ইউটিউবের সর্বোচ্চ ‘ভিউজ’ ভিডিও (২য় পর্ব)
ভিডিও স্ট্রিমিং এর জন্য ইউটিউব হল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। তাইতো বিশ্বের জনপ্রিয় ভিডিওগুলোর কম বেশি সবগুলোই ইউটিউবে হালনাগাদ করা রয়েছে। ইউটিউবে রয়েছে বিভিন্ন শ্রেণীভুক্ত ভিডিও; রয়েছে মিউজিক ভিডিও, খেলার ভিডিও রাজনৈতিক ভিডিও সামাজিক ভিডিও, সাময়িকীর ভিডিও, কূটনৈতিক ভিডিও, হাসির ভিডিও এবং বিভিন্ন তথ্যমূলক শিক্ষা ভিডিও। তবে যদি বলা হয় এ পর্যন্ত ইউটিউবে সবচেয়ে বেশিবার দেখা হয়েছে কোন ভিডিওগুলো তবে তার বেশিরভাগই থাকবে মিউজিক ভিডিও ক্যাটাগরির। তাহলে চলুন জেনে আসি ইউটিউব এ সর্বোচ্চ বার দেখা হয়েছে এমন দশটি ভিডিওর ছোট তালিকা সম্পর্কে-
মাশা অ্যান্ড দ্য বিয়ার
এটি একটি খাদ্যদ্রব্য সম্পর্কিত ভিডিও যেটি ‘রেসিপি ফর ডিজাস্টার’ সিরিজ থেকে নেয়া হয়েছে এবং এটিই একমাত্র ভিডিও যেটি সেরা দশের মধ্যে থাকা অথচ মিউজিক ভিডিও নয়। রাশিয়ান কার্টুনভিত্তিক এই ভিডিওগুলো মূলত আনন্দ দানের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়। এই ভিডিওটি অ্যাডেলের হ্যালো মিউজিক ভিডিও থেকে দ্বিগুণ বেশি বার দেখা হয়েছে । মাসকা ভিত্তিক এনিমোকর্ড প্রতিষ্ঠান এই ধরনের কার্টুনের ভিডিও বানায় যেগুলো মূলত শিশুদের মজার মজার বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে বানানো হয়। এই ভিডিওটি শিশু ছাড়াও প্রাপ্তবয়স্ক অনেক বেশি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যার কারণে এটি ৩ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ভিউজ নিয়ে রয়েছে তালিকার ৫ নম্বরে।
আপ টাউন ফাঙ্ক
যুক্তরাজ্যের মার্ক রনসন পরিচালিত ব্রুনো মার্সের অন্যতম সফল একটি মিউজিক ভিডিও হলো আপ টাউন ফাঙ্ক। এটি সর্বোচ্চ সংখ্যক বিক্রি হওয়া বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত একটি মিউজিক ভিডিও। এই মিউজিক ভিডিওটি টানা ১৪ সপ্তাহ যুক্তরাষ্ট্রের বিলবোর্ডে প্রথম স্থানে ছিল। এছাড়াও বৃটেনে টানা ৭ সপ্তাহ এটি সেরা তালিকার এক নম্বর গান ছিল। আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, কানাডা ছাড়াও আরো কয়েকটি দেশে এটি সেইসময় তালিকার এক নম্বরে ছিলো। এটি ২০১৫ সালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক বিক্রি হওয়া মিউজিক ভিডিও ছিল এবং সব মিলিয়ে এটি ছিলো পঞ্চম স্থানে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিক্রি হওয়ার ক্ষেত্রে। আপ টাউন ফাঙ্ক দু’টি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জিতেছে, এছাড়াও ব্রিটিশ সিঙ্গেলস অফ দ্য ইয়ার পুরস্কার জিতেছে। এই গানটিতে মূলত চার,পাঁচজনকে ব্রুনো মার্সের সঙ্গে নাচতে এবং গলা মেলাতে দেখা যায়। আপ টাউন ফাঙ্ক গানটি ৩ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ভিউয়ার্স নিয়ে রয়েছে তালিকার চার নম্বরে।
সি ইউ এগেইন
২০১৫ সালের ৬ই এপ্রিল মুক্তি পাওয়া সি ইউ এগেইন গানটি উইজ খলিফা এবং চার্লি পুথের একক প্রমোশনাল ভিডিও। গানটিতে চার্লি পুথকে দেখা যায় সুন্দর শান্ত গলায় গান গাইতে আর খলিফাকে উচ্চগলায়। সাউন্ডট্র্যাক ৭ অনুমোদিত অ্যাকশন মুভি ফিউরিয়াস ৭ এ পল ওয়াকারকে শ্রদ্ধা জানিয়ে গানটি করা হয়েছিল। এই গানটি তৈরীর সময়ে নির্মাতারা বুঝতে পেরেছিলেন এই গানটি খুব দারুণভাবে বিলবোর্ড কাঁপাবে এবং টানা ১২ সপ্তাহের জন্য এই গানটি বিলবোর্ডের টপচার্টের ১ নম্বরে ছিল এবং সবচেয়ে দীর্ঘকালীন সময় পর্যন্ত হিপহপ গানের মধ্যে এই গানটি এক নম্বর জায়গাটি দখল করে ছিল। এই গানটি মূলত উইজ খলিফা এবং চার্লি পুথ এর সমন্বিত অভিনয়ের মাধ্যমেই শেষ করা হয়েছে। চার বিলিয়ন ভিউ নিয়ে এই গানটি রয়েছে তালিকার তিন নম্বরে।
শেপ অফ ইউ
২০১৭ সালটি এড শেরানের জন্য ছিল একটি সাফল্যের বছর। অনেকগুলো সফল অ্যালবাম, একক মিউজিক ভিডিও, বিয়ন্সের সঙ্গে দ্বৈত গান ছিলো সেই সফলতাগুলোর মধ্যে অন্যতম কয়েকটি। এই গানটি তৈরির পূর্বে শেরান ভেবেছিল এই গানটি হয়তো সেভাবে বাজার ধরতে পারবে না তাই সে চেয়েছিল এই গানটি বিক্রি করে দেয়ার। অথচ শেষ পর্যন্ত শেপ অফ ইউ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ৩৪ টি দেশে টপচার্টের এক নম্বর গান ছিল এবং টানা ১৬ সপ্তাহ ক্যানাডিয়ান হাববোর্ডে এক নম্বর ছিল। টানা ১৪ সপ্তাহ বৃটেনের একক গানের তালিকায় এক নম্বর ছিল এবং স্পটিফাইয়ে সর্বোচ্চবার দেখা গানের মর্যাদা পেয়েছিল। যুক্তরাজ্যে ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ বিক্রি হওয়া মিউজিক ভিডিও ছিল শেপ অফ ইউ। ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন দর্শক নিয়ে শেপ অফ ইউ রয়েছে তালিকার দুই নম্বরে।
দেসপাসিতো
লুইস ফন্সি ও ড্যাডি ইয়ানকের দেসপাসিতো গানটি ছিল ২০১৭ সালের বেস্ট মেগাহিট গান যেটিকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে কম সময়ে সফলতার শীর্ষে আসা মিউজিক ভিডিও। এটি বর্তমানে ৬ বিলিয়ন বারেরও বেশি দেখা হয়েছে। ২০০৬ সালের মিস ইউনিভার্স জুলেইকা রিভেরা ছিলেন গানটিতে একমাত্র প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে এবং ফন্সি যাকে বলেছিলেন “ল্যাটিন পাওয়ার হাউস।” গানটিতে নৃত্য এবং ছন্দ ছিল এক কথায় অসাধারণ। গানটি তৈরীই করা হয়েছিল ল্যাটিন সংস্কৃতির আদলে। গানটি বিশ্বের ৪৭ টি দেশে টপচার্টের এক নম্বরে থাকা ছাড়াও সেরা দশে ছিল অন্যান্য প্রায় আরও ছয়টি দেশে। এবং এটিকে বলা হয় লুইস ফন্সি এবং ড্যাডি ইয়ানকের করা সবচেয়ে সফল মিউজিক ভিডিও এবং এটিই প্রথম স্প্যানিশ গান যা যুক্তরাষ্ট্রের বিলবোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করেছিল এবং তা সর্বোচ্চ ১৬ সপ্তাহ ধরে। এমনকি টানা ৫৬ সপ্তাহ প্রথম স্থান অধিকার করেছিল ল্যাটিন হাববোর্ডে। এমনকি এটিই একমাত্র স্প্যানিশ গান যেটি “ডায়মন্ড সার্টিফিকেশন” পেয়েছিল রেকর্ডিং অ্যাসোসিয়েশন অফ যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দীর্ঘ সময় ধরে টপচার্টে থাকার কারণে দেসপাসিতো মিউজিক ভিডিওটি ৭ টি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের পুরস্কার পেয়েছে। অনলাইনে সর্বোচ্চ বেশিবার দেখা মিউজিক ভিডিও, সর্বোচ্চ লাইক পাওয়া মিউজিক ভিডিও ছাড়াও অনেক মাইলফলক স্পর্শ করেছে লুইস ফন্সির এই গানটি। অবাক করার মতো ব্যাপার হলেও সত্যি যে পৃথিবীর ৮০০ কোটি মানুষের মধ্য থেকে প্রায় ৬০০ কোটি বার দেখা হয়েছে এই গানটি।