জিহাদের প্রথম নারী সাহাবীর প্রাণ গিয়েছিলো আবু জাহেলের হাতে
নারী জাতির ধৈর্য ও ধর্ম বিশ্বাসে অটুট মনোভাব বাস্তবিকই এক অনন্য সাধারণ ব্যাপার। অন্তরে একবার যখন আল্লাহ পাকের প্রেম ও মহব্বতের আগুন জ্বলে উঠে তখন সবপ্রকার দুঃখ ও যাতনা সহজ হয়ে যায়। হাজারো ঘটনা পাওয়া যায় যারা ইসলামের জন্য অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিতে কুন্ঠিত হননি। ইসলামের খাতিরে যে সকল মহাপ্রাণ পুরুষ ও নারী অপরিসীম দুঃখ যাতনা ভোগ করেছেন হযরত সুমাইয়া বিনতে খাইয়াত তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তিনি হলেন ইসলামিক ঐতিহ্য অনুসারে হিজরত পূর্ব সময়ের প্রথম শহীদ সাহাবী এবং মহিলা যিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার কারণে আবু জাহলের হাতে নিহত হন। তিনি ইয়াসির ইবনে আমেরের স্ত্রী এবং আম্মার ইবনে ইয়াসিরের মাতা ছিলেন, যারা প্রাথমিক মুসলিম ধর্মান্তরিতদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তার নির্যাতন ও নিহত হওয়ার ঘটনা ইবনে ইশহাক রচিত সীরাতে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ রয়েছে-
সাহাবী হযরত সুমাইয়া বিনতে খাইয়াতরের এই পৃথিবীতে জন্ম হয়েছিল একজন দাসী হিসেবে। নরাধম আবু জাহেলের চাচা আবু হুজায়ফা ইবনে আল মুগীরার গৃহে তার জন্ম হয়। তার স্বামী ছিলেন হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির (রাযিঃ)। ইয়েমেন থেকে হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির (রাযিঃ) একজন দাস হিসেবে আবু হুজায়ফা ইবনে আল মুগীরার গৃহে নীত হন। পরবর্তীতে ইসলামের পূর্ব যুগেই আবু হুজায়ফা ইবনে আল মুগীরা তার দাসী হযরত সুমাইয়া বিনতে খাইয়াত (রাযিঃ) ও দাস হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির (রাযিঃ) -এর সাথে বিয়ে দেন। যদিও তারা তাদের সংসার জীবন শুরু করেন স্বাধীন মানব মানবী রূপেই। স্বাধীনভাবে দাম্পত্যজীবন শুরু করলেও তারা ছিলেন প্রভাবশালী গোত্রের অধিনস্থ। আরব সমাজের রীতি অনুযায়ী, দাস দাসী স্বাধীন হলেও আরবের একজন প্রভাবশালী গোত্রপতির অধিনেই আরব সমাজে বসবাস করতে হবে এবং সেই প্রভাবশালী গোত্রপতি সবরকম প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। আরব সমাজের রীতি অনুযায়ী আবু হুজায়ফা ইবনে আল মুগীরা আবু জাহেলের আপন চাচা ছিল তাই আবু হুজায়ফা ইবনে আল মুগীরার মৃত্যুর পর আবু জাহেলের অধিনতা মেনেই হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত (রাযিঃ) ও হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির (রাযিঃ) স্বাধীন দম্পতিরূপে মক্কায় বসবাস করেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীন ইসলাম প্রচার করার সাথে সাথে হযরত সুমাইয়া বিনতে খাইয়াত (রাযিঃ) ও হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির (রাযিঃ) মুসলমান হয়ে যান। ইসলাম গ্রহণ করার পর হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত (রাযিঃ) এর উপর নরাধম আবু জাহেল অকথ্য অত্যাচার শুরু করে। নরাধম আবু জাহেল তাদের দুজনকেই মক্কার আল বাতহা উপত্যকার মরুভূমির তপ্ত বালুর মাঝে লোহার পোষাক পড়িয়ে ফেলে রাখত। অকথ্য অত্যাচারেও নত হয়নি ইসলামের জন্য বিলিয়ে দেয়া সেই মানুষগুলোর মাথা, দেহের লাল রক্তধারায় হাসি ফুটেছে পাপিদের মুখে। চালিয়েছে ওরা অকথ্য নির্যাতনের পালা, দ্বীন ইসলামে অকুতোভয় আর অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে অর্জন করেছে শহীদের মালা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জানিয়েছেন জান্নাতের সুসংবাদ।
যেহেতু হযরত সুমাইয়া বিনতে খাইয়াত (রাযিঃ) আবু জাহেলের অধীনস্থ ছিলেন এবং অন্য কোনো প্রভাবশালী গোত্রপতি তাদের ছিলনা তাই এমন অকথ্য অত্যাচার সহ্য করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার হযরত সুমাইয়া বিনতে খাইয়াত (রাযিঃ) এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে উপত্যকার তপ্ত বালুতে লোহার পোষাকে পড়ে থাকতে দেখে জান্নাতের সুসংবাদ দেন। তখন সে বলেন – ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি জান্নাতের সুগন্ধ এই তপ্ত মরুভূমির বুকে শুয়েই পাচ্ছি।’
দীর্ঘদিন অত্যাচার নির্যাতন করার পরও হযরত সুমাইয়া বিনতে খাইয়াত (রাযিঃ) দ্বীন ইসলাম ত্যাগ করেননি। এমন অটল মনোবল আর অসীম ধৈর্য্যের অধিকারী ছিলেন তিনি। একদিন তিনি দাঁড়ান অবস্থায় ছিলেন। এমতাবস্থায় দুষ্ট দুরাচার আবু জাহেল কোথা থেকে এসে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে এবং অতিমাত্রায় রাগান্বিত হয়ে হযরত সুমাইয়া বিনতে খাইয়াত (রাযিঃ) এর লজ্জাস্থানে বর্শা নিক্ষেপ করে। এভাবেই শাহাদাত বরণ করেন নির্ভীক এই জিহাদি নারী। নরাধম, পাপী আবু জাহেল হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত (রাযিঃ) এর স্বামী হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির (রাযিঃ) কে তীরবিদ্ধ করে এবং তিনি শহীদ হন।
হযরত সুমাইয়া বিনতে খাইয়াত (রাযিঃ) যখন শহীদ হন তখন মুসলমানদের ছিল অসহায় অবস্থা। তবুও সেই পরিবেশর সঙ্গে লড়েছেন এই নারী। হযরত সুমাইয়া বিনতে খাইয়াত (রাযিঃ) কে লোহার বর্ম পড়িয়ে উপত্যকার তপ্ত মরুভূমিতে ফেলে রাখা হত কিন্তু মক্কার সেই রূঢ় পরিবেশেও তিনি দ্বীন ইসলাম থেকে একচুলও সরেননি। অথচ আজকের দিনে আমরা মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়েও দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে গাফেল কিন্তু সাহাবীরা হাজার অত্যাচার সহ্য করেও ইসলাম থেকে একচুলও সরে দাঁড়াননি। ইসলাম নারীকে দিয়েছে সম্মান, করেছে সম্মানিত। অন্ধকার যুগে যেই মেয়েদের মাটিতে পুতে ফেলা হতো সেখানে আল্লাহর প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীকে বিশেষায়িত করেছেন সম্মানে। তবুও আমরা আজকাল ইসলাম থেকে গাফেল।