শুরু হলো ডাকসুর ভোট
দীর্ঘ ২৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়েে উৎসবের আমেজে শুরু হয়েছে ডাকসুর নেতৃত্ব নির্বাচিত করার ভোট। সকাল ৮টা থেকে ভোট দেয়া শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। হলে হলে বুথের সামনে ভোটারদের লম্বা লাইন। মোট ১৮টি আবাসিক হলের ৫১১টি বুথে বিকেল ২টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ।
এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় ব্যালটবাক্স ও নির্বাচনী সরঞ্জাম নেয়া হয় ভোটকেন্দ্রে।
ডাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪২ হাজার ৯২৩ জন। কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলে মোট প্রার্থী ৭৩৮ জন। কেন্দ্রে ২৫ পদ ও হল সংসদে ১৩ পদসহ মোট ৩৮ টি পদে ভোট দিতে পারবে প্রত্যেক ভোটার। সে হিসেবে ৩৮ টা ভোট দিতে একজন ভোটার ৪ মিনিট সময় পাবেন।
এবারের নির্বাচনে ১০টি ছাত্র সংগঠন প্যানেল দেয়। তবে সব হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল আছে কেবল ছাত্রলীগের। এবার ডাকসুতে মোট ভোটার ৪৩ হাজার ২৫৫ জন। যার ৩৬ শতাংশ নারী। আর হল সংসদ মিলিয়ে, মোট প্রার্থী ৭৩৮ জন। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে ২৫টি পদে লড়ছেন ২২৯ জন। বাকিরা ১৮টি হলের ১৩টি করে পদের জন্য লড়ছেন। সবমিলিয়ে নারী প্রার্থী আছেন ১৫ শতাংশের মতো। এর আগে মধ্যরাতেই বুথগুলোতে ব্যালট বক্স বসানো হয়।
সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন উপস্থাপনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে রেখেছে প্রশাসন। রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িতরা ছাড়া বহিরাগত কোনো ব্যক্তি কিংবা যানবাহন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। শিক্ষার্থীদেরও পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে হবে।
এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহবাগ, নীলক্ষেত, পলাশী, জগন্নাথ হল ক্রসিং, রুমনা ভবন ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ও শহীদুল্লাহ হল ক্রসিংয়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এসব স্পটে নিরাপত্তার দায়িত্বে র্যাব ও পুলিশ একযোগে কাজ করছে। এছাড়া নিরাপত্তার দায়িত্বেে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপ, বিএনসিসি ও রেঞ্জার।
রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্রধারী ও ডাকসু নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অনুমোদিত পাসধারীরা ক্যাম্পাস এলাকায় যাতায়াত করতে পারছেন।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, সন্ধ্যা ৬টা থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়। যা সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। বহিরাগতদের ক্যাম্পাস এলাকা ছাড়তে মাইকিং করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ। সন্ধ্যার আগে থেকেই টিএসসি, গ্রন্থাগার ও জনসমাগম জায়গাগুলোতে মাইকিং করা হয়। আবাসিক হলগুলোতে থাকা বহিরাগতদেরও হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
ক্যাম্পাস এলাকার প্রবেশ পথগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ভেতরে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি খুব একটা চোঁখে না পড়লেও প্রবেশপথগুলোতে পরিচয়পত্র ও পাস দেখানোর শর্তে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি প্রবেশপথ (নীলক্ষেত, শাহবাগ ও হাইকোর্ট) বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় রয়েছে। তিন প্রবেশপথ দিয়ে শুধু ভোটার ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নিজ নিজ পরিচয়পত্র দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারছেন। প্রবেশ পথগুলোতে ব্যারিকেড দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে সম্পন্ন করতে আড়াই হাজার পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলেই আইন প্রয়োগ করা হবে। এ জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নিরাপত্তা চৌকি বসানোর পাশাপাশি কঠোর নজরদারির জন্য ১৮টি হলে ১১৩টি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৭২ সালের ২০ মে। এক বছরের মাথায় ১৯৭৩ সালে আগের ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ী ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে জোট বাঁধে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ওই দুই ছাত্রসংগঠনের যৌথ প্যানেলের নাম দেয়া হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। সংগ্রাম পরিষদের প্রতিদ্বন্দ্বী আ স ম আবদুর রব সমর্থিত জাসদ ছাত্রলীগের অবস্থানও ছিল বেশ শক্ত। ৩ সেপ্টেম্বর দিনভর নির্বিঘ্নে ভোট গ্রহণ হয়। সন্ধ্যায় ভোট গণনা শুরু হলে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। পরদিন ৪ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনে গোলাগুলি, হলগুলোতে ছিনতাই করা হয় ব্যালট বাক্স। এ ঘটনায় পরস্পরকে দোষারোপ করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও রব পন্থী জাসদ ছাত্রলীগ। স্থগিত হয় ভোট গণনা। বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালের পর আরো পাঁচবার ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। টানা ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অষ্টম ডাকসু নির্বাচন। জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৭৯, ১৯৮০ ও ১৯৮২ সালে তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া এরশাদের আমলে ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালে দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।