দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পানচাষে কৃষক হচ্ছেন সাবলম্বি:সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থান

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাটসহ ১০ জেলায় বহুদিন ধরে পানচাষের প্রচলন ও সুনাম আছে। যেটা বর্তমানে দিনদিন চাষবাদ ও চাষীর পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান ও লাভবান হওয়ায় দিনদিন পানচাষ বেড়েই চলেছে। পানচাষ করে বর্তমানে অনেকেই তাদের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তনে সক্ষম হয়েছে।

মানুষের আতিথেয়তায় পূর্ণতা আনতে খাবার শেষে পান অন্যরকম গুরুত্ব বহন করে। আর সে কারণে পানচাষে এ অঞ্চলের মানুষ অনেক এগিয়ে। মিষ্টি এবং ঝাল’রমিশ্রণের কারণে দেশ জুড়ে রয়েছে এ অঞ্চলের পানের সুনাম। গত তিনমাস ধরে এ অঞ্চলের খুচরাবাপাইকারি মোকামগুলোতে রেকর্ডমূল্যে পানবিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতিটি খিলিপান বিক্রি হচ্ছে পাঁচ থেকে দশটাকায়। আর খুচরা বাজারে প্রতি পোন (৮০টি পানপাতা) পানবিক্রি হচ্ছে ৩শ টাকা পর্যন্ত।আমদানি কমের অজুহাতে পানের দাম বৃদ্ধি পায়, যা এখন অগ্নিরূপ ধারণ করেছে।

দুই মাস আগে যে পান পাইকারি বাজারে ৪০ টাকাবিড়া (৭২টি) বিক্রি হতো, সে পানএখন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার যে পান ৬০ টাকায় বিক্রি হতো, সে পানএখন ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর দোকানিরা বিক্রির জন্য যে পান প্রতিবিড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকায় কিনতো এখন ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এতে করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পানের দরও বেড়েছে ৩ থেকে ৪ গুণ। খুচরা পানের বাজারের চিত্র আরো ভয়াবহ। পাইকারি বাজারে যে পানচল্লি (৩৬ পিস) বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় তা খুচরা বাজারে প্রতিচল্লি ১০০ টাকা বাতার বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। আরবিড়া (৭২ পিস) বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা দরে। দাম বৃদ্ধির প্রভাব খুচরা বাজারে আরোবিরূ প্রভাবে পড়ায় ক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে। অনেকে এরই মধ্যে কমিয়ে দিয়েছেন পান ক্রয় করা এবং খাওয়া।

পান ব্যবসায়সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপকরে জানা গেছে, শীত ও কুয়াশার কারণে পানের ফলনে প্রতিবছর ব্যাপক ক্ষতিহয়। একদিকে পানের চাহিদা এবং অন্যদিকে যোগানকম থাকায় পানের বাজারের অস্থিরতা দেখা দেয়। যার প্রভাব পড়ে প্রায় বৈশাখ মাস পর্যন্ত। পানচাষিরা জানান, পানেরবরজে (পানেরবাগান) এখন বৃষ্টির পানি প্রয়োজন। বৃষ্টিহলেই পানের দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পানের যোগান কম থাকায় এ এলাকার সব থেকে বড় মোকামশিরোমণি, ফুলতলাবাজার, সিদ্ধিপাশাবাজার, বারাকপুরবাজার এবং রূপসাকাজদিয়াবাজারের পান ব্যবসায়ীরা এখন অনেকটা বিরতি কাটাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের হিসেবমতে, খুচরাবাজারে প্রতিটি পান পাতাবিক্রি হচ্ছে ৩ টাকা ৭৫ পয়সায়।

বাগেরহাট যাত্রাপুর বাজার এলাকার পানচাষি মোঃআবুলকালাম জানান, ভালোমানের পানেরপ্রতিকুড়ি (৫,১২০টি) বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৬ হাজার থেকে ২০ হাজারটাকা, যাতিনমাসআগেছিল ৮ হাজার থেকে ১০ হাজারটাকা, মাঝারিবা ছোটমানের প্রতিকুড়ি পানবিক্রি হচ্ছে ৩২শ টাকা থেকে ৭ হাজারটাকা, যাআগেছিল ১ হাজার ৬শ টাকা।এ বিষয়ে বাগেরহাটের পাইকারি পানব্যবসায়ী কালাসাহা বলেন, বর্তমানে যে পান বিড়াপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন, সে পানের দর ২ মাস আগেছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। আর যে পান বিড়াপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সে পান ১০০ টাকায় বিক্রি হতো। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি চাহিদা থাকলেও আমদানি কমে যাওয়া এবং পরিবহনব্যয়না কমাকে দায়ীকরেন।

খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণ ডিহিএলাকার পানচাষি মোঃশহিদ বিশ্বাসজানান, শীত এবং কুয়াশার কারণে পান নষ্ট হয়ে গেছে। এখনও কুয়াশাপড়ছে। তবে বৃষ্টির পানি পেলে নতুন পান গজাবে। তখন দাম কমেযাবে। এখনবরজে (পানের ক্ষেত) পান নেই। কিন্তু বাগান পরিচর্যায় খরচ কমছেনা।

নগরীর জোড়াগেট মহাজেরকলোনী এলাকার খুচরাপান বিক্রেতা মো. আবুলকালাম আজাদ জানান, বাজারে পানের দাম বাড়লে ও কাস্টমার বাড়তি টাকা দিতে চায়না। চার টাকায় কেনা একটা পানেসুপারি, জর্দ্দা, চুনদিয়ে পাঁচ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছেনা। সে কারণে ভালোমানের প্রতিটি খিলি পানবিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। তাতেকিছুটা খরচ পুষিয়ে যায়।

নগরীর নিউমার্কেট এলাকার মোকাররামবিল্লাহজানান, একটি খিলিপান এখন বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকায়। কোথাও কোথাও ১০ টাকায়। এ অঞ্চলের মানুষ অধিকাংশই পান খেতে ভালবাসে। কিন্তু দিকে কারো কোনো খেয়াল নেই।

খুলনা এলাকার পানের বড় মোকামফুলতলা বাজারএলাকারব্যবসায়ী মো. আরিফুররহমানজানান, আমরা যেমন ক্রয় করিতার সাথে একটুলাভ রেখেবিক্রি করি। তবেএবছরএকটু দাম বেশিকিন্তু তারপরওপানেরমান তেমনভালনা।

খুলনা যশোর পানচাষি সমবায় সমিতি লিমিটেড’রসভাপতি এসএম সেলিম বাচ্চুজানান, শীত এবং কুয়াশার কারণে পানের ক্ষতি হয়েছে। সে সময় প্রতিটি চাষির ৮০-৯০ শতাংশ পড় (পানগাছ) মরে গেছে। এর মধ্যে যেসব চাষি বিভিন্নভাবে কিছু পানবাঁচাতে পেরেছে সেসব পান এখন বাজারে আসছে। যা এ অঞ্চলের মানুষের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে বাজারে পানের দাম আকাশচুম্বি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের করণীয় বিষয়ে আমরা এ এলাকার পান চাষিদের নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। তবে এপ্রিলের মধ্যে পানের দামে স্বস্তি ফিরেআসবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)