা ১১টায় কলেজ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনটিতে
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিভিন্ন সময়ে কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যবহারিকের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়, নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ভর্তি ফি বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায়, পরীক্ষার ফরম ফিল আপের নামের বোর্ড নির্ধারিতের চেয়ে দ্বিগুণ টাকা আদায়, কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ ও ফল বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ সহ বহু দুর্নীতি অনিয়মের সাথে সম্পৃক্ত অধ্যক্ষ রিয়াজুল ইসলাম।
তাছাড়া এসব দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে বিভিন্ন সময়ে অধ্যক্ষ রিয়াজুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। তাই তদন্ত পূর্বক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ারও দাবী জানান শিক্ষার্থীরা।
মানবন্ধনে ছিলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান সোহাগ, পারুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব হোসেন, কুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক নাজমুল হুদা, নওয়াপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম, দেবহাটা সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি অমিত হাসান সবুজ, সাধারণ সম্পাদক রফিক হোসেন, কেবিএ কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাসুদ রানা, সাধারণ সম্পাদক আল হাসিব ইফতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু রায়হান।
তবে মানববন্ধনে যারা অংশগ্রহণ করেন তারা ফয়জুল্লাহ’র সহকর্মীরা ও কলেজের কিছু ছাত্র, বাকিরা অনেকেই পড়ালেখা করেন না। তাছাড়া মানববন্ধনে অধ্যকের বিরুদ্ধে অনিয়মের কথা বল্লোও উপযুক্ত প্রমাণসহ এখন কোন শিক্ষার্থী কর্তৃপক্ষের কাছে কোন দিন কোন অভিযোগ করেননি।
এদিকে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনের খবর পেয়ে পুলিশ সহ দ্রুত কলেজ ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন কলেজটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইকবাল হোসেন। এসময় তিনি মানববন্ধনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সমূহ শুনে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বস্থ করেন।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কলেজের এক শিক্ষক জনান, সম্প্রতি মাদক সেবন অবস্থায় কলেজ চলাকালীন সময়ে কলেজ থেকে ফয়জুল্লাহ কে গ্রেফতার করেন দেবহাটা থানা পুলিশ, পরে মুচল্কাদিয়ে সে ছাড়া পায়।
কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়জুল্লাহ বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। আমি ঐদিন অধ্যক্ষের কাছে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির মোবাইল ফোনে কথা বলানোর জন্য যায়।
এব্যাপারে দেবহাটা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এ এইচ সোহাগ বলেন ছাত্রলীগ একটি আদর্শের সংগঠন, আর আমার নিজের ভাইও যদি দেবহাটা উপজেলা ছাত্রলীগের সাথে থেকে কোন খারাপ কাজ করে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া ফয়জুল্লাহ’র বিরুদ্ধে মাদক সেবনসহ যে অভিযোগ গুলো আনা হয়েছে তদন্ত পূর্বক তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।