এটিএম বুথ, অনলাইনে অর্থ লেনদেন, টিভি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে
ব্যাংকের এটিএম বুথ আর অনলাইনে অর্থ লেনদেন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর আওতায় আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ১২ মে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ব্র্যাক ব্যাংকের একটি বুথ এই স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এরপর পর্যায়ক্রমে সবগুলো এটিএম বুথ কোনো ধরনের ব্রড ব্যান্ড সংযোগ ছাড়াই এই স্যাটেলাইটের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ।
তিনি বলেন, এতে সাইবার অপরাধ অনেক কমে যাবে। ওই দিনই দেশের সব টিভি চ্যানেল এই স্যাটেলাইটের আওতায় আসবে। ইতোমধ্যে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ওই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বহুমুখী ব্যবহারের উপর কয়েকটি প্রদর্শনী করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে, অনলাইন ব্যাংকিং লেনদেনে সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, সব টিভি চ্যানেলকে স্যাটেলাইটের আওতায় আনা, ভাসানচরে যেখানে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের কথা রয়েছে সেখানেও ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা হবে এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমেই।
এছাড়া স্যাটেলাইট থেকে কেবল টিভি দেখার সেবা ‘ডাইরেক্ট টু হোম’ বা ডিটিএইচ সেবাও নিশ্চিত করা হবে। ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ফিলিপাইন ও নেপাল ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ কেনার ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংযোগ ব্যবহার করা হয়।
এ সংযোগ বহুমাত্রিক ব্যবস্থা এবং সারভারে যুক্ত থাকে। ফলে এটিএম বুথ এবং অনলাইন লেনদেন উভয় ক্ষেত্রেই সাইবার নিরাপত্তা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ নিয়ে এটিএম নেটওয়ার্কসহ ব্যাংকিং ব্যবস্থার ইন্টারনেট কার্যক্রম পরিচালিত হলে সেখানে ব্যাংকের জন্য আরো বেশি নিরাপদ নেটওয়ার্ক তৈরি হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকের সার্ভার থেকে এটিএম বুথ পর্যন্ত একটি নিজস্ব নেটওয়ার্ক থাকলে সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকি একেবারেই কমে যাবে। এ ছাড়া এই স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ‘ডেডিকেটেড’ ব্যান্ডউইথ দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবস্থা পরিচালিত হলে সেখানে সাইবার হামলার ঝুঁকিও কমে যাবে। এরই মধ্যে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংক বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে এ ধরনের সেবা গ্রহণের জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে।
ড. শাহজাহান মাহমুদ জানান, ১২ মে থেকেই দেশের সবগুলো টিভি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সমপ্রচার কার্যক্রম শুরু করবে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৯টি টিভি চ্যানেল এ ব্যাপারে প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে। অন্যগুলোও এর মধ্যে হয়ে যাবে। তিনি বলেন, টিভি চ্যানেলগুলো আগে যে দামে কিনত এখন সেই দামই দেবে।
প্রতি মেগাহার্ডজ দুই হাজার ডলার করেই পরিশোধ করবে তারা। প্রতিটি টিভি চ্যানেলের ৪ থেকে ৬ মেগাহার্ডজ লাগে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের দুর্গম অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা চালু সহজ হবে। ইতোমধ্যে সে উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
হাতিয়ায় পরীক্ষামূলকভাবে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা হলে সেখানেও ইন্টারনেট যোগাযোগসহ ইন্টারনেটভিত্তিক কয়েকটি জরুরি সেবা নিশ্চিত হবে। এর মধ্যে আছে, টেলি মেডিসিন এবং টেলি এডুকেশন সেবা।
ঢাকায় বসেই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নিয়মিত চিকিত্সা সেবা দিতে পারবেন। একইভাবে ঢাকা থেকেই রোহিঙ্গাদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাও সম্ভব হবে। বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে এগুলো দেখানো হবে।
সুত্রঃ ইত্তেফাক
ড. শাহজাহান মাহমুদ জানান, শুধু দেশের ভেতরে নয়, দেশের বাইরেও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে ফিলিপাইন ও নেপাল এই স্যাটেলাইট থেকে ব্যান্ডউইথ কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। আলাপ-আলোচনা চলছে। শিগগিরিই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১১ মে রাত ২টা ১৪ মিনিটে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উেক্ষপণ করে মহাকাশ প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্পেস এক্স। বাংলাদেশের এর নিয়ন্ত্রণ পেতে প্রায় ৬ মাস লেগে গেছে।