দেবহাটার কোমরপুর সীমান্তে চলছে বেপরোয়া চোরাচালান

সাতক্ষীরার শীর্ষ চোরাকারবারী বিজিবি সদস্য আব্দুল জব্বার হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামী কোমরপুরের আব্দুল আলিম মেম্বর ও শাঁখরার আব্দুল্যাহর নেতৃত্বে দেবহাটার কোমরপুর সীমান্তে আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাচালান। বর্তমানে জেলার চোরাচালানী সিন্ডিকেটের গডফাদারদের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কোমরপুরের ইউপি সদস্য বিজিবি জব্বার হত্যা মামলার আসামী আব্দুল আলিম ও শাঁখরা গ্রামের আব্দুল্যাহর নেতৃত্বাধীন দেবহাটার সীমান্তবর্তী কোমরপুর নিমতলা ও হাড়দ্দাহর চোরাঘাটগুলো।

প্রতিরাতেই দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কোমরপুরের নিমতলা ও হাড়দ্দাহর চোরাঘাট দিয়ে অবৈধভাবে দেদারছে নদী সাঁতরে আনা হচ্ছে শত শত পলিব্যাগ ভর্তি ভারতীয় নিন্মমানের ভাইরাসযুক্ত গলদার রেনু, বস্তাভর্তি দুর্গন্ধ যুক্ত মরা গরুর মাংশ, নকল ক্যান্সারের টিকা, জাল টাকা, নিষিদ্ধ ঔষধ, মদ, গাজা, হেরোইন, ফেন্সিডিল, ইয়াবা ট্যাবলেট, ময়ুর পাখি, কাকাতুয়া, বিদেশী কুকুর, অন্যান্য পশু-পাখি, শাড়ী-থ্রিপিছ সহ গার্মেন্টস সামগ্রী, গাড়ীর টায়ার।

পাশাপাশি একই চোরাঘাট ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাঁচার করা হচ্ছে গার্মেন্টন্সের মেশিন, ফ্রীজের কমপ্রেশার মেশিন, সরকারি জন্মনিয়ন্ত্রন পিল (সুখী বড়ি), উন্নত মানের বানরের বাচ্চা, উন্নত জাতের কবুতর ও রাজহাঁস, কাসা-পিতল সহ মূল্যবান দেশীয় সম্পদ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির চোরাচালান বিরোধী তৎপরতার কারণে কিছুদিন চোরাচালানী কর্মকান্ড অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সম্প্রতি চোরাকারবারী গডফাদার একাধিক মামলার আসামী কোমরপুরের আলিম মেম্বর ও শাঁখরার আব্দুল্যাহর চোরাচালানী সিন্ডিকেটের হোতাদের রমরমা চোরাচালানে আবারো প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে সিমান্তবর্তী জনপদ।

সংঘবদ্ধ চোরাচালানী এ সিন্ডিকেটটি কোমরপুরের নিমতলা চোরাঘাট দিয়ে রাতের আধারে ইছামতি নদী সাতরে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে নিন্মমানের গলদার রেনু, মরা গরুর মাংশ, মাদকদ্রব্য, জালনোট সহ অন্যান্য চোরাচালানী পন্য। পরবর্তীতে এসব চোরাচালানী মালামালের মধ্য থেকে নিন্মমানের ভাইরাসযুক্ত গলদা চিংড়ির রেনু মোটর সাইকেল, ইঞ্জিনভ্যান, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যাওয়া হয় কুলিয়া ব্রীজ সংলঘ্ন রেনুর সেডে। আর মাদকদ্রব্য, জালনোট, গার্মেন্টস সামগ্রী, পশু-পাখি মহ অন্যান্যা মালামাল একইভাবে সুবিধামতো সময়ে চাহিদা অনুযায়ী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করছে চোরাচালানী সিন্ডিকেটটি।

মাঝে মাঝে বিজিবি সহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এসকল অবৈধ মালামালের দু’একটি ছোটখাটো চালান ধরা পড়লেও,বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে এসব চিহ্নিত চোরাকারবারীরা বরাবরই রয়ে যাচ্ছে ধরাছোয়ার বাইরে। বর্তমানে চোরাকারবারী আলিম মেম্বর ও আব্দুল্যাহ’র নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটটিতে আরো যেসব চোরাকারবারীরা চোরাচালানের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছে গয়েশপুরের আনারুল, মোকছেদ, মন্টু, আব্দুল খালেক, বোনাই বাবু ও কবির হোসেন।

এসব চোরাকারবারীদের অনেকেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তালিকাভূক্ত চোরাকারবারী এবং অধিকাংশের বিরুদ্ধেই রয়েছে বিজিবি সদস্য জব্বার হত্যাসহ একাধীক মামলা। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকায় তাদেরকে প্রশাসন গ্রেফতার না করায় বহাল তবিয়তে থেকে কোমরপুর সীমান্তে চোরাচালানের রামরাজত্ব কায়েম করে চলেছে চোরাকারবারী গডফদার আলিম মেম্বর, আব্দুল্যাহ সহ অন্যান্যরা। এসব চিহ্নিত চোরাকারবারীদের গ্রেফতার করা হলে অপরাধ কর্মকান্ড নিমেষেই কমে যাওয়ার পাশাপাশি বর্তমান সরকারের মাদক,চোরাচালান মুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হবে এমনটিই প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের। তাই অবিলম্বে এসব চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ জেলা পুলিশ সুপার ও সিমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি’র আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে করেছে সীমান্ত এলাকার মানুষ।

এ ব্যাপারে কোমরপুর সীমান্তের চোরাচালানী গডফাদার আলিম মেম্বরের কাছে জানতে চাইলে অনেনকটা দাম্ভিকতার সাথে সে সাংবাদিকদের জানায়, আমি ঘাট চালাচ্ছিনা, আপনারা (সাংবাদিকরা) চালাচ্ছেন। তবে চোরাচালানের সত্যতা স্বীকার করে তারই অপর সহযোগী আনারুল বলেন, আপনারা লেখালেখি করবেননা। মাত্র কয়েকদিন হলো শুরু করেছি।

চোরাচালানের বিষয়ে সাতক্ষীরার নীলডুমুর ১৭ বিজিবি ব্যাটেলিয়ানের অধিনায়ক মোস্তফা ইকবাল আসাদের সাথে কথা বললে তিনি সাংবাদিকদের বলেন,সুনিদ্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সীমান্তের চোরাচালান নির্মুল ও এসব চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)