গণহত্যা দিবসে কলারোয়ার পালপাড়া বদ্ধ-ভূমিতে ভাগবত আলোচনা সভা ও আলোক প্রজ্বলন
কলারোয়ার পালপাড়ায় গণহত্যা দিবস উদযাপন উপলক্ষে ভাগবত আলোচনা সভা ও বদ্ধ-ভূমিতে আলোক প্রজ্বলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৯এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কলারোয়া পৌরসভার উত্তর মুরারীকাটি পালপাড়া বদ্ধ-ভূমি প্রাঙ্গণে ওই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। পালপাড়া শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দির এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
অনুষ্ঠানে ভাগবত আলোচনা করেন- যশোরের কেশবপুরের দেবালয় ট্রাস্ট ও সচিবালয় স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোটার শ্রী শ্যামল সরকার। এসময় উপস্থিত ছিলেন-পালপাড়ার টালি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোষ্ঠ চন্দ্র পালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন-সহযোগী অধ্যাপক শশী ভূষন পাল, গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী আহত ত্রৈলক্ষ পাল, কুশি পাল, শিবুপদ পাল, কলারোয়া পৌরসভা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী, পালপাড়ার টালি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হরেন্দ্র নাথ পাল ময়না, প্রশান্ত কুমার, প্রদীপ পাল, দিলিপ পাল, রীনা রাণী পাল প্রমুখ। সন্ধ্যায় পালপাড়া বদ্ধ-ভূমির শহীদদের গণকবরে আলোক প্রজ্বলন করা হয়। এর আগে সেখানে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে স্বাধীনতার দোষরা ১৯৭১সালের ২৯এপ্রিল ওইস্থানে পালপাড়ার ৯জন সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ ১১জনকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে বলে জানা যায়। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান-১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল দুপুর আড়াইটার দিকে হানাদার বাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসররা কলারোয়ার উত্তর মুরারীকাটি গ্রামের কুমারপাড়ায় পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ চালায়।
তখন পালপাড়ার অনেকে দুপুরের খাওয়া শেষ করেছেন। কেউবা বসেছেন খেতে। ঠিক এমন সময় অতর্কিত হামলা চালিয়ে নির্বিচারে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয় গ্রামবাসীকে। গুলিতে ও বেয়নেটের আঘাতে জর্জরিত প্রাণহীন দেহগুলো লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। পড়ে থাকে দুপুরের সেই খাবার। সেদিন পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম-নারকীয় গণহত্যার শিকার হন পালপাড়ার বৈদ্যনাথ পাল (৪৫), নিতাই পাল (৪০), গোপাল পাল (৪২), সতীশ পাল (৪৫), রাম চন্দ্র পাল (৪০), বিমল পাল (৪২), রঞ্জন পাল (৪০), অনিল পাল (৪৫) ও রামপদ পাল (৪২)। সেখানে বেয়নেটবিদ্ধ হয়েও জীবিত ছিলেন-শিবু পাল, ত্রৈলক্ষন পাল ও কুশি পাল। একই দিন সকালের দিকে কলারোয়ার মাহমুদপুর গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা আফছার আলী (৪৮) হানাদার বাহিনীর হাতে প্রথম শহীদ হন। পরে পালপাড়ার শহীদদের স্মরণে গড়ে তোলা হয়েছে স্মৃতিসৌধ। এদিকে-প্রতি বছর ২৯ এপ্রিল শহীদদের সন্তান, স্বজন ও সতীর্থরা বিদেহী আত্মার মঙ্গল কামনা করে এখানে পালন করেন ১৬ প্রহরব্যাপী অখন্ড মহানাম সংকীর্তন ও বিভিন্ন মঙ্গলাচার ও মহানাম সংকীর্তন অনুষ্ঠান। বছর ঘুরে ২৯ এপ্রিল এলেই পালাপাড়ার স্বজনহারা পরিবারগুলো একাত্তরের সেই গণহত্যার স্মৃতিচারণায় নীরবে ফেলেন চোখের জল। আপন স্মৃতির পাতায় খুঁজতে থাকেন হারিয়ে ফেলা প্রিয়জনদের সেই প্রিয় মুখগুলো। এই দিনটির ভয়াবহতা স্মরণ করে আজও তাঁরা শিউরে ওঠেন। ৪দিন ব্যাপী এই মহানাম সংকীর্তন পরিবেশন করা হয়।