নুসরাত হত্যাকান্ডে কঠোরতম আইন প্রয়োগের দাবিতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানের হত্যাকান্ডের ন্যায়বিচার ও দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোরতম প্রয়োগ নিশ্চিতের দাবীর পাশাপাশি ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র সকল কন্যাশিশু এবং নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ- যৌন নিপীড়ন ও হত্যাকান্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দাবীতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমটি (সনাক), সাতক্ষীরা সারা দেশে মানবন্ধন কর্মর্সচী পালনের অংশ হিসেবে ৩০ এপ্রিল ২০১৯ সকাল ১০.৩০ মিনিটে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে সনাক পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহনে মানববন্ধন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। সনাক সহ-সভাপতি মোঃ তৈয়েব হাসান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) নির্বাহী পরিচালক শীফা হাফিজা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জোৎন্সা দত্ত, সাতক্ষীরা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ফরিদা আক্তার বিউটি, স্বদেশ নির্বাহী পরিচালক মধাব চন্দ্র দত্ত, নাগরিক আন্দোলন ম , সাতক্ষীরার আহ্বায়ক এডভোকেট ফাহিমুল হক কিসলু, রাজনীতিবিদ ওবায়দুস সুলতান বাবলু, জেলা নাগরিক কমিটি, সাতক্ষীরার আহ্বায়ক মো. আনিছুর রহিম, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এডভোকেট আবুল কালঅম আজাদ, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপী প্রমুখ। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সনাক সাতক্ষীরার জেন্ডার বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক ড. দিলারা বেগম, সনাক সদস্য কল্যাণ ব্যানার্জি, প্রফেসর আব্দুল হামিদ ও সাতক্ষীরা সনাক’র ইয়েস দলনেতা মনিরুল ইসলাম। অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন সনাক সদস্য মোমেনা খানম, স্বজন সদস্য সুকদেব কুমার বিশ্বাস, আইন ও সালিম কেন্দ্র (আসক) এর নিনা গোস্বামী, আবু আহমেদ ফয়জুল রাব্বি প্রমুখ।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) নির্বাহী পরিচালক শীফা হাফিজা বলেন,‘ নারীর প্রতি সহিংসতা সেইটা রাস্তাঘাটে হউক ঘরে-বাইওে হউক আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয় এইটা জাতির জন্য কলংক। এইটা কোন নারীর কোন বিষয় নয় এইটা নারীর হউক বা পুরুষের প্রতি হয় যখন পাশবিক নির্যাতন হয় আর বিশেষ করে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় এউ কলংক প্রতিটি মানুষের, পুরুষ-নারী প্রত্যেকের। বিশেষ করে যারা ক্ষমতায় আছেন তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগে রয়েছেন এইটা আমাদের দেশে পুরুষরাই। আমি মনে করি এই দায়-দায়িত্ব আমাদের পুরুষের উপরই অনেক বেশী বর্তায়। আর সেই জন্য আমাদের প্রয়োজন, আমাদের সবাইকে এক সাথে এগিয়ে আসা। রাষ্ট্র সব সময় সব জায়গায় হয়তো যতটুকু করার কথা সেইটা করার সুযোগ রাখতে পারে না। গত ২ দিন ধরে আমরা শুনছি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলছেন- ধর্ষণ ও ধর্ষণ জনিত মৃত্যুর কারনে সেই বিচার যেন কঠিন এবং কঠোরভাবে হয় এবং সে জন্য প্রয়োজন হলে রাষ্ট্র তার আইন নতুন করে এনগাইজ করার জন্য উদ্যোগ নিবে। এইটা আমরা মনে করি অত্যন্ত একটি পজেটিভ ডাইরেকশন আমরা পাচ্ছি। তবে আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। বাংলাদেশে ১টি নারীও যেন পথে-ঘাটে, অফিসে-বাড়িতে, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় কোন ভাবে যৌন হয়রানির শিকার না হয়। যে ঘটনা ঘটবে তার যেন তড়িৎ গতিতে বিচার করা হয়। এই শহরের প্রশাসনকে বলতে চাই যে এই ধরনের ঘটনার আপনারা যখনই কোন আলামত পাবেন সাথে সাথে সেখানে আপনাদের যে উদ্যোগ নিতে যদি আপনারা সে উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হন কিংবা দেরি করেন সেইটা কিন্তু আপনাদের বিচার হবেই।’ তিনি প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এ বিষয়ে সোচ্ছার থাকার আহ্বান জানান।
এ সময় বক্তাগণ সাম্পতিককালে নুসরাতসহ অন্যান্য নারীর প্রতি সহিংসতা ও হত্যাকান্ডসহ এ ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সনাক-টিআইবি’র সুপারিশগুলোর প্রতি ঐক্যমত প্রকাশ করেন। সুপারিশগুলো হলো: দ্রুত বিচার আদালতে নুসরাত হত্যাকা-ের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা; নুসরাত হত্যাকা-ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রত্যেকের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, বিশেষ কওে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগীয় তদন্ত নিশ্চিত করা; বাংলাদেশে নারী ও শিশুর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা প্রতিহতকরতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং এসব অপরাধের সাথে জড়িতদেও ন্যয়বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি অপরাধের শিকার পরিবারকে সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করা; নির্যাতিত নারী ও কন্যাশিশুদেও ন্যায়বিচারসহ সকল ক্ষেত্রে ও পর্যায়ে নারীর অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান আইন সমূহের কার্যকর প্রয়োগ এবং সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান, বিশেষ কওে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, পেশাগত উৎকর্ষ ও কার্যকরতা নিশ্চিত করা; শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্মক্ষেত্রসহ সকল পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে নারীর নিরাপত্তা বিধান, আর্থ-সামাজিক কর্মকা-ে নারীর পূর্ণ ও সম-অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গৃহীত কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়ন করা। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপণা করেন টিআইবি সাতক্ষীরার এরিয়া ম্যানেজার আবুল ফজল মোঃ আহাদ।