ভিক্ষা চাই না, ন্যায্য পাওনা চাই
বকেয়া বেতনের দাবিতে ফুঁসে উঠেছেন খুলনার পাটকল শ্রমিকরা। উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পাটকল সেক্টর। প্রতিনিয়ত শ্রমিকদের মাঝে জমছে ক্ষোভের পাহাড়।
শ্রমিকরা বলছেন, ক্ষুধার যন্ত্রণায় বাধ্য হয়েই রাজপথে নেমেছি। আমরা তো ভিক্ষা চাই না, ন্যায্য পাওনা চাই।
বিজেএমসি’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নয় দফা দাবিতে ৫ মে দুপুর থেকে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলের উৎপাদন বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা। নয়টি পাটকলে গড়ে প্রতিদিন একশ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। সে হিসেবে বুধবার পর্যন্ত গড়ে ৩৫০ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন করতে পারেনি এসব পাটকল। ফলে চারদিনে সাড়ে তিন কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, পাটকল শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছেন। এতে মিলগুলোর সব ধরনের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
তার দেয়া তথ্যমতে, খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলে শ্রমিকদের ৯ থেকে ১২ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। একইসঙ্গে কর্মচারী-কর্মকর্তাদের তিন থেকে চার মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ কোটি টাকার বকেয়া রয়েছে।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন ও আলীম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম লিটু বলেন, বুধবার বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) শ্রমিক, কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) কার্যালয়ে পাটকল শ্রমিকলীগ, সিবিএ ও নন সিবিএ’র বৈঠকে ১৩ মে থেকে সারাদেশের সরকারি পাটকলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়েছে।
ধর্মঘট চলাকালে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রাজপথ-রেলপথ অবরোধ ও রাজপথে ইফতার করবে শ্রমিকরা। এর আগে ১২ মে প্রতিটি পাটকলে গেট সভা হবে। এ সময়ের আগ পর্যন্ত খুলনা-যশোর অঞ্চলের নয়টি পাটকলের উৎপাদন বন্ধ রেখে প্রতিদিন ৩ ঘণ্টার বিকেলে রাজপথ-রেলপথ অবরোধ চলমান কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।
পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে বিকেলে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে অনেক রোজাদার যথা সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে না পেরে সড়কে ইফতার করতে হয়।
শ্রমিক নেতারা জানান, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের ১২ সপ্তাহের মজুরি ও কর্মচারীদের চার মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। অর্ধাহারে-অনাহারে পরিবার নিয়ে তাদের দিন কাটছে। এ অবস্থায় আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। বকেয়া টাকা না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও জানান নেতারা।
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কমরেড শেখ সাহিদুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের অভুক্ত রেখে দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয়। পবিত্র মাহে রমজান শুরু হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন এখনো পরিশোধ করা হয়নি। শ্রমিকরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। শ্রমিকদের ৯ দফা দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের তৃতীয় দফা আন্দোলনে ১৫ এপ্রিল শ্রম অধিদফতরে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে ৫ দফা দাবি মেনে নেয়ার চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে ১০ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি পরিশোধের কথা ছিল।
তিনি বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় শ্রমিকরা রাজপথে জনগণের আনুকূল্যে ইফতারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্ণিত অবস্থায় নেতারা অবিলম্বে অভুক্ত পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া মজুরিসহ সব পাওনা পরিশোধ করার জোর দাবি জানান।
পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, বকেয়া মজুরি-বেতন পরিশোধ, জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশনের রোয়েদাদ ২০১৫ কার্যকর, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ও গ্রাচ্যুইটির অর্থ পরিশোধ, চাকরিচ্যুত শ্রমিক-কর্মচারীদের পুনর্বহাল, সব মিলে সেটআপের অনুকূলে শ্রমিক-কর্মচারীদের শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ ও স্থায়ীসহ ৯ দফা দাবিতে এ আন্দোলনের ডাক দেন শ্রমিক নেতারা।