পহেলা বৈশাখে থাকছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটিকে বরণ করতে মুখিয়ে থাকে পুরো বাঙালি জাতি। পহেলা বৈশাখের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করে নেন তারা। বর্ষবরণে কোনো রকমের অনাকাঙ্কিত ঘটনা যাতে না ঘটে সেই জন্য বিভিন্ন ধরণের ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। শুধু র্যাব পুলিশই নয়। নিরাপত্তার স্বার্থে সিভিল টিমসহ মাঠে থাকবে সাদা পোশাকধারীরাও।
রাজধানীর রমনা বটমূল, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নববর্ষের বড় অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এসব অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সম্ভাব্য নাশকতার ঠেকানোর জন্য র্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে নেয় হয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা। বর্ষবরণের নানা উৎসব ও আয়োজনকে ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ে থাকবে রমনা বটমূল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। এছাড়া ধানমন্ডিসহ সব উৎসবস্থলেই থাকছে বাড়তি নজরদারী।
পহেলা বৈশাখের প্রধান অনুষ্ঠানস্থল রমনার বটমূল পরিদর্শন করে এসব তথ্য জানান র্যাবের ভারপ্রাপ্ত ডিজি কর্নেল মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, এরই মধ্যে তথ্য সংগ্রহ করেছি এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করছি, যা অনুষ্ঠান শেষ হওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে। শুক্রবার থেকেই বর্ষবরণ উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় র্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, নববর্ষের বড় বড় ভেন্যুতে মোবাইল পেট্রোল, মোটরসাইকেল পেট্রোল, অবসারভেশন পোস্ট থাকবে। রাজধানীতে যতগুলো ভেন্যু আছে সবগুলো সিসিটিভির আওতায় রয়েছে। রমনা বটমূলসহ গুরুত্বপূর্ণ সব ভেন্যুতে ডগ স্কোয়ার্ডসহ বোম ডিসপোজাল ইউনিট সুইপিং করবে। সার্বিক দিক দিয়ে রাজধানীকে নিরাপদ রাখতে শতভাগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বড় ভেন্যুগুলোর সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং করতে কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। নির্বিঘ্নে নববর্ষ উদযাপন করতে বড় ভেন্যুতে থাকবে মোবাইল কোর্টসহ মেডিকেল টিম।
র্যাবের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক বলেন, রাজধানীর বাইরে দেশের অন্যান্য জায়গায় নববর্ষের বিশেষ প্রোগ্রাম হচ্ছে সেখানেও ব্যাটেলিয়ান ও ক্যাম্পের পক্ষ থেকে সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্ম পরিহিত পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে উপস্থিত থাকবে র্যাব সদস্যরা। পহেলা বৈশাখ ঘিরে কোনো ধরনের হুমকি নেই বলেও জানান তিনি।
র্যাব-৩ এর অধিনাকয়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. এমরানুল হাসান বলেন, নববর্ষ নির্বিঘ্নে উদযাপনে রমনায় স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স এবং ইভটিজিং রোধে মোবাইল কোর্ট থাকবে। এছাড়া টহল, ফুট পেট্রোল, ওয়াচ টাওয়ার, মোটরসাইকেল পেট্রোলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নিরাপত্তায় নতুন উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, স্বাভাবিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি রমনা বটমূলের পাশে বয়স্ক, নারী ও শিশুদের বিশ্রামের জন্য বৈশাখী লাউঞ্জ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ক্লান্ত বয়স্কদের পাশাপাশি নারী ও শিশুরা বিশ্রাম নিতে পারবেন।
এদিকে নববর্ষ উদযাপনকে ঘিরে নিরাপত্তা সম্পর্কে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, বাংলা নববর্ষ উদযাপনে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। নিরাপদ ও আনন্দঘন পরিবেশে বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে অনুষ্ঠানস্থল ঘিরে নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বলয়।
তিনি বলেন, কেউ যদি কোনো ধরনের নাশকতার চেষ্টা করে তাহলে কঠোর হাতে তাদের প্রতিহিত করা হবে। পহেলা বৈশাখে নগরীতে কারো নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা নেই।
বর্ষবরণের নিরাপত্তা নিয়ে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে ডিএমপি কমিশনার এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে উন্মুক্ত স্থানে সন্ধ্যা ৬টার পর কোনো ধরনের অনুষ্ঠান করা যাবে না। যেকোনো ধরনের নাশকতা যাতে সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিহত করা যায়, সেজন্য ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। তাছাড়া ঢাকার অধিকাংশ এলাকা থাকবে পুলিশের কড়া নজরদারিতে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, এবারের পহেলা বৈশাখ নগরবাসী নিরবচ্ছিন্নভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করবেন। এজন্য সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, শতাধিক মাইক ব্যবহার করে কমান্ড সেন্টারের ব্যবস্থা থাকবে। ছিনতাই ও ইভটিজিং প্রতিরোধে বিশেষ টিম থাকবে। রাখা হয়েছে ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও রমনা পার্কের লেকে থাকবে ডুবুরি দল। যে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেবে তারা।
কমিশনার বলেন, বৈশাখের মূল অনুষ্ঠানস্থালে রমনায় আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির পর প্রবেশ করতে পারবেন দর্শনার্থীরা। অনুষ্ঠানস্থল ঘিরে থাকবে ওয়াচ টাওয়ার। যেখান থেকে ‘বাইনোকুলার’ দিয়ে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করবে পুলিশ। সেই সঙ্গে প্রস্তুত থাকবে সোয়াত, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডিবি ও সিটিটিসি’র সদস্যরা।
‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’ নিরাপত্তা প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারো একই রুটে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ হবে। শোভাযাত্রার পুরো রুট থাকবে সিসি ক্যামেরার আওতায়। সোয়াত, ডিবি, ইউনিফর্মে থাকা পুলিশ বেষ্টুনিতে থাকবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। পথিমধ্যে কাউকে মঙ্গল শোভাযাত্রায় ঢুকতে দেয়া হবে না। মুখোশ পড়া যাবে না। তবে হাতে রাখা যাবে। কোনো প্রকার বাণিজ্যিক ব্যানার নিয়ে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রায়’ প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। তল্লাশির পরই ‘মঙ্গল শোভাযাত্রায়’ অংশ নিতে পারবেন ইচ্ছুকরা।
মঞ্চের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানস্থলে কোনো প্রকার ব্যাগপ্যাক, ট্রলি ব্যাগ, বড় ভ্যানিটি ব্যাগ, হ্যান্ড ব্যাগ, ধারালো অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র, দাহ্য পদার্থ, ব্লেড, নেল কাটার সঙ্গে নিয়ে আসা যাবে না। তবে মহিলারা ছোট হ্যান্ডপার্স নিয়ে আসতে পারবেন। বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি করে সবাইকে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে দেয়া হবে।