বৃষ্টি নামতে সাতক্ষীরার গ্রামে গ্রামে লোক গান : আল্লাহ মেঘ দে পানি দে
বৈশাখের দাবদাহে ওষ্ঠাগত সাতক্ষীরার সহ আশে পাশের জেলার মানুষের জীবন। তীব্র রোদ ও অসহনীয় গরম বাতাসে অস্বস্তি সব খানে। স্বস্তি মিলছে না কোথাও। তাই গ্রামে গ্রামে চলছে কাদা মাটির খেলা । লোক গান গেয়ে পানি ভিক্ষা কেরছে গ্রামের ছেলে মেয়েরা । মুসলমানরা মসজিদে, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মন্দিরে, খ্রিস্টানরা গির্জায়, বৌদ্ধরা প্যাগোডায় প্রার্থনা করছে বৃষ্টির জন্য। তারপরও আকাশ খাঁ খাঁ, বৃষ্টির কোনো দেখা নেই।
আল্লাহ মেঘ দে পানি দে
ছায়া দেরে তুই
আল্লাহ মেঘ দে।
আসমান হইলো টুডা টুডা
জমিন হইলো ফাডা
মেঘ রাজা ঘুমাইয়া রইছে
মেঘ দিব তোর কেডা
আল্লাহ মেঘ দে…
বৃষ্টি নামানোর জনপ্রিয় এ গানটির কথা মনে পড়লেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সবুজে মোড়ানো গ্রামের কথা। চারদিক যখন রোদের দগ্ধতায় ওষ্ঠাগত প্রাণ, কিছুতেই যখন আর বৃষ্টি নামছে না, ঈশান কোণে কালো মেঘ জমে ধেয়ে আসছে না কালবৈশাখী, জীবনদায়ী ফসলের মাঠ যখন ফেটে চৌচির, ক্লান্ত কাক যখন গাছের ছায়ায় ঝিম মেরে বসে একটু শীতল স্পর্শ খুঁজছে, চাতক যখন পানির জন্য হাহাকার করছে, কুকুর জিহ্বা বের করে যখন কোনো বাগানের ছায়ায় খুঁজছে শান্তির পরশ, মোষগুলো যখন গলা ডুবিয়ে মাথা উঁচু করে সচল রাখছে দেহযান, সাপ যখন তার গর্তে আর থাকতে পারছে না, তীব্র দাবদাহে কৃষক যখন তার স্বপ্নের ফসল ফেলে বট কিংবা অশ্বত্থ গাছের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছে, রাখাল গরুর পাল হাঁটু পানির জলাশয়ে ছেড়ে কপালে ঘাম মুছে একটু ছায়া খুঁজছে, খালে পানি নেই, পুকুরের তলায় গিয়ে ঠেকেছে পানির ধারা, নদী দিয়ে পার হচ্ছে বাস-ট্রাক- তখনই গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে কুলা মাথায় নিয়ে বাড়ি বাড়ি হাজির আল্লাহ মেঘ দে পানি দে বৃষ্টির গান নিয়ে। বাড়ির মহিলারা কলসি ভরে পানি নিয়ে কুলার ওপর ঢেলে দেয়। আর সেই কাদামাটিতে গড়াগড়ি করে চলে বৃষ্টির গান। সেই সঙ্গে মহিলারা খুশি হয়ে দেয় চাল, ডাল, সবজি, টাকা।
বাংলাদেশে বৃষ্টি নামাতে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করা হয়। গ্রামের ছেলেমেয়েরা নতুন করে সেজেগুজে ব্যাঙরূপী বর-কনেকেও সাজায়। তারপর তাদের বরণ করে নিতে ফুল দিয়ে সাজানো হয় হলুদের ডালা। সবাই নেচে-গেয়ে আনন্দ-উল্লাস করে বিয়ে দেয়। তারপর ডালায় ফুল সাজিয়ে ব্যাঙ ও ব্যাঙিকে বসিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাদায় গড়াগড়ি করে সংগ্রহ করে চাল, ডাল ও টাকা।
আঞ্চলিক ভাষায় গায় বৃষ্টির গান-
বড় বাড়ির বউ বড় আশা করি,
এক সের দুই সের চাল না দিলে কিসের আশা করি…
আল্লাহ মেঘ দে পানি দে
ছায়া দেরে তুই…
হউরি কয় দেম দেম বউ যে বোলে না,
কইত্যে আনছে বান্দইরে বউ চাল তো দিল না…
বাড়ি বাড়ি গান গাওয়ার পর যে চাল, ডাল, টাকা উঠে তাই দিয়ে শিরনি রান্না করে কাক্সিক্ষত বৃষ্টির জন্য পালন করা হয় মানত। তারা বিশ্বাস করে ব্যাঙের বিয়ে ও মানত না দিলে বৃষ্টি নামবে না।