মানুষ অমরত্ব লাভ করার পরিণাম যা হবে

আজীবন কে না বেঁচে থাকতে চায়? বেঁচে থাকার ইচ্ছা প্রবল থাকে মানুষের মনে। মৃত্যু আসবেই আর তা মেনেই জীবনে পথ চলতে হবে এ বিষয়টি সকলেরই জানা। তবে ছোটবেলা থেকে একদম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বঁচে থাকার আগ্রহ বিন্দুমাত্র কমে না কারো! যুগ যুগ ধরে অনেক মানুষই বিভিন্ন উপায়ে অমরত্ব লাভের চেষ্টা করে আসছে। এরা সকলে অসফল হলেও মানুষের অমরত্ব লাভের চেস্টা থেমে থাকেনি। বর্তমানেও সিলিকন ভ্যালিতে অ্যান্টি এজিং ও বৃদ্ধ বয়সে শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিলিয়ন ডলারের প্রজেক্টের কাজ চলছে। এছাড়াও পুরো বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিজ্ঞানীরা নিরলসভাবে মানুষকে অমর বানানোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাছাড়াও নানা সিনেমা উপন্যাসে আমরা মানুষ অমর হওয়া দেখেছি। কিন্তু কখনো কি চিন্তা করে দেখেছেন কী হবে যদি মানুষ অমরত্ব লাভ করে? তাহলে জেনে আসা যাক মানুষ অমরত্ব লাভ করলে সম্ভব্য সম্ভাবনাগুলো সম্পর্কে-

মানুষ অমরত্ব লাভ করলে কে কি করত তা অনেকের চিন্তাতেই রয়েছে নিশ্চয়ই! কেউ হয়তো পুরো পৃথিবী ঘুরে দেখার স্বপ্ন দেখেছেন। কেউ হয়তো নিজের ভুলগুলো শুধরিয়ে সুন্দর করে জীবনযাপনের কথা কল্পনা করেছেন। আবার কেউ কেউ হয়তো প্রিয় মানুষের সঙ্গে সব সময় থাকার কল্পনা করেছেন। কিন্তু বাস্তব চিত্র কিছুটা ভিন্ন হত। মানুষ অমরত্ব লাভ করলে প্রথমত সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যাবে। তখন এক মানুষের সঙ্গে চিরদিনের জন্য বসবাসটা হয়তো আর থাকবে না বরং বিবাহ বহু বিবাহে রূপান্তরিত হবে। এছাড়াও সামাজিক চিত্র ভিন্ন হবে। কারণ বিভিন্ন সময়ের মানুষ বিভিন্ন মতবাদে এবং ভিন্ন ভিন্ন স্বাধে বিশ্বাসী। ফলে একই সমাজে দেখা যাবে কেউ দু’শ বছর পূর্বে বসবাস করছে আবার কেউ বর্তমানে বসবাস করছে। এক্ষেত্রে মতের অমিলের কারণে মানুষের মধ্যে একে অপরের সঙ্গে কলহ লেগে থাকবে। যে কারণে দেখা যাবে সামাজিক অশান্তি।

মানুষ অমরত্ব লাভ করলেও পৃথিবীর আয়তন একই থাকছে। বর্তমান পৃথিবীই জনসংখ্যা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এক্ষেত্রে মানুষ অমরত্ব লাভ করলে জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যা আরো প্রবল হবে। ফলে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মানুষের বসবাস বেড়ে যাবে। গাছপালা এবং বন জঙ্গল ধ্বংস করতে হবে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে হতে পৃথিবী বসবাস অযোগ্য পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। তাছাড়াও জনসখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রাকৃতিক সম্পদ এর পরিমান কমতে থাকবে। এক পর্যায়ে পৃথিবীর সকল সম্পদ শেষ হয়ে যাবে। ফলে মানবজাতি মারাত্বক জ্বালানী সংকটে ভুগবে। এছাড়াও খাদ্যাভাব দেখা দেয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। বেড়ে যাবে বেকারত্ব। কারণ বেশিরভাগ কোম্পানিই তাদের জন্য অভিজ্ঞ ভাল কর্মচারীর খোঁজ করে। মানুষ অমর হয়ে গেলে বেশিরভাগ কোম্পানিই তাদের পুরনো অভিজ্ঞ কর্মচারীদেরকে রাখার চেষ্টা করবে। ফলে হয়তো উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে এবং দেশের অর্থনীতিও জোড়াল হবে। একইসঙ্গে নতুনদের জন্য কোনো চাকরি থাকবে না। ফলে দেখা যাবে মারাত্মক বেকার সমস্যা। যা কিনা অপরাধ বাড়িয়ে দিবে। এছাড়াও মানুষের নিজের কাজের উপর থেকে ভালোবাসা উঠে যাবে। কিন্তু যদি কেউ রিটায়ার করার চিন্তা করে তবে পৃথিবীর কোনো পেনশন ব্যবস্থাই তাকে সাহায্য করতে পাড়বেনা। ফলে হয় তাকে কাজ চালিয়ে যেতে হবে নয়তো অর্থাভাবে পড়তে হবে।

আইনকানুন এবং শাসন ব্যবস্থায়ও দেখা যাবে পরিবর্তন। পূর্বের সকল নেতা এবং আইন প্রনেতারা বেঁচে থাকলে আইনকানুন হয়তো হাজার হাজার বছর ধরে একই থাকবে। এছাড়াও নতুন  নেতারা পূর্বের নেতাদের সঙ্গে দন্ধে জড়িয়ে যাবে। এই পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপি আইন এবং শাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়া পর্যন্ত গড়াতে পারে। শারীরিক রোগ থেকে মানুষ মুক্তি পেলেও বেড়ে যাবে মানসিক রোগ। একই কাজ শত শত বছর ধরে করলে তার প্রতি মানুষের অনীহা কাজ করবে। যে কারণে বেশিরভাগ মানুষকেই হতাশা গ্রাস করে নিবে। এছাড়াও মানুষ বাঁচার উদ্দ্যেশ্য হারিয়ে ফেলবে। এভাবেই অমরত্ব লাভ করলে হয়তো মানবসভ্যতা ধ্বংস পর্যন্ত হয়ে  যেতে পারে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)