এ মাসেই পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে ভারত
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেছেন, এ মাসেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘সামরিক হামলা’ চালানোর পরিকল্পনা করছে ভারত। দেশটিতে এ সপ্তাহেই শুরু হচ্ছে লোকসভা নির্বাচন।
ফলে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এমন হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে দিল্লি। দায়িত্বজ্ঞানহীন এমন আক্রমণের বিষয়ে ভারতকে নিবৃত্ত রাখার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
মাহমুদ কুরেশি গতকাল রোববার মুলতানে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, পাকিস্তানে নতুন করে (হামলা) পরিকল্পনা করছে ভারত এ বিষয়ে তার সরকারের হাতে নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য আছে।
তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে কথা বলছি। দায়িত্বশীলতার একটি পদে আছি আমি। আমি জানি, যে কথাই বলব, আন্তর্জাতিক মিডিয়া তা-ই লুফে নেবে। তিনি আরো বলেন, প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। পাকিস্তানে আরেকবার হামলার আশঙ্কা আছে।
আমাদের তথ্য মতে, ১৬ থেকে ২০ এপ্রিলের মধ্যে এমন হামলা চালাতে পারে ভারত। এ জন্য কাশ্মিরের পুলওয়ামার মতো ঘটনা সাজানো হতে পারে নতুন করে। আর তার ওপর ভিত্তি করে তারা পাকিস্তানের ওপর আক্রমণ চালাতে পারে। ইসলামাবাদের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে পারে।
রোববারের ওই সংবাদ সম্মেলনে কুরেশি বলেন, যদি এমন হামলা হয়, আপনারা এর পরিণতি সম্পর্কে কল্পনা করতে পারেন। এতে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে। তিনি আরো বলেন, পাকিস্তান এরই মধ্যে এ বিষয়গুলোতে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্যকে অবহিত করেছে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে দেশটির কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিপিআরএফ) গাড়িবহরে সন্ত্রাসী হামলায় ৪০ জনের বেশি জওয়ান নিহত হয়। পাকিস্তানকে হামলার জন্য দায়ী করে ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানে ঢুকে হামলা চালায়।
তার একদিন পর পাকিস্তানের বালাকোট শহরের বাইরে ভারতীয় বিমানবাহিনী হামলা চালালে দুই দেশের মধ্যে সঙ্ঘাতে ঝুঁকি তৈরি হয়। পরবর্তীতে পাক-ভারত আকাশযুদ্ধে ভারতীয় যুদ্ধবিমানের এক পাইলটকে আটক করে পাকিস্তান।
শান্তির নিদর্শন হিসেবে তাকে ফেরত দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ক্ষমতাসীন মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) পাকিস্তানে সেই হামলার কৃতিত্ব নিয়ে এবং ভারতীয় নাগরিকদের জাতীয়তাবাদী চেতনা কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে জেতার চেষ্টা করছে। যার কারণে নির্বাচন চলাকালীন এমন হামলার আশঙ্কা করছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের কাছে হামলা বিষয়ে কী ধরনের তথ্য আছে তার বিস্তারিত জানাননি কুরেশি, হামলার দিনক্ষণ বিষয়ে এতটা নিশ্চিত কিভাবে হলেন খোলাসা করেননি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতের সাথে এ বিষয়ক তথ্য বিনিময় করতে রাজি হয়েছেন বলেও জানান তিনি। কুরেশির বক্তব্য নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র দফতর তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
ইমরান এর আগে বলেছিলেন, লোকসভা নির্বাচনে ফায়দা নিতেই ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ‘যুদ্ধের দামামা’ বাজাচ্ছে। ফেব্রুয়ারির মুখোমুখি অবস্থার সময় ভারত পাকিস্তানের একটি এফ-১৬ জঙ্গিবিমান ভূপাতিত করেছিল, নয়াদিল্লির এমন দাবির প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেছিলেন।
বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলার সফলতা নিয়েও ধোঁয়াশা আছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সে সময় উপগ্রহের ছবিতে উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের ওই এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন মেলেনি বলে জানিয়েছিল।
উল্লেখ্য, আগামী ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনের ভোটপর্ব। সাত দফায় এই ভোটগ্রহণ শেষ হবে ১৯ মে। আর ফল প্রকাশ হবে ২৩ মে।
ভারতের জন্য আকাশপথ আংশিক খুলে দিলো পাকিস্তান
এ দিকে অবশেষে ভারত থেকে পশ্চিমের দেশগুলোতে উড়ে যাওয়া বিমানের জন্য নিজেদের আকাশপথ খুলে দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির ওপর দিয়ে মোট ১১টি এয়ার রুট গেছে। প্রাথমিকভাবে এর মধ্যে একটি রুট ভারতের জন্য খুলে দিয়েছে ইসলামাবাদ।
এই পথে এয়ার ইন্ডিয়া এবং টারকিশ এয়ারলাইন্সের বিমান ইতোমধ্যেই চলাচল করতে শুরু করেছে বলে পাকিস্তানের এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, পাকিস্তান তাদের আকাশসীমার একাংশ খুলে দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তারা নিজেদের ১১টি রুটের মধ্যে একটি রুট খুলে দিয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া এবং টার্কিশ এয়ারলাইন্স এই রুট ইতোমধ্যেই ব্যবহার শুরু করেছে। এই রুটে ভারত ও পশ্চিমের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিমান চলাচল করে।