সাতক্ষীরা আশাশুনির মোনায়েম হত্যার আসামীদের গ্রেফতারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
বিরোধপূর্ণ জমি জবরদখলকে কেন্দ্র করে মোনায়েম গাইনকে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলার ছয় আসামীর জামিন বাতিল ও পলাতক আসামীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার গোদাড়া গ্রামের এলাহী বক্স গাইনের ছেলে নজরুল ইসলাম গাইন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন যে, শোভনালী ইউনিয়নের বালিয়াপুর মৌজার সিএস ৩৭৫সহ কয়েকটি খতিয়ানের হাল ৯৭, ১৪১সহ কয়েকটি দাগের মধ্যে ২১.০৪ একর জমি ২০০১ সালে তিনি ও তার ভাই শহীদুল ইসলাম গাইন, ওহাব গাইনসহ কয়েকজন গোদাড়া গ্রামের আব্দুল খালেক, বালিয়াপুর গ্রামের খোদা বক্স সরদারসহ কয়েকজনের কাছ থেকে কোবালা মূলে কিনে শান্তিপূর্ণ ভোগ দখলে আছেন। ওই জমি নিয়ে আশাশুনি সদরের ফজলুর রহমানের সঙ্গে বিরোধ দেখা দিলে ২০০৮ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম উভয়পক্ষকে ডেকে এক শালিসের মাধ্যমে মীমাংসা করে দেন। শালিসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি ও তার শরীকগন ওই জমি রুহুল আমিন গাইন ও মোনায়েম গাইনের কাছে চিংড়ি চাষের জন্য লিজ দেন। সে অনুযায়ী তারা শান্তিপূর্ণভাবে চিংড়ি চাষ করে আসছে। ইতিপূর্বে ওই জমি নিয়ে ফজলুর রহমান টি/আপিল ১৪/৯২ মামলায় জজ কোর্ট থেকে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা পেলেও পরবর্তীতে হাইকোর্ট স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা রদ রহিত করে দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ফজলুর রহমান সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল(৫৪৫/৯৪) দায়ের করলে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞায় চিরতরে রদ হয়ে যায়। বর্তমানে ওই জমি আমরা খাজনা পরিশোধ করি।
তিনি আরও বলেন ওই জমি নিয়ে নতুন করে বিরোধ সৃষ্টি হলে তিনি সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার বরাবর ২০১৪ সালের ১৭ মে এক আবেদন করেন। ওই বছরের ২৯ জুন উভয়পক্ষকে নিয়ে শুনানি শেষে সহকারী পুলিশ সুপার মনির হোসেন এক প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ ও তাদের(নজরুল) দখল সম্পর্কিত জমির সকল তথ্য তুলে ধরা হয়।
ওই জমি রেকর্ডে ভুল দেখতে পেয়ে তিনি বাদী হয়ে সাতক্ষীরা ল্যা- সার্ভে ট্রাইব্যুনালে ১৪২১/১৫ নং মামলা করেন। যাহা বর্তমানে চলমান রয়েছে। অথচ গত ১ মে সকাল আটটার দিকে শোভনালী ইউপি চেয়ারম্যান মোনায়েম সানার নেতৃত্বে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা খোলচক বিলের ওই জমি জবরদখলের চেষ্টা চালায়। বাধা দেওয়ায় মোনায়েম গাইনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
ওই দিন দুপুরে পুলিশ মোনায়েম সানা, তার ভাই আশরাফ সানা ও নূর আলী সরদারের ছেলে লিটন ওরফে বাবুকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় রুহুল আমিন বাদী হয়ে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে আশাশুনি থানায় ১ মে রাতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অথচ এ ধরণের স্পর্শকাতর হত্যা মামলায় সংশ্লিষ্ট আশাশুনি কোর্টের বিচারক গ্রেফতারের চার দিন পর গত রোববার আশরাফ সানা ও লিটন সরদারকে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন। একইভাবে সোমবার আদালতে স্বেচ্ছায় হাজির হয়ে আবেদন জানালে আজগার গাইন, রণজিৎ বিশ্বাস, রমেশ বিশ্বাস ও বাবলুর রহমানকে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন।
মুক্তি পেয়েই তারা তাদেরকে মামলা তুলে নেওয়া ও আবারো জমি দখলের জন্য হুমকি ধামকি দিচ্ছে। হত্যা মামলায় বিচারক হাকিমের আদালত থেকে এ ধরণের জামিন লাভ সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। আসামীদের জামিনে মুক্তির বিষয়টি সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ সাহেবসহ আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। একই সাথে এজাহারভুক্ত অন্য আসামীরা যাতে দ্রুত গ্রেপ্তার হয় সেজন্য পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও আইনমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। দাবি জানাচ্ছি মুক্তি পাওয়া আসামীদের জামিন বাতিলের।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গোলাম কবীর, মামলার বাদী রুহুল আমিন, আলাউল ইসলাম, মাজাহারুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক গাজী, একব্বর গাইন, মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।