বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইকেল মিস্ত্রী শহর আলীর আকুতি ভাতা নয় সম্মান চাই

জীবনবাজি রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি আজও। অনেক চেষ্টা করেছি, বিভিন্ন দফতরে ঘুরেছি কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি আদায় করতে পরিনি। আমাদের সংসারে অভাব আছে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে কামলা দিয়ে বাকী জীবন কাটিয়ে দিতে পারব। সরকারের কাছ থেকে আমি কোনো টাকা-পয়সা কিংবা ভাতা চাই না। আমাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু চাই। আক্ষেপ করে আশাশুনি উপজেলার বদরতলা গ্রামের ভূমিহীন মৃত সুরমান আলীর ছেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শহরআলী, মৃত শ্যাম আলী কারীকরের ছেলে জোহর আলী ও মৃত এহাজার আলী মোল্ল্যার ছেলে মাদার মোল্যা। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে এমনটি মেনে নিতে পারছেন না তাদের সন্তানেরাও।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভারতে টাকীর আম বাগান ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শেষে জীবনবাজি রেখে ৯নং সেক্টরে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন শহর আলী, জোহার আলী ও মাদার মোল্যা। বাংলাদেশে এসে তারা উভয়ই বদরতলা ক্যাম্পে যুদ্ধকালীন কমান্ডার আব্দুল হাকিম ও ক্যাপ্টেন শাহাজান মাষ্টারের নেতৃত্বে কুঁন্দুড়িয়া, ব্যাংদহা, এল্লারচরসহ বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তারা। সাথে সাথে নিজ এলাকায় ক্যাম্প থাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সকল প্রকার সহযোগিতাও করেন তারা। কিন্তু ৪৮ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি তারা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারা সংসার নামক জীবন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। আর তখন থেকে অভাব অনটন থেকে মুক্ত হতে জীবনযুদ্ধে লিপ্ত হন তারা। মুক্তিযোদ্ধাদের অসহায়ত্বের কথা ভেবে যখন সরকার যুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়ালেন। তখন যুদ্ধকালীন কমান্ডার আব্দুল হাকিম তাদের অভাব অনটনের কথা ভেবে তাদের মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট গুলো নেন কিছু জমি বন্দোবস্ত করে দেওয়ার আশায়। কিন্তু বিধিবাম বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম এর মৃত্যুর সাথে সাথে শেষ হয়ে যায় সকল স্বপ্ন। তাই ফিরে পাননি তাদের সার্টিফিকেটও।

শহর আলীর বয়স ৭০ বছর। ৯জন সদস্যের সংসার তার। সাইকেল মেরামতের কাজ করে চলছে তার সংসার। মাথা গোজার ঠাঁই বলতে রয়েছে চরভরাটি ৪ শতক জমি। জোহর আলী কারিকরের ৬জনের সংসার। ১০শতক খাস জমির উপর ঘর বেধে বসবাস করছেন। মাদার মোল্যার নেই আর্থিক সংকট। তাই জীবন সায়াহ্নে এসে নিজের কাজের স্বীকৃতি টুকু পাওয়ার জন্য মানসিক টেনশনে মর্মাহত তিনিও। তারা সকলেই দাবি করেন টাকা-পয়সা কিংবা ভাতা চাই না সম্মান টুকু দিন।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা দেব দুলাল রায় জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা বদরতলা ক্যাম্পে থাকত।

বজলু রহমান জানান, আমি নিজে দেখেছি তাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেত। তরুণ প্রজন্মের সিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি তার দাতা ও পিতার মুখে শুনেছেন তাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের কথা।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের দাবী, মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় যেন তাদের দাফন হয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)