তারেককে নিয়ে সিনিয়র নেতাদের অসন্তোষ
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দল পুনর্গঠন নীতি নিয়ে হতাশা এবং অসন্তুষ্টিতে ভুগছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। বুধবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তারা এই হতাশা প্রকাশ করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানায়, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতাদের বৈঠক চলে। তবে বৈঠকে তারেক রহমান স্কাইপিতে যুক্ত ছিলেন কি না সে বিষয়য়ে ওই সূত্রটি নিশ্চিত করতে পারেনি।
সূত্রের দাবি, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর দলের সিনিয়র নেতারা পুনর্গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন, পুনর্গঠন প্রক্রিয়াও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। কিন্তু দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিনিয়রদের পাশ কাটিয়ে মধ্যম সারির কিছু নেতাকে নিয়ে স্কাইপি কনফারেন্স করে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন যার দরুণ সিনিয়র নেতাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে।
সূত্র জানায়, তারেক রহমানের স্কাইপি কনফারেন্সে যারা যুক্ত হচ্ছেন তারা সিনিয়র নেতাদের পাত্তা দিচ্ছেন না। এছাড়া স্কাইপি কনফারেন্সে কে কে থাকবে- সেই তালিকা ঢাকায় থেকে একজন নেতা দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে তারেক রহমান, খালেদা জিয়া এবং ওই তালিকা প্রণয়নকারীর ঘনিষ্ঠ নেতারা স্কাইপি কনফারেন্সে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন।
সূত্র আরও জানায়, দলের প্রপার চেইন অব কমান্ড উপেক্ষা করে তারেক রহমানের স্কাইপি কনফারেন্স এবং মধ্যম সারির নেতাদের তার নির্দেশনায় দলের অভ্যন্তরে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। জাতীয়তাবাদী মহিলা দল তিন ভাগ হয়ে গেছে। মূল মহিলা দল থাকলেও তাদের কর্মসূচিতে সংগঠনের নেত্রীদের উপস্থিতি নেই। মহিলা দলকে পাশ কাটিয়ে মহিলা দলের সাবেক একজন সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে মহিলা দলের নেত্রীদের একটা অংশ নিয়ে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হচ্ছে। আবার বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যানকে ঘিরে মহিলা দলের আরেকটি অংশ সরব হওয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়া এ্যাব, ড্যাব, মৎস্যজীবী দল, কৃষক দলের নবগঠিত কমিটিও এক নেতার প্রেসক্রিপশনে হয়েছে বলে দাবি করা হয়। এই পরিস্থিতি নিয়ে সিনিয়র নেতারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের শপথ এবং ২০ দলীয় জোটের বিষয়েও নেতারা পর্যালোচনা করেন। আগামী সপ্তাহে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক করার চিন্তা রয়েছে তাদের। ২০ দলীয় জোট থেকে কয়েকটি দল বাদ পড়তে পারে এমন ইঙ্গিত দেয় বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের ওই সূত্র।
এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়েও পর্যালোচনা করেন তারা। আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে সিনিয়র নেতারা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে গিয়ে দেখা করবেন এ কারণে সার্বিক বিষয় নিয়ে তারা আলোচনা করেন।
এই বৈঠকের বিষয়ে স্থায়ী কমিটির কোনো নেতা কিছু বলেননি। তবে বৈঠকের কথা স্বীকার করেছেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
বৈঠকে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের বৈঠক হয়েছে। কিছু জানতে হলে আমাদের মুখপাত্র মহাসচিবকে জিজ্ঞেস করতে হবে।’
কিন্তু বিএনপি মুখপাত্র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
সূত্র জানায়, বৈঠকে অন্যদের মধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।