কালিগঞ্জে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে জমি দখল ১০ পরিবারের চলাচল বন্ধ
অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে দলিল তৈরি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা বন্দোবস্ত নিয়ে জোরপূর্বক ঘেরা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ১০টি পরিবারের সদস্যদের। বন্ধ হয়ে গেছে হরি-মন্দিরে যাওয়ার পথ। গত বৃহস্পতিবার সকালে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার চাম্পাফুল ইউনিয়নের খাজরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
খাজরা গ্রামের নারায়ণ সরকার জানান, খারা মেীজার এসএ ৪৬ দাগে তিনি ও তার ভাই অমর সরকার ওরফে কেনার নামে ২৯ শতক জমি রয়েছে। এ ছাড়াও তারা এসএ ৪৮ দাগে বাবার নামীয় ডিএস রেকডীয় ১৭শতক জমিতে বংশ পরম্পরায় ঘরবাড়ি বানিয়ে বসবাস করে আসছেন। একইসাথে বসত ভিটার সামনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেশ কিছু জায়গা ডিসিআরের আবেদন করে দখলে রয়েছেন তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গার উপর দিয়ে তাদেরকে বাড়ি থেকে মেইন রাস্তায় উঠতে হয়।
তিনি আরো জানান, কোন স্বত্ব ছাড়াই তাদের (নারায়ণ) এস এ রেকর্ডে ১৭ শতক জমি ভুলক্রমে রেকর্ড হয়ে যায় আশাশুনি উপজেলার কুন্দুড়িয়া গ্রামের জনৈক হীরালাল পাড়–ই এর নামে। তবে ওই জমি কোন দিনও হীরালাল পাড়–ই দাবি করেননি বা দখলে নেননি। ওই জমি একই গ্রামের কেশবলাল মণ্ডল আশাশুনি সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে ১৯৮১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ৯৩৬ নং দলিল মুলে কিনেছেন মর্মে গত পহেলা ফেব্রুয়ারি দাবি করেন কেশবলাল মণ্ডলের ছেলে সন্তোষ, আশুতোষ, পরিতোষ, হারাণ, পরান মণ্ডল। ওই জমিতে তাদের (নারায়ণ) ঘরবাড়ি থাকায় কালীগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে)দেঃ-০১/১৯) উচ্ছেদের মামলা করেন হারাণ মণ্ডল। ১৯৮১ সালে জমি কিনলেও মামলায় তারা ওই জমি ১২ বছরের বেশি সময় ধরে দখলে রয়েছেন বলে দাবি করে তাদেরকে উচ্ছেদ করার আদেশ চান।
মামলা করে তারা গত ৬ ফেব্রুয়ারি ওই জমি জবরদখলের জন্য কয়েক দফায় রান্না ঘর ভাঙচুর করে। একইভাবে পৈতৃক জমির সামনে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডাঙা জমি জলাশয় দেখিয়ে হারান মণ্ডল বন্দোবস্ত নিয়েছেন মর্মে গত বুধবার ওই জমি থেকে একটি বড় নিমগাছসহ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে নেয়। বাধা দেওয়ায় তাদেরকে মারপিট করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুঁটে প্রতিবাদ করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু বক্কর ছিদ্দিক সাবেক ইউপি সদস্য রেজা, দুলাল চন্দ্র সরকার, সুনীল সরকার, প্রসাদ সরকারসহ অনেকেই । একপর্যায়ে হারান মণ্ডল ও তার সহযোগীরা ওই কেটে ফেলা নিম ও অন্যান্য গাছ নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে তাদের (নারায়ণ) রান্না ঘর ভাঙচুর করে।
বুধবার সন্ধ্যায় বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে তাকে(নারায়ণ) গ্রেফতারের চেষ্টা চালানো হয়। যদিও পুলিশ উভয়পক্ষকে বিরোধপূর্ণ জমিতে কাজ না করার জন্য বলে যায়। এরপরও হারাণ ও পরান মণ্ডলের নেতৃত্বে ভগ্নীপতি সত্যরঞ্জন মণ্ডল, ভাগ্নে হরিদাস মণ্ডল, ভাই সন্তোষ মণ্ডলসহ বরেয়ার ১০/১২ জন সশস্ত্র ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বৃহস্পতিবার সকালে মেইন রাস্তার পাশ দিয়ে ও ভিতরের বেশ কিছু জায়গা দখল করে বাঁশের বেড়া দিয়ে রাস্তাসহ লম্বালম্বিভাবে দখল করে নেয়। দ্বিতীয় দফায় তাদের রান্না ঘর ভেঙে ফেলা হয়। বেড়া দেওয়ায় রাস্তা বন্ধ হয়ে তাদেরসহ ১০টি পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে হরি মন্দিরে ঢোকার পথ।
শুক্রবার সকালে খারা গ্রামে গেলে পরান মণ্ডলের শ্যালক দুলাল সরকার, সুনীল সরকার, প্রসাদ সরকার, অনিল সরকারসহ কয়েকজন জানান, হারান মণ্ডলের ছেলে গোপাল মণ্ডলের স্ত্রী ও সন্তানসহ পাঁচ বছর আগে থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট শহরের শোনপুকুর ও পরান মণ্ডলের ছেলে দেবব্রত মণ্ডল সপরিবারে হাওড়ার বেলুড় মঠ এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন। স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ জন দীর্ঘদিন ধরে অশিক্ষিত। প্রভাবশালী হওয়ায় পরান মন্ডল ও হারাণ মণ্ডল স্থানীয় অশিক্ষিত তাদেরসহ তাদের শরীকদের জমি রেকর্ড করিয়ে দেওয়ার নামে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নিজেদের নামে করিয়ে নিয়েছেন। শিক্ষক সত্য রঞ্জন বিশ্বাসের জমি রেকর্ড করে নিয়ে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। দুলাল সরকার জানান, তার বাবা গোকুল সরকার সাক্ষর না করলেও হারাণ মণ্ডল ১৯৮১ সালের ৯৩৬ নং দলিলে তার নাম লিখে সাক্ষর বলে দেখানো হয়েছে। দু’ মাস আগে হারাণ মন্ডল ও তার ভাইয়েরা নারায়াণ সরকারের জমি তাদের বলে দাবি করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি থেকে দু’ সপ্তাহ আগে হারাণ কয়েকটি গাছ কেটে নিয়ে নিজের দখল প্রমাণ করানোর চেষ্টা করছে। বৃহস্পতিবার বেড়া দেওয়ার ফলে কমপক্ষে ১০ টি পরিবার স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করতে পারছেন না।
জানতে চাইলে হারাণ মণ্ডল বলেন, তাদের কেনা ও রেকডীয় জমি বাজার দাম হিসেবে নারায়ণ সরকার কিনে নেবে বললেও টাকা না দেওয়ায় ওই জমি বৃহস্পতিবার ঘিরে নিয়েছেন। নারায়ণ সরকারসহ কয়েকটি পরিবার কোন পথ দিয়ে বের হবেন সেটা তার দেখার কথা নয়। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা থেকে নিম গাছ সহ অন্যান্য গাছ কাটার কথা অস্বীকার না করেই বলেন বিষয়টি নারায়ণ সরকার বা অন্যদের জবা দেবেন না।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান হাফিজুর রহমান জানান, এ ব্যাপারে তার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি।কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহীন বলেন,বিষয়টি তার জানা নেই।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে হারাণ মণ্ডল বেড়া দিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করায় নারায়ণ সরকারের পরিবারসহ কয়েকটি পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে মর্মে তিনি জেনেছেন।