দেশের যে জায়গাগুলোতে না গেলে ‘জীবন বৃথা’
অপরূপ সৌন্দর্যের এই দেশের বৈচিত্র্যতা না দেখলেই জীবটাই বৃথা! দেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক ঘুরে বেড়ানোর জন্য প্রতিবছর ভিড় জমিয়ে থাকেন। প্রাচীন স্থাপনা, পাহাড়ে-আহারে, নদীতে নৌকা ভ্রমণ, সবুজের মাঝে জ্যোৎস্নার খেলা, এমনকি মেঘের রাজ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মতো চোখ জুড়ানো পর্যটন স্থান রয়েছে। তারমধ্যে এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে না গেলেই নয়, চলুন জেনে নিই-
ভাসমান পেয়ারা বাজার
ঝালকাঠি, বরিশাল এবং পিরোজপুরের সিমান্তবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম পেয়ারা বাগান। ঝালকাঠী জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ভিমরুলিতে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় ভাসমান পেয়ারা বাজার। তিন দিক থেকে আসা খালের মোহনায় বসে ভিমরুলির এই ভাসমান পেয়ারা বাজার। জুলাই, আগস্ট পেয়ারার মৌসুম হলেও মাঝে মাঝে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাজার চলে। ভাসমান পেয়ারা বাজার দেখতে আগস্ট মাস সবচেয়ে উপযোগী সময়। সপ্তাহের প্রতিদিনই বসে ভাসমান এ হাট। ঝালকাঠী থেকে ছোট ছোট খালে ঘুরে এ সব এলাকার মানুষের বিচিত্র জীবনযাত্রাও দেখা যায়।
পান্তুমাই
বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম হচ্ছে ‘পানতুমাই’। শুধু গ্রামটিতেই কাটিয়ে দেয়া যায় মাসের পর মাস। পানতুমাইয়ের মূল বৈশিষ্ট্য পাহাড় ঘেঁষা আঁকাবাঁকা পথ। গ্রামের শেষে পাহাড়ি গুহা থেকে হরিণীর মতোই লীলায়িত উচ্ছল ভঙ্গিমায় ছুটে চলেছে ঝরনার জলরাশি। যেন রূপের মাধুরী তুলে ধরছে নিজস্বতায়। দূর থেকে দেখা মিলে শাঁ শাঁ শব্দে শুভ্র জলের এক নতুন অদ্ভুত অপ্সরীর। মেঘালয়ের গহীন অরণ্যের কোলে বাংলাদেশের পানে রূপের মাধুরী ফেলে অপরূপা এক জলপ্রপাত। সফেদ জলধারা লেপ্টে আছে সবুজ পাহাড়ের গায়। দেখলে মনে হবে সবুজের বুকে কেউ হয়তো বিছিয়ে রেখেছে সাদা শাড়ি।
পানাম নগর
পৃথিবীর ১০০টি ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি পানাম নগর। নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁতে অবস্থিত বাংলার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহরটি। যা পানাম সিটি নামেও পরিচিত। সোনারগাঁ ২০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই পানাম নগরী। এটা হারানো নগরী হিসাবেও সুপরিচিত। পানাম নগরের আশপাশে আরো কিছু স্থাপনা আছে যেমন- ছোট সর্দারবাড়ি, ঈশা খাঁর তোরণ, নীলকুঠি, বণিক বসতি, ঠাকুরবাড়ি, পানাম নগর সেতু ইত্যাদি।
সুন্দরবন
ডাঙায় বাঘ আর জলে কুমিরের রাজত্ব। পর্যটকদের কাছে টান টান উত্তেজনার উৎস। এসবের প্রাপ্তির একটাই স্থান-সুন্দরবন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনও এই সুন্দরবন। সুন্দরবনে বেড়াতে যাওয়ার মৌওসুম শুরু হয় অক্টোবরে, যা এপ্রিল পর্যন্ত জমজমাট থাকে। যদিও সারাবছরই সেখানে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সুন্দরবনে ভ্রমণ অন্যকোনো পর্যটনের চেয়ে ভিন্ন ও অনন্য। বনবিভাগের অনুমতিসাপেক্ষে এখানে ভ্রমণে যেতে হয় তাদের আদেশ-নিষেধ মেনে।
সাজেক ভ্যালি
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উচ্চতায় সাজেক ভ্যালিকে বলা হয় ‘রাঙ্গামাটির ছাদ’। এখানে গেলে পাহাড়ের সৌন্দর্য পুরোপুরি অবলোকন করা যায়। ভৌগোলিক অবস্থান রাঙামাটিতে হলেও যাতায়াতের সহজ পথ খাগড়াছড়ি হয়ে। সাজেকের আশপাশের গ্রামগুলোতে লুসাই, পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা আদিবাসীদের বসবাস। কমলা চাষের জন্য বিখ্যাত সাজেকে কফিও চাষ করা হয়।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ
দেশের আরেক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের স্থান হলো সেন্টমার্টিন। আকাশের নীল আর সমুদ্রের নীল সেখানে মিলেমিশে একাকার, তীরে বাঁধা নৌকা, নান্দনিক নারিকেল বৃক্ষের সারি আর ঢেউয়ের ছন্দে মৃদু হাওয়ার কোমল স্পর্শ-এটি দেশের সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপের সৌন্দর্য বর্ণনার ক্ষুদ্র প্রয়াস। মাছ ধরার মতো বিভিন্ন কার্যক্রম মাধ্যমে এই ভ্রমণকে আরো আনন্দময় করে তুলতে পারে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মধ্যে দ্বীপটিতে ঘোরার নিখুঁত জলবায়ু পাবেন।
জাদিপাই ঝরনা
এটি বান্দরবানে অবস্থিত। বর্ষাকালে সেকেন্ডে কয়েক টন পানি পড়তে থাকা এই ঝরনায় একসঙ্গে অনেক রংধনু দেখতে পাওয়া যায়। সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে পড়তে থাকা ঠাণ্ডা পানি কাঁপন ধরিয়ে দেয় শরীরে। সোজাসুজি পানি পড়ে না বলে অন্য সব ঝরনা থেকে এই ঝরনা অনেক নিরাপদ, ওপর থেকে ভারী কিছু মাথায় পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই।