‘ভয়াবহ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট’

বাংলাদেশ বড় ধরণের ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে দাঁড়িয়ে। গত চার’শ বছর ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্বাংশে দু’টি ভূ-গাঠনিক প্ল্যাটে শক্তি সঞ্চয়ের ফলে এ আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

৮ থেকে ৯ মাত্রার এই ভূমিকম্পে লন্ডভন্ড হয়ে যেতে পারে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট শহর। বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের একদল এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন নেচার জিও সায়েন্স জার্নালে।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক এই বিজ্ঞান সাময়িকিতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে ভূ-গাঠনিক প্ল্যাটে শক্তি সঞ্চয়ের ফলাফল হল ভূমিকম্প। ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা-এই তিনটি গতিশীল ফ্ল্যাটের সংযোগস্থলে অবস্থিত বাংলাদেশ ভয়ঙ্করভাবে ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ।

গবেষক দলের সদস্য অধ্যাপক হুয়ায়ূন আখতার বলেন, পূর্ব-পশ্চিমে আড়াইশ কিলোমিটার ও উত্তর-দক্ষিণে প্রচুর পরিমাণে শক্তি সঞ্চিত রয়েছে। আমাদের মডেলে আমরা দেখেছি ৮.২ থেকে ৯ মাত্রা ভূমিকম্প হওয়ার মতো শক্তি এখানে রয়েছে।

ভূবিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবী প্লেট ও সাব-প্লেট দিয়ে গঠিত। এ রকম দু’টি প্লেটের মাঝখানে যে ফাঁক থাকে তাকে বলা হয় ফল্ট লাইন। প্লেটগুলো গতিশীল। দু’টি চলন্ত প্লেটের ফল্ট লাইনে পরস্পর সংঘর্ষ হলে অথবা হঠাৎ ফল্ট লাইনে শূন্য অবস্থার সৃষ্টি হলে ভূমিকম্প হয়। বাংলাদেশ অবস্থান করছে ভারতীয়, ইউরেশীয় ও মিয়ানমারের টেকটনিক প্লেটের মধ্যে।

বুয়েটের গবেষকদের ভূমিকম্প ঝুঁকির মানচিত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশের ৪৩ শতাংশ এলাকা ভূমিকম্পের উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে (জোন-১), ৪১ শতাংশ এলাকা মধ্যম (জোন-২) ও ১৬ শতাংশ এলাকা নিম্ন ঝুঁকিতে (জোন-৩) রয়েছে।

জোন-১-এ রয়েছে- পঞ্চগড়, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার সম্পূর্ণ অংশ এবং ঠাকুরগাঁও, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের অংশবিশেষ। রাজশাহী, নাটোর, মাগুরা, মেহেরপুর, কুমিল্লা, ফেনী ও ঢাকা রয়েছে জোন-২-এর অধীনে। জোন-৩-এর মধ্যে রয়েছে বরিশাল, পটুয়াখালী এবং সব দ্বীপ ও চর। পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে ভূমিকম্প হলে এর প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও। এমনকি ভারতে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর বাংলাদেশেও কিছুদিন পর ভূমিকম্প হয়েছে।

প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, প্রায় ১৬ কোটির বেশি মানুষের এ দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এবং তা বাড়ছে দ্রুততার সঙ্গে। দেশটি বিশ্বের বৃহত্তম নদী অববাহিকা এবং তা সমুদ্র উচ্চতার কাছাকাছি। এর ফলে বাংলাদেশ সুনামি হুমকিতে রয়েছে। ভূমিকম্প হলে নদীগুলোর তীর লাফিয়ে লাফিয়ে গতিপথের পরিবর্তন ঘটাবে। বড় বড় ব্রিজ ও বহুতল বিশিষ্ট ভবনগুলো ধসে পড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, দেশের বাইরে কাছাকাছি ও দেশের ভেতরে ভূমিকম্পের উৎস থাকায় যে কোনো সময় বাংলাদেশে ভূমিকম্প হতে পারে। আমাদের ঢাকা একটি অপরিকল্পিত ও জনবহুল নগরী। বড় ধরনের ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে ঢাকার অবস্থান ভূমিকম্পের উৎস থেকে ৫০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে হলে ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক হতে পারে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)