সরকার অর্থনীতিকে দেউলিয়া করে দিচ্ছে : ড. কামাল
প্রকল্পের নামে ঋণের বোঝা চাপিয়ে সরকার দেশের অর্থনীতিকে ‘দেউলিয়া’ করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, এই সরকার এখনই আমরা পরিবর্তন চাই।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে মহান স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
কামাল হোসেন বলেন, সরকারের প্রচার হচ্ছে- দেশে অসাধারণ উন্নতি হচ্ছে। আমরা অমুক সনে এই হবো, তমুক সনে ওই হবো। আমাদের যারা অর্থনীতিবিদ আছেন যারা পরিসংখ্যানগুলো মিলিয়ে পর্যালোচনা করতে পারেন তারা স্পষ্ট করে বলছেন যে, আমাদের অর্থনীতিকে দেউলিয়ার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, এই কথাটা কাটেন। কীভাবে ঋণ নিতে হচ্ছে, এক টাকার জিনিস চার টাকায়, একশ টাকার জিনিস চারশ টাকায় করে যেসব প্রকল্পগুলো হয়েছে। কী মূল্যে কী ঋণে হয়েছে?
তিনি বলেন, সুদের যে বোঝা- এক বছর, দুই বছর, চার বছর পর যোগ করে দেখি- এই ঋণের বোঝা সামলানোর কত কঠিন হবে- একবার ভাবুন। আমি আজ দাবি জানাচ্ছি, যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের কথা বলছেন- মূল্য বলেন, ঋণ বলেন, ঋণ শোধ করতে কতদিন লাগবে- এসব তথ্য আমাদের দিন। উন্নয়নের প্রকল্পের হিসাব জনগণকে দিন।
ক্ষোভের সঙ্গে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমার মনে পড়ে পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান ও ইয়াহিয়া খানের সময় এসব উন্নয়নের বক্তৃতা শুনে বঙ্গবন্ধু ধিক্কার দিয়েছিলেন- কীসের উন্নতির কথা তারা বলছে। আমাদের দেশকে তো শেষ করে দিচ্ছে। আইয়ুব খান অহঙ্কারের সঙ্গে বলতেন আমি চারিদিকে উন্নয়ন করে দিচ্ছে। উন্নয়ন শব্দটা আমাদের কাছে, বঙ্গবন্ধুর কাছে ওই সময়ে ঘৃণিত শব্দ হয়েছিল। উন্নয়ন শব্দটা কী ধরনের ঘৃণার শব্দ হয় যখন স্বৈরাচার এটাকে ব্যবহার করে মানুষের দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরানোর জন্য।
কামাল হোসেন আরও বলেন, আজকে উন্নয়নের মূল্যটা কীভাবে করা হচ্ছে? প্রথমত যদি হতো আমাদের ওপর ঋণের বোঝা চাপানো হবে না, ঋণের বোঝা বাড়তে থাকবে না- তাহলে ঠিক ছিল। কিন্তু তারা যে প্রকল্পের ঋণ নিচ্ছে আমি বলতে পারি তাদের কাছ থেকে এসব তথ্য পাবেন না।
একাদশ সংসদকে ‘কাল্পনিক’ অভিহিত করে তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন ছিল না, এটা একটা কাল্পনিক নির্বাচন ছিল। এখন তথাকথিত সংসদ শোনা যায়। অনেকে সংসদ সংসদ বলেছেন। আমি তো কোনো পার্লামেন্ট আমার চোখের সামনে দেখি না। সংসদ বললেই সংসদ হয় না, নির্বাচিত বললেই নির্বাচিত হয় না।
সরকারকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ ড. কামাল হোসেন বলেন, আপনারা মনে করবেন না যে, এসব করে আপনারা পার পাবেন। কেননা ১৬ কোটি মানুষের সঙ্গে যে বেঈমানি করা হচ্ছে, যেভাবে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে- এটা আমি বলব যে, আইয়ুব-ইয়াহিয়াকে হার মানিয়ে দিচ্ছে। দেশে যেসব অপচয় হচ্ছে, যেসব জিনিসকে বলা হচ্ছে- উন্নয়ন। এটা ঋণের বোঝা ছাড়া আর কিছু না।
তিনি বলেন, বেশি দিন নিয়ে আন্দোলন হলে ঋণের বোঝা বাড়তে বাড়তে সারা অর্থনীতিকে চুরমার করে দেবে, আমাদের অর্থনীতিকে ধবংস করে দেবে। সুতরাং আন্দোলন ধীরস্থিরভাবে করা চলবে না। সরকার পরিবর্তন এখনই চাই।
ঐক্যফ্রন্টের এই শীর্ষ নেতা বলেন, এখনই নির্বাচন দেন। এই বছরের মধ্যে নির্বাচন দিন। আপনার যদি সৎ সাহস থাকে, বুকের পাটা থাকে- এখনই নির্বাচন দিন। সংসদীয় গণতন্ত্রের মধ্যে দুই-এক বছরের মধ্যেও নির্বাচন দেয়া যায় যখনই আস্থার একটা চ্যালেঞ্জ হয়।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের আস্থা এই সরকারের ওপর বিন্দুমাত্র নেই। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি। আমাকে মিথ্যুক প্রমাণিত করতে চাইলে নির্বাচন দিন, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন। নির্বাচন কমিশন আমাদের কাছে নিরপেক্ষ হতে হবে।
কৃষক শ্রমিক জনত লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার খোকার পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিক, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী কায়সার, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী খোকা বক্তব্য রাখেন।