৩৩ মিনিটেই খুন স্বামী আনারুল, চার্জশীট থেকে ৪ আসামিকে বাদ দিয়েছে পুলিশ :সংবাদ সম্মেলনে স্ত্রী
আকিকায় যাবার জন্য বেলা ১০ টা ১২ মিনিটে শ্বশুর আমার স্বামীকে ফোন করে ডেকে নেন। ৩৩ মিনিট পর আমার ননদ ফোন করে বলেন ‘ আনারুলকে দেখতে চাইলে এখনি এসো’। এরপরই আমি ছুটে গিয়ে শ্বশুর আহমদ আলি সরদারের ঘরে যেয়ে দেখতে পাই ধারালো ছুরিতে ক্ষতবিক্ষত স্বামী আনারুলের রক্তাক্ত লাশ।
বুধবার বিকালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কন্ঠে আট মাসের শিশু কন্যাকে নিয়ে এ কথা বলেন আশাশুনির প্রতাপনগরের নিহত আনারুলের স্ত্রী কানিজ আশিকা জলি। এ সময় সাথে তার বাবা আকরাম হোসেন ও ভাই শুভ উপস্থিত ছিলেন। হতাশা ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন এমন একটি স্পর্শ কাতর খুনের ঘটনায় পুলিশ তড়িঘড়ি করে গত ৩০ এপ্রিল চার্জশীট দিলেও বাদ দিয়েছে নাম নুরুল ইসলাম । সে এই হত্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমি এই চার্জশীটে নারাজি দিতে চাই। একই সাথে পূনঃতদন্ত করে নতুন চার্জশীট দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। এই হত্যার বিষয়ে শ্বশুর আহমদ আলি ও শাশুড়ি মালেকা খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জলি বলেন পারিবারিক সম্পদ বাটোয়ারা করতে গিয়ে আমার শ্বশুর আহমদ আলি আশাশুনির প্রতাপনগর তালতলা বাজারে তার ছোট ছেলে আমার স্বামী আনারুলকে একটি ইলেকট্রনিক্সের দোকান করে দেন। অপর দুই ভাই মিজানুর ও আনিসুরকেও তিনি সম্পদ দেন। এই বন্টন নিয়ে যতো সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন স্বামীর দুই ভাই অনেকটাই অসন্তুষ্ট ছিল আনারুলকে দোকান করে দেওয়ায়। এরই জেরে কয়েকবার ঝামেলাও হয়। কিন্তু তারা যে আমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে হত্যা করবে এ ধারনা আমার ছিলনা উল্লেখ করে তিনি বলেন গত ১১ মার্চ আমরা যখন আমার বাবার বাড়িতে আছি ঠিক তখনই ফোন করেন শ^শুর আহমদ আলি। বলেন মিজানের ছেলের আকিকা। বেলা তখন ১০ টা ১২ মিনিট। স্বামী আনারুল মোটর সাইকেল নিয়ে দ্রুত চলে যান আমার শ্বশুরের বাড়ি। এর পর ১০ টা ৪৫ মিনিটে আমার ননদ কারিমা খাতুন ফোন করে বলেন ‘ আনারুলকে দেখতে চাইলে চলে আসো এখনই’। তিনি বলেন তাকে কুপিয়ে হত্যার পর রক্তভেজা মেঝেতে ফেলে রেখে বাড়ির সবাই পালিয়ে যায়। আমি সেখানে পৌছে অচেতন হয়ে পড়ি।
এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে দুই ভাসুর মিজানুর , আনিসুর ,তাদের স্ত্রী মেহেরুননেসা ও আসমা খাতুন এবং ননদ কামরুননাহার,মাসুমা খাতুন ও আফিফাকে আসামি করে আশাশুনি থানায় একটি খুনের মামলা দেন। এর মধ্যে কেবলমাত্র কামরুননাহার ও মাসুমা জেলে আটক রয়েছে। অপর আসামিরা পলাতক। তিনি বলেন এ মামলা তদন্ত করেন আশাশুনি থানার এসআই ইসমাইল হোসেন। তিনি যে চার্জশীট দিয়েছেন তা অসম্পূর্ণ, পক্ষপাতদুষ্ট,অসংলগ্ন। যথাযথভাবে তদন্ত না করেই তিনি এই চার্জশীট দেন। একারণে অন্যতম ঘাতক নুরুল ইসলাম বাদ পড়েছেন। সাত আসামির তিনজন মিজানুর, আনিসুর ও মাসুমাকে রেখে অপর আসামিদের নাম বাদ দিয়েছেন তিনি। চার্জশীট দেওয়ার আগে তদন্ত কর্মকর্তা আমার সাথে একবারও পরামর্শ করেন নি জানিয়ে তিনি বলেন তড়িঘড়ি করে এবং প্রতিপক্ষের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে এমন ভ্রান্ত চার্জশীট দিয়েছেন তিনি।
আফসোস করে তিনি বলেন আমার স্বামী হত্যার বিষয়টি দেশের গণমাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রচার ও প্রকাশ হওয়ায় সিআইডির এডিশনাল ইন্সপেক্টর জেনারেল এক নির্দেশনায় বলেন ‘ মামলাটি সিাইডি ঢাকা তদন্তভার গ্রহণ করেছে। সিআইডি সাতক্ষীরার পুলিশ পরিদর্শক মেসবাহউদ্দিনকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে’। ২০ মার্চ তারিখে এই চিঠির পরও আশাশুনি থানা পুলিশ তার কোনো গুরুত্ব না দিয়ে নিজেরাই তদন্ত কাজ চালিয়ে যায়। সিআইডির ২৭ মার্চ তারিখের ১৩৯ নম্বর এবং ২৯ এপ্রিলের ১৮১ নম্বর স্মারক অনুযায়ী ডকেট না পাঠিয়ে এবং এর কোনো গুরুত্ব না দিয়ে সম্প্রতি মামলাটির ভ্রান্ত চার্জশীট দিয়েছে পুলিশ। চারজন আসামিকে কিভাবে কোন যুক্তিতে তিনি বাদ দিলেন এমন প্রশ্ন রেখে জলি বলেন আমি এই চার্জশীট মানিনা। কানিজ আশিকা জলি আরও বলেন তার স্বামী আনারুল ছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন যুবলীগ নেতা। আমাদের একমাত্র কন্যা সন্তান আট মাস বয়সের আফ্রা ইসলাম জয়ী। যে দোকান আমার শ^শুর তার ছেলেকে দিয়েছিলেন স্বামীকে হারানোর পর সেই শ^শুর সেই দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে আমাদের অসহায় করে তুলেছেন। আমার বাবা শ্রীপুর গ্রামের আকরাম হোসেনই আমার এখন একমাত্র ভরসা জানিয়ে তিনি বলেন ‘ যারা হত্যাকারী আমি তাদের বিচার চাই। আর এজন্য এসআই ইসমাইলকে সরিয়ে যথাযথ তদন্তেরও দাবি জানাচ্ছি’।