ই-কমার্সে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ: জাতিসংঘ

ইন্টারনেট ভিত্তিক বাণিজ্য তথা ই-কমার্সে বাংলাদেশ বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনসিটিএডি) এর নতুন এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশনের ভিত্তিকে ‘দৃষ্টান্তমূলক’ আখ্যা দিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।

সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় সোমবার অনুষ্ঠিত ইউএনসিটিএডি’র ‘ই-কমার্স সপ্তাহ ২০১৯’ এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এমনভাবে ডিজিটাল অবকাঠামো দাঁড় করানো হয়েছে যা ই-কমার্সের জন্য বেশ সহায়ক ও এর মাধ্যমে মানসম্পন্ন সেবা পাওয়া সম্ভব। ফলে ভবিষ্যতে এ থেকে তারা ই-কমার্স’কে একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে দাঁড় করাতে সক্ষম হবে। তবে এখনো তারা সমন্বিতভাবে জাতীয় ই-কমার্স কৌশল প্রণয়ন এবং সরবরাহ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটাতে পারেনি।

৭ শতাধিক নদী নিয়ে গঠিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ ব-দ্বীপ বাংলাদেশ প্রবাহ বুঝতে পারে। খুব দ্রুতই ই-কমার্সের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তি ও পণ্যের প্রবাহে বাংলাদেশ পূর্ণ হয়ে ওঠবে।

বাংলাদেশের আইসিটি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার জানিয়েছেন, বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড ও এ সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় আইনকানুনকে ই-কমার্সের উপযোগী করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকার।

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান শাসকজোটের শীর্ষ দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০২১’-এ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকার করা হয়। দেশকে কেবল আধুনিক, জ্ঞানভিত্তিক সমাজে পরিণত করা নয়, জিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পের লক্ষ্য বরং ২০২১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটিকে বিশ্বের নতুন একটি আইসিটি গন্তব্যে পরিণত করা। সরকারের অনুরোধে সম্প্রতি বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশনের ভিত্তি পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে আঙ্কটাড। ১ এপ্রিল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আঙ্কটাড-এর ই-বাণিজ্য সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের সরকারি প্রতিনিধিদের সামনে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।

২০১৬ সাল থেকে ইউএনসিটিএডি র‌্যাপিড ই-ট্রেড রেডিনেস নামের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ই-কমার্সের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে। এ বছর বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে ই-কমার্সের সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রতিবেদন দিয়েছে তারা। ওই পর্যালোচনামূলক প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রযুক্তিনির্ভর ও দক্ষতাভিত্তিক ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য প্রয়োজনীয় ভিত্তি স্থাপন করেছে।

ইউএনসিটিএডি’র প্রতিবেদনে ডিজিটালকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নামের উদ্যোগের মধ্য দিয়ে সরকারি-বেসরকারি সংলাপ পরিচালনা ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার যে ভূমিকা নিয়েছে তা ‘দৃষ্টান্তমূলক’। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশের আইসিটি খাতে বছরে গড়ে ৪০ শতাংশ সমৃদ্ধি হয়েছে। একে উল্লেখযোগ্য অর্জন আখ্যা দেয়া হয়েছে। ১৬ কোটি জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশের ১১ কোটিই তরুণ, যাদের চাকরি ও ভবিষ্যত দক্ষতা তৈরি করা প্রয়োজন। তাদের জন্য প্রযুক্তি খাত জরুরি। তাছাড়া বাংলাদেশে ৬৫ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। কানেকটিভিটির বিষয়টিও প্রাধান্যের ইস্যু হয়ে আছে।

পর্যালোচনামূলক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমন্বিত জাতীয় কৌশলের অংশ হিসেবে ই-বাণিজ্যের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে তাতে ই-বাণিজ্যের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে। নগর ও গ্রাম এলাকার মধ্যে ডিজিটাল ব্যবধান মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। ইউএনসিটিএডি’র প্রযুক্তি ও লজিস্টিকস বিষয়ক বিভাগের পরিচালক শামিকা এন. সিরিমান বলেন, ডিজিটাল ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হতে বাংলাদেশ যে বড় পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, তা দেখে খুব দারুণ লেগেছে। তবে প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্টারনেটভিত্তিক বাণিজ্যকে সামগ্রিকভাবে প্রাধান্য দিয়ে ওই খাতে কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং সেখান থেকে প্রবৃদ্ধি অর্জনের কাজটি এখনো তেমনভাবে শুরু হয়নি।

ই-বাণিজ্যের আশাবাদকে জিইয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। এর মধ্যে রয়েছে- টেলিযোগাযোগগত অবকাঠামোর অগ্রগতি, বাণিজ্য লজিস্টিকস, পেমেন্টজনিত সমাধান, আইন ও বিধিনিষেধ, দক্ষতা উন্নয়ন এবং অর্থায়ন। এর মধ্য দিয়ে ই-বাণিজ্যের প্রসার হবে এবং গোটা অর্থনীতি এর সুবিধা ভোগ করবে।

এবার পঞ্চমবারের মতো আয়োজিত ই-বাণিজ্য সপ্তাহে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিষয়ক প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত সংস্থাটি ১৭টি উন্নয়নশীল দেশের ওপর মূল্যায়ন উপস্থাপন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে: আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, লাও পিপল’স ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক, লাইবেরিয়া, মাদাগাস্কার, মিয়ানমার, নেপাল, সামোয়া, সেনেগাল, সলোমন আইল্যান্ডস, টোগো, উগান্ডা, ভানুয়াতু ও জাম্বিয়া। ই-বাণিজ্যে ভূমিকা পালনকারী উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক ব্যক্তিদের নিয়ে ১ এপ্রিল থেকে এবারের সম্মেলন শুরু হয়েছে। আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত তা চলবে।

ওই পর্যালোচনা প্রতিবেদনটি হাতে পাওয়ার কথা জানিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, সব বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড এবং বিদ্যমান সব ব্যবসায়িক আইন, বিধিনিষেধ ও নীতিমালাগুলোকে ডিজিটাল বাণিজ্যিক বিপ্লবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তৈরি করা হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)