৫ শর্তে ঈদের আগেই মুক্তি পাচ্ছেন খালেদা জিয়া
বিএনপি মুখে যতই বলুক সরকারের সঙ্গে কোন সমঝোতা নয়, কিন্তু নাটকীয়ভাবে ৫ জন সংসদ সদস্যর শপথ গ্রহণ এবং সরকারের পক্ষ থেকে তাদের স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির পথ উম্মোচিত হলো কিনা সেই আলোচনা এখন রাজনীতিতে এসে গেছে।
অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, এটার ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তির পথ উম্মুক্ত হলো। বিএনপিরও অনেকেই মনে করছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্যই হয়তো বিএনপি এমন আত্মঘাতি এবং অসম্মানজনক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির ব্যাপারে সরকার এবং বিএনপির মধ্যে তেমন কোন সমঝোতা হয়নি। বরং খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরো নতুন ৫টি মামলার চার্জশিটের প্রস্তুতি চলছে বলে সরকারের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে।
আইনজীবীরা বলছেন, খালেদা জিয়া প্যারোল নেয়ার ব্যাপারে এখনো সম্মতি জানাননি। তিনি যদি প্যারোল না গ্রহণ করেন, সেক্ষেত্রে তার মুক্তির একমাত্র উপায় হলো জামিনের মাধ্যমে। কিন্তু খালেদা জিয়া কি জামিনের আবেদন করবেন? তিনি যদি জামিনের আবেদনও না করেন, সেক্ষেত্রে তার মুক্তি কোন প্রক্রিয়ায় হবে সেটা রাজনৈতিক অঙ্গনে এক গোলক ধাধা।
তবে বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির সঙ্গে বিএনপির পাঁচজন সংসদ সদস্যর শপথ নেয়ার কোন সম্পর্ক নেই। বরং এর সঙ্গে তারেক রহমানের লন্ডনে থাকা এবং তার বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন ব্যবস্থাগুলোকে শ্লথ করে দেয়ার অভিযোগ আছে।
এর মাধ্যমে তারেক রহমানের লন্ডনে থাকা নিশ্চিতও হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। সরকার তারেককে ফিরিয়ে আনার কঠোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বলেও একটি সূত্র দাবি করেছে।
তাহলে প্রশ্ন হলো, খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন কীভাবে? বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে যে, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান দুজনই ভিন্ন ভিন্নভাবে সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করছেন। খালেদা জিয়ার ছোটভাই শামীম ইস্কান্দার সরকারের একাধিক প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এই যোগাযোগ সফল হলেই খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে সরকারের একাধিক সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার মুক্তির আগে বিএনপিকে ঢেলে সাজাতে হবে। সেই লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-
১. জাতির পিতাকে বিএনপির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। বিএনপির গঠনতন্ত্রে জাতির পিতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২. বিএনপিকে ১৫ আগস্ট শোক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। ১৫ আগস্টে শোক দিবসের রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হবে।
৩. জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে সরকারের পক্ষ থেকে যে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে সেই অনুষ্ঠানে বিএনপিকেও শামিল হতে হবে।
৪. খালেদা জিয়া জামিন বা প্যারোল যেটাই পান না কেনো সেটি নিয়ে তিনি বিদেশে যাবেন না, বিদেশে গেলেও তিনি স্বল্পকালীন সময়ের জন্য যাবেন।
৫. বিএনপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাস সহিংসতার যে মামলাগুলো রয়েছে সেগুলো অব্যাহতভাবে চলবে।
তবে এই বিষয়ে সরকার এবং বিএনপির মধ্যে এখনও আলোচনা ও সমঝোতার চেষ্টা চলছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই সমঝোতা প্রক্রিয়া যদি সফল হয় তবে জামিন বা প্যারোল হোক খালেদা জিয়া মুক্তি পেতেই পারেন।
এদিকে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, বেগম জিয়া মুক্তি পান বা না পান খুব শীঘ্রই হয়তো তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হতে পারে। এই ব্যাপারে একটি আবেদন আগামীকাল বা রোববারের মধ্যে সরকারের কাছে নতুন করে দেয়া হতে পারে।