রোনালদোর দেশটি কেমন?
পর্তুগাল দেশটির আনুষ্ঠানিক নাম পর্তুগিজ প্রজাতন্ত্র। দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের আইবেরিয়ান উপদ্বীপের অনেকটা জায়গা জুড়ে দেশটি অবস্থিত। দেশটির আয়তন ৯২ হাজার ৯০ বর্গ কিলোমিটার। পর্তুগালের সবচেয়ে বড় ও রাজধানী শহর লিসবন। দাপ্তরিক ভাষা হলো পর্তুগিজ, প্রচলিত মুদ্রা ইউরো। একটি মাত্র দেশের সাথেই দেশটি সীমানা ভাগাভাগি করেছে, সে দেশটি হলো স্পেন! পর্তুগাল ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের সর্ব পশ্চিমের দেশও বটে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সব দিক দিয়েই পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দী ছিলো পর্তুগিজদের স্বর্ণযুগ। ১৭৫৫ সালে লিসবনে স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ এক ভূমিকম্পে প্রাণ হারায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষ! এর ইতিহাসের মতোই পর্তুগাল দেশটিতে আসলে বৈচিত্র্যের অভাব নেই। চলুন জেনে আসা যাক দেশটির ইতিহাস, সংস্কৃতি, জীবনযাপন, উদ্ভাবন ও অর্থনীতির কিছু বিষয় সম্পর্কে-
১। ১১২৮ সালে পর্তুগাল রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ইউরোপের অন্যতম প্রাচীন দেশ। পর্তুগালের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর পোর্তোর নাম অনুসারে দেশটির নাম রাখা হয় পর্তুগাল।
২। পর্তুগাল বেশ উন্নত দেশ। ২০১৮ সালের গ্লোবাল পিস ইনডেক্স অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ দেশগুলোর মধ্যে পর্তুগালের অবস্থান চতুর্থ।
৩। প্রিপেইড মোবাইল ফোনের উদ্ভাবন কিন্তু পর্তুগালেই, গ্রিন লেন টোল আদায় সিস্টেমের উদ্ভাবকও তারা।
৪। পর্তুগালের জাটিয় ভাষা পর্তুগিজ। শুধুমাত্র পর্তুগাল নয়, ব্রাজিল, মোজাম্বিক, অ্যাঙ্গোলা, গিনি বিসাউ, পূর্ব তিমুর, নিরক্ষীয় গিনি , কেপ ভারদে, সাওটোমে এন্ড প্রিন্সিপে এই মোট ৯ টি দেশের জাতীয় ভাষা হলো পর্তুগিজ।
৫। পর্তুগিজ পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর মুখের ভাষা। সারা বিশ্বে ২৪ কোটি লোক পর্তুগিজে কথা বলেন। তারপরই রয়েছে বাঙলা ও রুশ ভাষার অবস্থান।
৬। মধ্যযুগে যখন দুঃসাহসী অভিযাত্রীরা পৃথিবীর অনাবিষ্কৃত স্থানগুলো নতুন করে আবিষ্কার করার নেশায় মেতে ওঠেন, সেই সময়টাতে পর্তুগিজদের ভূমিকা ছিলো অসাধারণ। আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকা, ওশেনিয়াসহ বিভিন্ন মহাদেশে অভিযান চালিয়ে তারা সফল হয়।
৭। পর্তুগালের পর পর্তুগিজদের সবচেয়ে বড় কমিউনিটির দেখা মেলে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে।
৮। পর্তুগালে ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের সংখ্যা মোট ১৫ টি। এ সংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে তাদের অবস্থান ১৭তম, ইউরোপে ৮ম। এ জায়গাগুলো দেখতে প্রতি বছর পর্তুগালে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ লোক জমায়েত হন।
৯। পানির নিচে অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পার্কের অবস্থান পর্তুগালে, সেটির অবস্থান দ্য ওশেন রিভাইভাল আন্ডার ওয়াটার পার্ক।
১০। লিসবনের ভাস্কো দা গামা সেতু ইউরোপের সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু। এর দৈর্ঘ্য ১৭ হাজার ১৮৫ মিটার।
১১। পৃথিবীর সবচেয়ে অত্যাধুনিক এটিএম সিস্টেম রয়েছে পর্তুগালে। এটিএম দিয়ে সেখানে ৬০টিরও বেশি কাজ সম্পন্ন করা যায়। দাতব্য সংস্থায় দান করা, ফোনে টপ আপ করা, কন্সার্টের টিকেট কাটা- কি না করা যায় সে দেশের এটিএম ব্যবহার করে!
১২। পর্তুগালের কয়ম্ব্রা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১২৯০ খ্রিস্টাব্দে। এখনো চালু আছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কয়ম্ব্রা পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়।
১৩। পর্তুগাল ‘টাইলসের দেশ’ হিসেবেও বেশ সুপরিচিত। বহু বছর যাবত পর্তুগিজরা তাদের ঘরের দেয়াল ও মেঝে নান্দনিক সব টাইলস দিয়ে সাজিয়ে আসছে। এমনকি লিসবনে রয়েছে জাতীয় টাইলস জাদুঘর!
১৪। নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের দিক দিয়ে পর্তুগালের অবস্থান বিশ্বে শীর্ষে। পর্তুগালের মোট শক্তি চাহিদার ৭০ শতাংশই আসে পানি , বায়ু ও সৌর শক্তি ব্যবহার করে। সমুদ্রের ঢেউকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরের ব্যবস্থাও রয়েছে দেশটিতে।
১৫। পর্তুগালের নারীদের আয়ু পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি। সে দেশে নারী পুরুষের গড় আয়ুর তারতম্য প্রায় ৬ বছর!
১৬। জন্মহারের দিক দিয়ে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিচে অবস্থান করছে পর্তুগাল। ২০১৪ সালে দেশটিতে মাত্র ৮২ হাজার ৩৬৭ টি শিশু জন্ম নেয়। ইউরোপে জন্মহারের দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দেশ ফ্রান্সে ওই বছর জন্ম নেয় ৮ লক্ষ ১৯ হাজার ৩০০টি শিশু!
১৭ । মরিচ, আলু, টমেটোর সাথে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষদের সর্বপ্রথম পরিচয় করিয়ে দেয় পর্তুগিজরা। তারাই প্রথম আমাদের দেশে এসব নিয়ে এসেছিলো ঔপনিবেশিক আমলে!
১৮। আটলান্টিকের ভাসমান বাগান হিসেবে পরিচিত বিখ্যাত মাদেইরা দ্বীপের অবস্থান পর্তুগালে।
১৯। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিমের অমলেটটি বানানো হয়েছিলো পর্তুগালে। সেটির ওজন হয়েছিলো ৪৬৬ টন!
২০। পর্তুগালের জাতীয় সঙ্গীত হলো ‘ফ্যাদো’ ।
২১। প্যারিসের মতো এখানেও ক্যাফে সংস্কৃতির দেখা মেলে বেশ।
২২। প্রথমবার মা হবার বয়সের গড় এখানে ২৯ দশমিক ২ বছর।
২৩। ২০১০ সালের ৩১ মে পর্তুগালে সমকামী বিয়ের বৈধতা দেয়া হয়। ইউরোপের ষষ্ঠ দেশ হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত নেয় পর্তুগাল।
২৪। ১৭৬১ সালে পর্তুগাল সর্বপ্রথম ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে দাসপ্রথা বিলুপ্ত ঘোষণা করে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, আমেরিকার অন্তত ৫০ বছর আগে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।
২৫। বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতম বইয়ের দোকানটি লিসবনে অবস্থিত, সেটির নাম বারট্রান্ড বুকশপ। ১৭৩২ সাল থেকে বইয়ের দোকানটি চালু আছে।
২৬। পর্তুগাল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দেশ, তাই ফুটবল যে সেদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ১৯৮৫ সালে পর্তুগালের সান্তো আন্টোনিওতে জন্ম নেন রোনালদো।
২৭। প্রথম ইউরোপিয়ান হিসেবে ভারতে পৌঁছান এক পর্তুগিজ নাবিক। আমরা সবাই তাঁকে এক নামে চিনি। তিনি ভাস্কো দা গামা।