বাঘ ধরতে বনে আগুন

দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দল বেঁধে বনের ভেতরে টিলার ওপর হাজারো উৎসক জনতার ভিড়। যেন উৎসবের আমেজ। বুধবার এমন দৃশ্য দেখা যায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত উপজেলা সিলেটের কানাইঘাটের লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নে লোভা বনে।

তবে কোনো উৎসব নয়, বনে বাঘ আসার খবরে বাঘ ধরার জন্য এই আয়োজন এলাকাবাসীর। এ সময় বাঘ ধরার জাল বসানোর জন্য আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় বনে। বনের একাধিক জায়গায় একসঙ্গে আগুন দেয়া হয়। এতে জঙ্গলের অর্ধশতাধিক গাছ পুড়ে যায়। তবে বাঘ ধরা যায়নি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন মানুষের উপদ্রবে বাঘ পালিয়েছে। তবে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে বনের কিছু অংশ। পরিবেশবাদীরা বাঘ ধরার জন্য এই জাল ফেলা ও বনে আগুন ধরিয়ে দেয়াকে বন ও জীববৈচিত্রের জন্য ক্ষতিকর মন্তব্য করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বাঘ ধরার একদিন আগে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়। বাঘ ধরতে সব ধরনের সরঞ্জামাদি নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয় গ্রামবাসীদের।

বুধবার গ্রামবাসী মসজিদে মাইকের ঘোষণা অনুযায়ী বাঘ ধরতে উপজেলার লাভাছড়া এলাকায় হাজির হয়। উৎসুক মানুষের উল্লাস আর ঢাক-ঢোলের শব্দে সীমান্ত অতিক্রম করে পালিয়ে যায় বাঘটি। কিন্তু বাঘ ধরতে আগুন লাগিয়ে পোড়ানো হয় বন। বাঘ ধরতে গিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে বনের গাছপালা আর অন্য প্রাণীদের আশ্রয়স্থল।

বনে আগুন দেয়ার একটি ভিডিও শেয়ার করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীঅধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন প্রাধিকারের ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, ‘এ যেন এক বিরাট উৎসব। বাঘ ধরতে আশপাশে গ্রামের হাজার হাজার মানুষ লাঠি সোটা নিয়ে মাঠে নেমেছে। আবার কেউবা ঢোল, তবলা বাজিয়ে নৃত্যের তালে তালে বাঘ আটকের জন্য প্রস্তুতি নেন। এ যেন কানাইঘাটের মানুষের কাছে এক উৎসবের দিন।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম বলেন, বাঘ ধরার নামে বনের পরিবেশ ধ্বংস করতে মেতেছে মানুষ। বনের এক প্রান্তে আগুন জ্বালিয়ে বাঘ ধরার নামে ধবংস করা হচ্ছে বন। কিছু বিরল প্রজাতির প্রাণী জীবন বাঁচাতে চলে যায় অন্য জায়গায়। এভাবেই প্রজাতির আঞ্চলিক বিলুপ্তি হয়। এমন নিন্দনীয় উদ্যোগ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে তিনি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রতিবছর কানাইঘাটে যে বাঘগুলো পাওয়া যায় তার অধিকাংশই ভারত থেকে আসে। খাবারের সন্ধানে উঁচু পাহাড় থেকে লোকালয়ে নেমে আসে।

তবে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরএসএম মনিরুল ইসলাম বলেন, বাঘ ধরতে জাল ফেলার খবর পেয়ে বৃহস্পতিবারই ঘটনাস্থলে বন বিভাগের কর্মীরা গিয়ে জাল নিয়ে এসেছে। এখনও ওই এলাকায় বনকর্মীরা অবস্থান করছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)