শ্যামনগর দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত যাত্রীবাহী নৌযান কলকাতায় পৌছাবে
প্রায় ৭০ বছর পর ফের বাংলাদেশ-ভারত ক্রুজ শিপ চালু হচ্ছে। আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) ক্রুজ শিপ ‘এমভি মধুমতি’ ঢাকা থেকে কলকাতার উদ্দেশে যাত্রা করবে।
একই সময়ে ভারতের ক্রুজ শিপ ‘মেসার্স আরভি বেঙ্গল গঙ্গা’ কলকাতা থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে।
উড়োজাহাজ, ট্রেন বা বাসে চড়ে ইচ্ছেমতো আসা-যাওয়া করা যায় কলকাতায়। কিন্তু নৌপথে পণ্য পরিবহন চললেও সাধারণ যাত্রীদের কলকাতায় যাওয়ার সুযোগ ছিল না। পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে নৌযান যাত্রীসেবা চালুর মাধ্যমে নৌপথের সেই বাধা দূর হতে যাচ্ছে।
ক্রুজ শিপ যাত্রার ঐতিহাসিক মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে শুক্রবার বিকেল ৫টায় নারায়ণগঞ্জের পাগলাস্থ ভিআইপি ঘাটে (মেরিএন্ডারসন) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রধান অতিথি এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বিশেষ অতিথি থাকবেন।
জাহাজটি বরিশাল, বাগেরহাটের মংলা, সুন্দরবন, খুলনার আন্টিহারা- ভারতের হলদিয়া রুট হয়ে কলকাতায় যাবে।
বিআইডব্লিউটিসি জানিয়েছে, বাংলাদেশ-ভারত নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে এ সেবা চালু হচ্ছে। পরীক্ষামূলকভাবে সফল হলে ঢাকা থেকে কলকাতায় নিয়মিতভাবে নৌযান চলবে। রুটটির পরিধি বাড়িয়ে উত্তর ভারতের আসামের গুয়াহাটি নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। এজন্য পরীক্ষামূলকভাবে সুন্দরবন, বরিশাল, চাঁদপুরের মতো আকর্ষণীয় এলাকা দিয়ে নৌযানগুলো ঘুরে যাবে।
সময় যত লাগবে : ঢাকা থেকে ২৯ মার্চ রাত ৯টায় রওনা দিয়ে চাঁদপুর হয়ে ৩০ মার্চ ভোরবেলা বরিশালে যাত্রা বিরতি করবে এমভি মধুমতি। সেখান থেকে বাগেরহাটের মংলায় কিছু সময় থামবে জাহাজটি। বাগেরহাট থেকে সুন্দরবনে ভেতরে যাবে এটি।
সুন্দরবন ঘুরে মধুমতি জাহাজটি খুলনার কয়রার আন্টিহারার দিকে যাবে। সেখানে যাত্রীদের ইমিগ্রেশনের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা হবে। আন্টিহারা হয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়ায় যাবে। হলদিয়া থেকে সরাসরি কলকাতা যাবে মধুমতি।
সবশেষ গন্তব্য কলকাতা নৌবন্দরে পৌঁছাবে ৩১ মার্চ রোববার দুপুর ১২টার দিকে। রোববার কলকাতায় থেকে পরদিন ১ এপ্রিল ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে এমভি মধুমতি।
ঢাকা-কলকাতা যাতায়াত ভাড়া : এমভি মধুমতিতে যাত্রী ধারণক্ষমতা প্রায় ৬০০। এর মধ্যে কেবিনগুলোতে ১৩০ জন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন। বিআইডব্লিউটিসি জানিয়েছে, কেবিন ভাড়া ফ্যামিলি স্যুট (দুজন) ১৫ হাজার টাকা, প্রথম শ্রেণি (যাত্রীপ্রতি) ৫ হাজার টাকা, ডিলাক্স শ্রেণি (দুজন) ১০ হাজার টাকা, ইকোনমি চেয়ার প্রতিটি ২ হাজার টাকা এবং সুলভ ও ডিলাক্স শ্রেণির যাত্রীপ্রতি ভাড়া রাখা হবে দেড় হাজার টাকা।
জাহাজে প্রাতঃরাশ, মধ্যাহ্নভোজ, বিকেলের নাশতা, রাতের খাবারের ব্যবস্থা থাকবে। তবে এসব খাবার যাত্রীদের কিনে খেতে হবে। এছাড়া, ভিসাও যাত্রীদের নিজেদের উদ্যোগে নিতে হবে। ভিসায় কোন পথে যাত্রীরা যাবেন এবং কলকাতা হয়ে ফেরত আসবেন সে বিষয় উল্লেখ ঘোষণা থাকতে হবে।
২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে কোস্টাল এবং প্রটোকল রুটে প্যাসেঞ্জার ও ক্রুজ সার্ভিস চালুর জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর এ বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটর প্রসিডিউর (এসওপি) স্বাক্ষর হয়।
প্রসঙ্গত, অবিভক্ত ভারতবর্ষে এই অঞ্চল ও ভারতের মধ্যে ক্রুজ শিপ চলাচল করত। কিন্তু বিভক্তির পর (পাকিস্তান অংশ বিচ্ছিন্ন হওয়া) ক্রুজ শিপ বন্ধ হয়ে যায়। আবার প্রায় ৭০ বছর পর বাংলাদেশ-ভারতের মাঝে নৌপথ উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে। চলাচল শুরু হতে যাচ্ছে ক্রুজ শিপের।