টাইটানিকসহ তিন জাহাজডুবি থেকে বেঁচে ফিরেছেন যে নারী
কেউ কেউ তাকে বলেন পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যের অধিকারীনি, আবার কারো কারো মতে তার মতো দুর্ভাগ্য নিয়ে খুব কম মানুষই জন্মেছেন দুনিয়ায়! তবে যে যেভাবেই তার জীবনকে বিচার করে থাকুন না কেন, ভায়োলেট জেসোপ নামের এই যাত্রীসেবিকা (স্টুয়ারডেস) এর জীবনের গল্প পৃথিবীর সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাগুলোর একটি । জোসেপ ছিলেন ওসেন লাইনার জাহাজের একজন স্টুয়ারডেস, যিনি মাত্র ২১ বছর বয়সে ‘ওরিনোকো’ নামের একটি যাত্রীবাহী জাহাজে কাজ শুরু করেন। ১৯১০ সালে হোয়াইট স্টার লাইন কোম্পানিতে যোগ দেন জেসোপ। সেই কোম্পানির তৈরি তিনটি অলিম্পিক ক্লাস নৌযানের একটি এইচএমএস অলিম্পিকে কাজ শুরু করেন তিনি। এর এক বছর পরে একটি সরু প্রণালী পাড়ি দেবার সময় ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ এইচএমএস হক এর সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় অলিম্পিকের। ধাক্কা লেগে দু’টি জাহাজই আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে কোনটাই পুরোপুরি ধ্বংস না হওয়ায় জানমালের তেমন কোন ক্ষতি হয় নি।
ওই দুর্ঘটনার পর অলিম্পিক জাহাজটি যখন সারানো হচ্ছে, তখন ভায়োলেট জেসোপকে হোয়াইট স্টার লাইন কোম্পানির অন্য একটি জাহাজে স্থানান্তর করা হয় স্টুয়ারডেস হিসেবে। সেই জাহাজটি সবার কাছে সমানভাবে পরিচিত, আরএমএস টাইটানিক ! টাইটানিকের প্রথম যাত্রায় দুই সহস্রাধিক যাত্রী ও ক্রুদের মধ্যে একজন ছিলেন জেসোপ। আইসবার্গ এর সাথে ধাক্কা লেগে টাইটানিক যখন ডুবে যাচ্ছে, তখন ওই জাহাজেই ছিলেন স্টুয়ারডেস ভায়োলেট জেসোপ। কিন্তু এখানেও ভাগ্যদেবী তার দিকে মুখ তুলে তাকান, একটি লাইফবোটে উঠে পড়তে সমর্থ হন তিনি। টাইটানিক ট্র্যাজেডিতে যে ৭০৫ জন মানুষ জীবন নিয়ে ফিরতে পেরেছিলেন তাঁদের একজন ছিলেন জেসোপ।
দুইটি ভয়াবহ জাহাজ দুর্ঘটনা থেকে ফিরেও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দমে যান নি জেসোপ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি নার্স হিসেবে রেডক্রসে যোগ দেন এবং এইচএমএস ব্রিটানিক জাহাজে কাজ শুরু করেন। জাহাজটিকে একটি ভাসমান হাসপাতালে রূপ দেয়া হয়েছিলো। যুদ্ধে আহত সৈন্যদের যুক্তরাজ্যে পৌঁছে দেয়ার কাজে নিয়োজিত ছিলো ব্রিটানিক। কিন্তু যাত্রা পথে একটি জার্মান মাইন দ্বারা জাহাজটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং ডুবে যায়। এবারো একটি লাইফবোটে উঠতে সমর্থ হন জেসোপ, কিন্তু তাদের লাইফবোটটি জাহাজের প্রপেলার ব্লেডের সাথে প্রায় ধাক্কা খেয়ে যাচ্ছিলো! অল্পের জন্য বেঁচে যান জেসোপ ও তার অন্যান্য সহযাত্রীরা। তিনটি ভয়ানক জাহাজডুবি থেকে বেঁচে গিয়ে ‘মিস আনসিংকেবল’ খেতাব পান স্টুয়ারডেস ভায়োলেট জেসোপ!