বিশ্বজুড়ে মসজিদে বর্বরতম যত হামলা
শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে পরিচিত নিউজিল্যান্ড। কিন্তু দেশটিরই একটি মসজিদে গতকাল ঘটে গেছে ইতিহাসের বর্বরতম হামলার ঘটনা। শুধু নিউজিল্যান্ড নয়, বিগত এক দশকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই মসজিদগুলো সন্ত্রাসী হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। তেমন কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হল-
আফগানিস্তান
মসজিদে বোমা হামলার ঘটনা ‘প্রতিনিয়তই’ শোনা যায় দেশটিতে। ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর রাজধানী কাবুলের একটি শিয়া মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত, আহত হয় ৪৫জন। ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর দেশটির খোস্ত প্রদেশে মান্দোজাই এলাকার সেনাঘাঁটির ভেতরের একটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ২৬ জন নিহত এবং ৫০ জন আহত হন। একই বছরের ৩ আগস্ট পাকতিয়া প্রদেশে গারদেজ সিটির একটি শিয়া মসজিদে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ৩৯ জন নিহত এবং ৮০ জন আহত হয়। ২০১৮ সালের ৭ মে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় খোস্ত প্রদেশের আরো একটি মসজিদে বোমা হামলায় অন্তত ১৯ মুসল্লি নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হন। একই বছরের ৩ এপ্রিল দেশটির উত্তরাঞ্চলের কুন্দুজ প্রদশে একটি মসজিদে বোমা হামলা চালায় সরকারি বাহিনী। ওই হামলায় প্রায় ৭০ জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন তালেবান কমান্ডার ছিল বলে জানা যায়।
ফিলিপাইন
চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি ফিলিপাইনের মিন্দানাওয়ের একটি মসজিদে গ্রেনেড হামলায় দুই ব্যক্তি নিহত হয় এবং ওই হামলায় আহত হয় আরো চারজন। দেশটির পুলিশ জানায়, এক সন্দেহভাজন কাছাকাছি সড়কের আলো বন্ধ করে দিয়ে মসজিদের ভেতরে গ্রেনেড ছুড়ে মেরেছিল। এ সময় মসজিদের ভেতর বেশ কয়েকজন মুসল্লি ছিলেন।
সিরিয়া
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সিরিয়ার মসজিদগুলো এখন অনিরাপদ। আত্মঘাতী হামলার পাশাপাশি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোও প্রায়ই বিমান হামলা চালায় এসব মসজিদে। ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় আলেপ্পোর বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকার একটি মসজিদে বিমান হামলায় অন্তত ৪৬ জন নিহত হয়েছিল। ২০১৩ সালের ২১ মার্চ দেশটির রাজধানী দামেস্কের কেন্দ্রস্থলে এক মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ইমাম শেখ মোহাম্মদ সাঈদ রামাদান আলবুতিসহ অন্তত ৪১ ব্যক্তি নিহত হয়েছিলেন। ওই হামলায় আহত হয়েছিলেন অন্তত ৮৪ জন।
মিসর
এই শহরের প্রধান মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম আর-রাওদা। ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বরের দিনটি ছিল শুক্রবার। দুপুরে সবাই যখন জুমার নামাজে ব্যস্ত, তখন চারটি ফোর হুইলার জিপে করে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী এসে মসজিদটিকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। তাদের একটি দল মসজিদের ভেতরে গিয়ে বোমা বিস্ফোরণ করে এবং নামাজরত মুসল্লিদের ওপর গুলি করতে শুরু করে। আতঙ্কিত এবং আহত মুসল্লিরা যখন জ্ঞানশূন্য হয়ে পালাতে শুরু করে, তখন বাইরে অপেক্ষমাণ সন্ত্রাসীরাও তাদের ওপর গুলি চালায়। বর্বরোচিত ওই হামলায় ২৩৫ জন মুসল্লি নিহত হন এবং আহত হয় আরো ১২০ জন।
পাকিস্তান
পাকিস্তানে বিভিন্ন মসজিদে সাম্প্রতিক হামলাগুলোর মধ্যে ২০১০ সালে ৪ নভেম্বর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি সুন্নি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছিল। ওই হামলায় আহত হয়েছিল আরো অন্তত ৮০ জন। ২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের পেশোয়ারের একটি মসজিদে বোমা হামলায় নিহত হয় ২২ জন এবং আহত হয় অর্ধশতাধিক মানুষ। ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় সিন্ধ প্রদেশের সেওয়ান অঞ্চলের লাল শাহবাজ মসজিদে ধর্মীয় একটি অনুষ্ঠান চলাকালে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। এই হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে প্রাণ হারায় অন্তত ৭৫ জন। ওই আক্রমণে আহত হয় আরো অন্তত দেড়শো মানুষ। ওই হামলার দায় স্বীকার করে আইএস। একই বছরের ৩১ মার্চ পাক-আফগান সীমান্তসংলগ্ন পাকিস্তানের আদিবাসী অধ্যুষিত প্রত্যন্ত পারাচিনা শহরের একটি শিয়া মসজিদের প্রবেশপথে বোমা হামলা চালালে অন্তত ১০ জন নিহত হয়। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছিলেন। ২০১৩ সালের ২১ জুন পেশোয়ারের শিয়া অধ্যুষিত চামকিনি এলাকার একটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৪ জন নিহত হন।
যুক্তরাষ্ট্র
২০১৭ সালের ২৭ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দেশটির টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের একটি মসজিদ পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। সিএনএনের হিসাবে, ২০১৭ সালের প্রথম তিন মাসেই আমেরিকার ১৯ অঙ্গরাজ্যের মোট ৩৩টি মসজিদে হামলা চালায় শেতাঙ্গ উগ্রবাদীরা। এসব হামলার ধরন ছিল ভিন্ন ভিন্ন। দেশটিতে এর আগের বছর ২০১৬ সালে ১৭টি মুসলিমবিরোধী হামলার ঘটনা ঘটেছিল।
সৌদি আরব
২০১৫ সালে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে সৌদি আরবের কাতিফ জেলার আল কাদেহ গ্রামের ইমাম আলী মসজিদে জুমার নামাজ চলাকালে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে অন্তত ২০ জন নিহত ও ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছিল। এ ছাড়া ২০১৬ সালে মসজিদে নববি শরিফের পাশেও বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। ইফতারের সময় মসজিদের পার্কিং এলাকার একটি নিরাপত্তা চৌকিতে ওই হামলায় একজন আত্মঘাতীসহ মোট তিনজন নিহত হয়।
ইয়েমেন
ইয়েমেনের মসজিদগুলোতে হামলা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ২০১৫ সালের ২০ মার্চ ইয়েমেনের রাজধানী সানার দুটি মসজিদে হামলা চালানো হলে তাৎক্ষণিকভাবে অন্তত ১২৬ জন নিহত হয়। ওই হামলায় আহত হয়েছিল আরো অন্তত ২৫০ জন। এ ছাড়া ২০১৫ সালেরই ১৭ জুন দেশটির রাজধানী সানায় মসজিদে সিরিজ বোমা হামলা করা হয়। ওই হামলায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছিলেন। ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পবিত্র ঈদুল আজহার দিনও রাজধানী সানার একটি মসজিদে ঈদের জামাতে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ২৯ জন নিহত হয়েছিলেন। সানার আল-বালিলি মসজিদে এ বোমা হামলা চালানো হয়।
সূত্র:ডেইলি বাংলাদেশ