কালিগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার নামে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কুদ্দুস

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার নামে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক কুদ্দুস। উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের গান্ধুলিয়া,উচ্ছেপাড়া ও বাজুয়াগড় এলাকা থেকে ৩’শ পরিবারের কাছ থেকে বিদ্যুতের পোল বসানোর নামে ৩ হাজার থেকে ২০হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের মৃত ডাক্তার মোশারফ হোসেনের ছেলে আলহাজ্ব কুদ্দুস তরফদার। এছাড়া প্রত্যেক বাড়িতে মিটার বসানো শেষ হলে তাকে আরও ৫ হাজার টাকা করে দিতে হবে বলে জানালেন ভুক্তভোগীরা। বিদ্যুৎ দেওয়ার নামে কৃষাণ ও দিনমজুরের টাকা আত্মসাৎ করে সে গড়ে তুলেছে তিনতলা বিশিষ্ট কোটি টাকার আলিশান বাড়ি। স্থানীয়রা জানান, গত দেড় বছর ধরে বিদ্যূৎ সংযোগ দেওয়ার নামে গ্রামের সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কুদ্দুস। ওই গ্রামে কয়েকটি পরিবারের মাঝে বিদ্যুৎ পৌঁছালেও অধিকাংশ পরিবার এখনো আলোর অপেক্ষায়। প্রতারক কুদ্দুসকে তার চাহিদামত টাকা দিলেও সময়মতো বিদ্যুৎ না পেয়ে হতাশায় রয়েছে ওই গ্রামের অনেক পরিবার। গান্ধুলিয়া গ্রামের আব্দুল জব্বার, শামসুর নাহার,আব্দুল খালেক গাজী,আলাউদ্দীন গাজী,আনিসুর গাজী,আজিবার গাজী,নুর ইসলাম গাজী ও পাতালী বেগমসহ ভুক্তভোগী অনেকে জানান, বিদ্যুতের পোল আসার পরে শ্রমিকদের দিবে বলে নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে নিয়েছে ২’ শ টাকা, প্রত্যেক মিটার ও বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ৩ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা করে কুদ্দুসকে দিতে হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে অনেকের কাছ থেকে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেওয়ারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। ওই এলাকায় সে প্রভাবশালী হওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও তার ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা এলাকার সাধারণ মানুষ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে কালিগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি ঘরে বিনা মূল্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছে বর্তমান সরকার। প্রতি ঘরে ঘরে বিনা মূল্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করছে আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দালাল চক্ররা এলাকার সহজ সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে তাদের পকেটে ভরছে লক্ষ লক্ষ টাকা। জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন ফি ১’শ টাকা ও সদস্য ফি হিসেবে পঞ্চাশ টাকা এবং মিটার জামানত হিসেবে সাড়ে ৪ শত টাকা দিতে হয়। তবে জামানতের সাড়ে ৪’শ টাকা ফেরতযোগ্য বলে জানাযায়। এর বাইরে নতুন বিদ্যুৎ-সংযোগের জন্য কোন টাকার প্রয়োজন হয়না। পল্লী বিদ্যুতের নতুন গ্রাহকের জন্য যে খরচ দেওয়া আছে ওই টাকা দিয়ে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো গ্রাহকদের কাছে পূর্ণিমার চাঁদ হাতে পাওয়ার মত। কারণ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা ও দালালদের মোটা অংকের টাকা না দিলে মেলেনা নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ।

এবিষয়ে জানতে চাইলে প্রতারক কুদ্দুস তরফদার ৩’শ পরিবারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন,নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ আনতে গেলে অনেক দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। প্রতি পরিবারের নিকট থেকে ৩ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা তার নিজের পারিশ্রমিক বাবদ নিয়েছেন। তাছাড়া সাতক্ষীরা ৪ আসনের সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দারের কাছ থেকে ডিও লেটার আনতে হয়েছে। এছাড়া কিছু টাকা পল্লী-বিদ্যুতের ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়েছেন বলে তিনি স্বীকার করেন।

ঘটনা সম্পর্কে জানতে কালিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য সাড়ে ৪’শ টাকার প্রয়োজন হয়। জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য কোন ব্যক্তিক অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ার জন্য এলাকায় মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপরও কিছু দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে সাধারণ মানুষ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দিয়েছে। বিদ্যুৎ দেওয়ার নাম করে যারা অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছে তাদের বিরুদ্ধে অতিদ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)