হাতছানি দিয়ে ডাকছে স্বপ্ন পূরণ
“এত কাছে,তবু কত দূরে” এমন কথাই বারবার নিয়তি হিসেবে মেনে নিতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে । “এবার কি পারবে বাংলাদেশ?” আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ওঠার পর বাংলাদেশের ক্রীড়া ভক্তদের মনে আরো একবার তাই ভেসে উঠছে এই প্রশ্ন।
যে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে ১৭ই মে, শুক্রবার ডাবলিনে অনুষ্ঠিত ফাইনালে।
বিশ্বকাপের প্রস্তুতি উপলক্ষে মে মাসের শুরুতেই আয়ারল্যান্ড সফরে যায় বাংলাদেশ। স্বাগতিক আয়ারল্যান্ড, উইন্ডিজ ও বাংলাদেশকে নিয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রত্যাশার চাইতে দাপটের সঙ্গে খেলে ফাইনালে উঠে মাশরাফি বাহিনী।
গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচে অপরাজিত থেকে ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে টিম টাইগার্স। উইন্ডিজের বিপক্ষে বহুজাতিক এই টূর্ণামেন্টের ফাইনালে অধরা ট্রফি জিতেই বিশ্বকাপে যেতে চায় বাংলাদেশ দল।
তবে ফাইনালের আগে বাংলাদেশ দলের নির্বাচকরা একটি মধুর সমস্যায় পড়তে পারেন। কারণ মূল একাদশে যারা খেলেছেন তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমানতালেই ভালো পারফর্ম করেছে শেষ ম্যাচে সুযোগ পাওয়া অন্য সদস্যরাও।
দলে তামিমের জায়গা নিয়ে সংশয় না থাকলেও ভাবতে হচ্ছে ওপেনে কে হচ্ছেন তার সঙ্গী। নির্বাচকদের প্রথম পছন্দ সৌম্য সরকার হলেও শেষ ম্যাচে সুযোগ পেয়ে ৬৭ বলে ৭৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে দলে নিজের দাবী জানিয়ে রেখেছেন আরেক টাইগার ওপেনার লিটন দাস। ডান-বাম কম্বিনেশনও এক্ষেত্রে লিটনকে এগিয়ে রাখবে, যেখানে দুই ম্যাচেই পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলে দাবী শক্ত করে রেখেছেন সৌম্য সরকার।
এক্ষেত্রে তিনজনকে সুযোগ দিতে গেলে সাকিবকে পাঁচে ব্যাট করতে হতে পারে, যেখানে মিথুন বিগত কয়েক সিরিজ ধরেই সাফল্য দেখিয়ে আসছেন। শেষ ম্যাচে সাকিব হালকা ইঞ্জুরড হওয়ায় তার খেলা নিয়েও নিশ্চয়তায় নেই টিম ম্যানেজমেন্ট। চারে মুশি ও ছয়ে রিয়াদ নিশ্চিত থাকলেও পরবর্তী অবস্থান নিয়েও নির্বাচকদের বিচক্ষণতার পরিচয় দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। মাশরাফি ও মুস্তাফিজের জায়গা বলা যায় নিশ্চিত। সাব্বির, সাইফুদ্দিন ও মিরাজের ভেতর কোন দুইজনকে খেলানো হবে সেটিও দেখার বিষয়।
এদিকে রাহী শেষ ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়ে দলে নিজের দাবী জোরালো করেছেন। যেখানে রুবেলও সুযোগ পাওয়ার দাবী রাখেন। তবে সাব্বির,সাইফ ও মিরাজ তিনজনই খেললে রুবেল ও রাহী দুজনকেই সাইডবেঞ্চে বসে কাটাতে হতে পারে।
উইন্ডিজ শিবির অবশ্য বাংলাদেশের মতো মধুর সমস্যায় নেই। গ্রুপ পর্বে দুই ম্যাচেই বাংলাদেশের কাছে হারায় আন্ডারডগ হিসেবে ফাইনালে মাঠে নামবে তারা। শেই হোপ বলতে গেলে একাই বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে লড়াই করেছেন। সুনিল আম্ব্রিস ভালো শুরুর পড়েও ইনিংস বড় করতে পারছেন না। ড্যারেন ব্রাভো রানে না থাকাটাও বড় একটা চিন্তার ভাজ ফেলে দিচ্ছে নির্বাচকদের ভাবনায়। চেজ ও হোল্ডার একটি করে ম্যাচে পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস পেলেও বাকী ব্যাটসম্যানরা কেউই তেমন ভূমিকা রাখতে পারছেন না।
বোলিং ডিপার্টমেন্ট নিয়েও যথেস্ট দুশ্চিন্তার অবকাশ রয়েছে উইন্ডিজ শিবিরে। বাংলাদেশের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া দুই ম্যাচে উইন্ডিজ বোলাররা সাকুল্যে নিতে পেরেছেন মাত্র সাত উইকেট। তাই ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিং ডিপার্টমেন্টেও তারা পরিবর্তন আনতে পারে, যদিও বেঞ্চের প্লেয়াররা সেভাবে নিজেদের প্রমাণ করতে পারেনি।
ত্রিদেশীয় টূর্ণামেন্টের ফাইনালে তাই বাংলাদেশকেই ফেভারিট হিসেবে ক্রিকেটবোদ্ধারা এগিয়ে রাখছেন।
বাংলাদেশ জিতলে এটিই হবে বহুজাতিক টূর্ণামেন্টে তাদের প্রথম শিরোপা। তবে ফাইনাল মানেই যেনো টাইগারদের কাছে বিষাদময় কাব্যগ্রন্থ, অন্তত বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস এমনটাই বলছে।
ত্রিদেশীয় সিরিজ মানেই বাংলাদেশের কাছে যেন এক হতাশার ও আক্ষেপের নাম। বহুজাতিক বিভিন্ন টূর্ণামেন্টের ফাইনালে এর আগেও উঠেছে বাংলাদেশ। কিন্তু তীরে এসে তরী ডোবানোর ঘটনা ঘটেছে বারবার।
বাংলাদেশ প্রথম ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ওঠে ২০০৯ সালে। দেশে অনুষ্ঠেয় শ্রীলংকা ও জিম্বাবুয়ে কে নিয়ে হওয়া সিরিজে। সে ম্যাচে শুরুতে ব্যাট করে বাংলাদেশ মাত্র ১৫২ রানে অল আউট হলেও শ্রীলংকার শুরুর ৫ উইকেট তুলে নেয় ৬ রানে। জয়ের সুবাস পাওয়া সেই ম্যাচে বাংলাদেশ ২ উইকেটে হেরে যায় কুমার সাংগাকারা ও মুরালিধরণের অতিমানবীয় পারফরমেন্সে।
এরপর আরো কয়েকটি ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উঠলেও কান্নাভেজা কন্ঠেই সন্তষ্ট থাকতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
এবার কি সেই খরা ঘুচবে টাইগারদের? বাংলাদেশ কি তাহলে বহুজাতিক শিরোপা ঘরে তুলতে যাচ্ছে? দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ও বিশ্লেষন তো সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ
তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার/লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মাদ মিথুন, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির রহমান, মেহেদী মিরাজ, মাশরাফি মোর্তাজা, মুস্তাফিজুর রহমান, আবু জায়েদ রাহী/সাইফউদ্দিন।
উইন্ডিজের সম্ভাব্য একাদশ
শেই হোপ, সুনিল আম্ব্রিস, ড্যারেন ব্র্যাভো, রস্টন চেজ, জোনাথন কার্টার, জেসন হোল্ডার, ফাবিয়েন এলেন, এশলে নার্স, কেমার রোচ, শেলডন কটরেল, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল।