কুলিয়ায় জেলা পরিষদের জমিতে শর্ত ভেঙ্গে তিনতলা ভবন নির্মাণ চলছে
সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ পুরাণ সড়কের পাশে কুলিয়া মৌজায় জেলা পরিষদ মালিকানাধীন জায়গায় ‘ডিসিআর’ গ্রহণের নামে শর্ত ভঙ্গ করে একটি পাকা স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। এমনকি শর্ত লঙ্ঘন করে ওই জমি অন্যের কাছে হস্তান্তরও করেছেন কথিত ডিসিআর গ্রহীতা। ২০১৮ সালের ৩০ জুন ডিসিআরের মেয়াদ শেষ হলেও ওই জমি নিজ দখলে রেখে এসব কাজ করেছেন গ্রহীতা মোছা. মেহেরুননেসা। তিনি দেবহাটার কুলিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. আসাদুল হকের স্ত্রী।
এদিকে জেলা পরিষদের এই জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মানে বাধা দিতে গিয়ে নাজেহাল হয়েছেন জেলা পরিষদ সদস্য শাহনওয়াজ পারভিন মিলি ও তার পরিবার। সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুল হক তাদেরকে মান হানিকর কথাবার্তার সাথে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়েছেন।
শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানান মিলি। এ সময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন তার স্বামী মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
জেলা পরিষদ সদস্য শাহনওয়াজ পারভিন মিলি জানান গত ২৯ মার্চ বিকালে তিনি কুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের কাছে জেলা পরিষদের ২ নম্বর খতিয়ানের ৫৭৫,৫৭৬ ও ৫৭৭ দাগে দেড় হাজার বর্গফুটের ওই জায়গায় কিছু লোককে ঘর নির্মাণ করতে দেখেন। সেখানে উপস্থিত লোকজনের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন জায়গাটি সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুল হকের কাছ থেকে দুই মাসের জন্য আমরা ভাড়া নিয়েছি। এ কথা জানার পর তিনি বিষয়টি জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার ও স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্যকে জানালে তাদের কথা মতো শাহনওয়াজ মিলি তাদের কাজ বন্ধ করতে বলে যান। এমনকি পরদিন তারা মালামাল সরিয়ে নেবেন বলেও জানান ।
সংবাদ সম্মেলনে শাহনওয়াজ মিলি আরও জানান পরদিন ৩০ মার্চ নির্মাণ সামগ্রী একই স্থানে রয়েছে দেখতে পেয়ে তাদেরকে ফের তাগাদা দেন তিনি। এ সময় তারা বলেন সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুল আমাদের মালামাল সরাতে না করেছেন। তবে তাকে চাপ দিয়ে বলার সাথে সাথে তিনি মালামাল নামিয়ে নিতে শুরু করেন। অভিযোগ করে শাহনওয়াজ মিলি বলেন কিছুক্ষণ পর আসাদুল হক তাকে ফোনে ব্যঙ্গ করে বলেন ‘ আপনি জেলা পরিষদ সদস্য? সামনে আসেন আপনার চেহারাটা দেখি’। এরপরই তিনি আরও জানতে পারেন আসাদুল হক ৫০/৬০ জনের একদল লাঠিয়াল নিয়ে কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছেন। তিনি তার স্বামী মোস্তাফিজুর রহমানকেও ফোনে হুমকি দিয়ে গালাগাল করছেন।
ঘটনাটি দেবহাটা থানা পুলিশকে জানালে ঘটনাস্থলে আসেন এসআই মনির। তার আগেই আসাদুল হক লোকজন নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন বলে জানান মিলি। মিলি আরও জানান বিষয়টি জানানোর জন্য তিনি বারবার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে ফোন করেও তার সাথে কথা বলতে ব্যর্থ হন। এদিকে জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুকে আসাদুল হক এ প্রসঙ্গে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন আমার বেয়াইয়ের কি শক্তি কমে গেছে, ধরে পিটিয়ে দিতে পারেন নি’। পরদিন আসাদুল একই কথার পুনরাবৃত্তি করে তার স্বামী মোস্তাফিজকে বলেন ‘চেয়ারম্যান আমাদের মারতে বলেছেন। এ সময় আস্ফালন করে আসাদুল হক আরও বলেছেন তোরা থানায় গিয়েছিস, আমিও তোদের বিরুদ্ধে এক লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলা দেবো। দেখা যাবে কার মামলায় কেরাম জোর’।
মিলি সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন তিনি আবারও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে দেবহাটা থানায় একটি অভিযোগ দেন। ১ এপ্রিল একই স্থানে ফের নির্মাণ কাজ শুরু করলে পুলিশের বাধার মুখে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে আসাদুল হক তার স্ত্রীর নামে আগের বছর নেওয়া সেই ডিসিআর নবায়নের জন্য অনেকের দ্বারস্থ হতে থাকেন। অবশেষে তিনি জেলা পরিষদে প্রভাব খাটিয়ে আগামি সভার সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে ৩ এপ্রিল ডিসিআর নবায়নের আদেশ নিয়েছেন চেয়ারম্যানের কাছ থেকে। এর পর থেকে ডিসিআর পেয়ে গেছি বলে তোলপাড় তুলে জেলা পরিষদের সেই জমিতে শর্ত লঙ্ঘন করে তিন তলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন আসাদুল হক।
লিখিত বক্তব্যে শাহনওয়াজ পারভিন মিলি আরও বলেন আমি আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র, ভূমি দস্যুদের হাত থেকে ভূমিহীনদের অধিকার আদায় করতে চেয়েছি। আসাদুল হক কিংবা তার স্ত্রী ওই জমির ডিসিআর গ্রহীতা হতেই পারেন। কিন্তু গত বছরের জুনে মেয়াদ শেষ হবার পর ২৯ মার্চ পর্যন্ত তো ওই জমি জেলা পরিষদেরই ছিল। অথচ কথিত ডিসিআর হোল্ডার সে জমি কারও কাছে যেমন হস্তান্তর করতে পারেন না, তেমনি সেখানে আইন ও শর্ত লঙ্ঘন করে তিনতলা পাকা ঘর নির্মাণ করতে পারেন না। এমনকি এ জমি তার নিজের বলে দাবিও করতে পারেন না। অথচ আসাদুল হক বারবার হুমকি দিয়ে বলছেন আমার জমিতে কেনো গেছিস। শাহনওয়াজ পারভিন মিলি এ ঘটনার প্রতিকার দাবি করে জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
তিনি তার বক্তব্যে আরও অভিযোগ করে বলেন ‘ আসাদুল হক সাতক্ষীরা শহরে তার শরিক ফাঁকি দেওয়া জমিতে মার্কেট বানিয়েছেন। বাস টার্মিনালের পাশে সিরাজুল ইসলামের জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তার সাবেক স্ত্রী দিলরুবা রুবির মালিকানাধীন ঘের লুট করতে গুন্ডা বাহিনী পাঠিয়েছেন। ক্ষিপ্ত হলেই যাকে তাকে তিনি বলেন আমি তোর বাপ। এমনকি তার ভাগনে মোস্তাফিজুর রহমান (শাহনওয়াজ পারভিন মিলির স্বামী) কেও গালি দিয়ে বলেছেন আমি তোর বাপ। প্রশ্ন তুলে তিনি আরও বলেন যার সন্তান ও পেটুয়া বাহিনী দিনে রাতে চাঁদাবাজি করে ও জীবননাশের হুমকি দিয়ে জনজীবনে অশান্তি ডেকে আনছেন সেই আসাদুলের কাছে কারও চাঁদাদাবির অভিযোগ হাস্যকর।