প্রতিবন্ধীতাকে জয় করে বিশ্ব ইতিহাস গড়া পাঁচ নারী
যুগ যুগ ধরে নারীরা তাদের যোগ্যতা তুলে ধরে ইতিহাস তৈরি করেছেন। এমনকি শারীরিক অক্ষমতা অর্থ্যাৎ প্রতিবন্ধীতাকে জয় করেছেন এমন নারীরাও ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাদেরকে দমিয়ে রাখতে পারেনি বরং নানান নিগ্রহ স্বত্ত্বেও তারা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে অনন্য হয়েছেন। এমনই পাঁচ নারীকে নিয়ে আজকের আয়োজন। যারা মেধা ও মননে অন্যান্য নারীদের চেয়ে কম যায় না। তারা সকল নারীদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং প্রমাণ করে দিয়েছে শারীরিক অক্ষমতাকে কীভাবে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হয়। এমনই পাঁচ নারী হলেন- জিলিয়ান মারকাদো, স্টেলা ইয়াং, ক্লাউদিয়া গর্ডন, জুডি হিউম্যান এবং ডক্টর মায়া অ্যাঞ্জেলো। তারা আজ সকল নারীর জন্য উদাহরণ। এদের কেউ সাংবাদিক হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন কেউবা সাহিত্যে পারদর্শিতা অর্জন করেছেন কেউ আবার সরকারি অফিসের বড় কর্মকর্তা এমনকি মডেল হিসেবেও বিশ্বজুড়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
জিলিয়ান মারকাদো
জিলিয়ান মারকোডো শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে প্রথম মডেল। যখন তিনি মডেলিংয়ে কাজ করার সুযোগ পান তখন থেকেই তিনি অন্যান্য প্রতিবন্ধী সুন্দরীদের খুঁজতে থাকেন যারা কিনা হুইল চেয়ারে বসা স্বত্ত্বেও মডেলিংয়ে নিজেদের পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে চান। প্রায় চার বছর পূর্বে, মারকাদো মডেলিংয়ে যুক্ত হন যা তার পুরো জূবনকে তথঅ সমগ্র মডেলিং ইন্ডাষ্ট্রিকে পাল্টে দিয়েছে। একটি ডিজেল জিন্স প্যান্টের বিজ্ঞাপন প্রচারাভিযানের জন্য তার ডাঁক পড়ে। পরের বছর মারকাদো আইএমজি স্বাক্ষরিত মডেল হিসেবে আত্মনিয়োগ করেন। এরপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সম্প্রতি তিনি বিয়ন্সের মার্চেন্ডাইজ ক্যাম্পেইনের হয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেছেন।
স্টেলা ইয়াং
স্টেলা ইয়াং সম্ভবত প্রথম নারী যিনি কি-না শারীরিক প্রতিবন্ধীতা স্বত্ত্বেও মিডিয়াকে গ্রহণ করে নিজের ক্যারিয়ারের উন্নতি সাধন করেছেন। তিনি একাধারে একজন সাংবাদিক, একটি অনলাইন পত্রিকার সম্পাদক, কমেডিয়ান (তার নিজস্ব কমেডি শো ছিল) এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রথম শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী টিভি শো ‘নো লিমিটস’ এর পথ প্রদর্শক। ২০১৪ সালে টেডক্স টক নামক একটি টিভি প্রোগ্রাম করেছিলেন যার নাম “আমি আপনার অনুপ্রেরণা নই, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।” তার টেডক্স কথোপকথনের মাধ্যমে, তিনি লাখ লাখ মানুষের চোখ খুলে দিয়েছিলেন এবং “অনুপ্রেরণা অশ্লীলতার” ধারণাটি প্রকাশ করেছিলেন। যারা শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদেরকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করে তাদের চোখের কালো পর্দা সরিয়ে দেন স্টেলা। কীভাবে একজন প্রতিবন্ধী নারী সমাজে নিজ কার্যগুণে গুণান্বিত হতে পারে উক্ত অনুষ্ঠানে তারই গুণগান করেন তিনি।
ক্লাউদিয়া গর্ডন
ক্লাউদিয়া গর্ডন ওয়াশিংটন, ডিসি-তে পরিবর্তন এনেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। প্রতিবন্ধীদের সমস্যা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তিনি। বধির ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন ক্লাউদিয়া। ন্যাশনাল কাউন্সিল অন ডিস্যাবিলিটি, দ্য ন্যাশনাল কোয়ালিশন ফর ডিসএবিলিবিলিটি রাইটস অ্যান্ড হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এ কাজ করেছেন (যেখানে তিনি অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য সরকারের জরুরি প্রস্তুতি পরিকল্পনা নিশ্চিত করার কাজ করেছেন)। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি হলো তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ বধির নারী আইনজীবী এবং আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ স্কুলের প্রথম স্নাতকসম্পন্নকারী ছাত্রী।
জুডি হিউম্যান
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের “অগ্নি বিপদ” হওয়ার জন্য জুডি হিউম্যানকে যখন বাড়ি পাঠানো হয়েছিল, তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে পৃথিবীতে কতটা বিভেদ রয়েছে একে অন্যের সঙ্গে। সেসময়ই তিনি নিজের মনোবল শক্ত করে নিজের অক্ষমতাকে জয় করার সংকল্প করেন। নিউইয়র্ক সিটিতে তিনিই সর্বপ্রথম হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী নালী যিনি সেখানকার শিক্ষার বোর্ডে লাইসেন্স গ্রহণের জন্য আবেন করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তার আবেদন নাকচ করে দেন। জুডি পরবর্তীতে আদালতে বৈষম্যের অভিযোগে মামলা করেন। তিনি জানতে পারেন, তাৎক্ষণিক কোনো বিপদে হয়তো তিনি ছাত্রদের সাহায্য করতে পারবেন না। কারণ তিনি হুইল চেয়ারে সীমাবদ্ধ। এমন সন্দেহের কারণে তাকে কেবল অস্বীকার করা হয়েছিল। তবে শিক্ষা বোর্ড তার আত্মবিশ্বসে মুগ্ধ হয়ে তাকে শিক্ষিকা হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়া হলো। তিন বছরের জন্য কিনি শিক্ষকতার সুযোগ পেলেন। পরবর্তীতে জুডি যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী সেক্রেটারি হিসেবে শালীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ শিক্ষা ও পুনর্বাসনের কাজে নিযুক্ত হন। বর্তমানে তিনি আন্তর্জাতিক বিভাগের বিশেষ উপদেষ্টা হিসাবে স্টেট ডিপার্টমেন্টের হয়ে কাজ করেন।
ড. মায়া অ্যাঞ্জেলো
তার নামটি হয়তো আপনি জেনে থাকবেন! সম্ভবত আপনি জানেন না, তিনি শারীরিক অক্ষমতার সঙ্গে বড় হয়েছেন। লেখক মায়া অ্যাঞ্জেলু, একজন স্বণামধন্য লেখিকা। ছোটবেলায় মায়া তার মায়ের প্রেমিক কর্তৃক যৌন নির্যাতনের শিকার হন। যখন সে তার সম্পর্কে অভিযোগ আনেন উল্টো তাকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ধর্ষণের শিকার হওয়া ছোট্ট মেয়েটি মনে মেনে মরতে থাকে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন অ্যাঞ্জেলো। পাঁচটি বছর একবারে স্তব্ধ হয়ে যান তিনি। মুখ থেকে একটু সাড়া শব্দটি পর্যন্ত করার ক্ষমতা হারান তিনি। তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী কৃষ্ণাঙ্গ নারী যিনি তারিআত্মজীবনীকে পাঠ্যে পরিণত করেন।