দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চার গুণ পানের দাম আকাশচুম্বী
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাটের মানুষের আতিথেয়তায় পূর্ণতা আনতে খাবার শেষে পান অন্যরকম গুরুত্ব বহন করে। আর সে কারণে পান চাষে এ অঞ্চলের মানুষ অনেক এগিয়ে। মিষ্টি এবং ঝাল’র মিশ্রণের কারণে দেশজুড়ে রয়েছে এ অঞ্চলের পানের সুনাম। গত তিন মাস ধরে এ অঞ্চলের খুচরা বা পাইকারি মোকামগুলোতে রেকর্ডমূল্যে পান বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতিটি খিলি পান বিক্রি হচ্ছে পাঁচ থেকে দশ টাকায়। আর খুচরা বাজারে প্রতি পোন (৮০টি পান পাতা) পান বিক্রি হচ্ছে ৩শ টাকা পর্যন্ত।আমদানি কমের অজুহাতে পানের দাম বৃদ্ধি পায়, যা এখন অগ্নিরূপ ধারণ করেছে। দুই মাস আগে যে পান পাইকারি বাজারে ৪০ টাকা বিড়া (৭২টি) বিক্রি হতো, সে পান এখন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার যে পান ৬০ টাকায় বিক্রি হতো, সে পান এখন ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর দোকানিরা বিক্রির জন্য যে পান প্রতি বিড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকায় কিনত তা এখন ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এতে করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পানের দরও বেড়েছে ৩ থেকে ৪ গুণ। খুচরা পানের বাজারের চিত্র আরো ভয়াবহ। পাইকারি বাজারে যে পান চল্লি (৩৬ পিস) বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় তা খুচরা বাজারে প্রতি চল্লি ১০০ টাকা বা তার বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। আর বিড়া (৭২ পিস) বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা দরে। দাম বৃদ্ধির প্রভাব খুচরা বাজারে আরো বিরূপভাবে পড়ায় ক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে। অনেকে এরই মধ্যে কমিয়ে দিয়েছেন পান ক্রয় করা এবং খাওয়া।
পান ব্যবসায় সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, শীত ও কুয়াশার কারণে পানের ফলনে প্রতি বছর ব্যাপক ক্ষতি হয়। একদিকে পানের চাহিদা এবং অন্যদিকে যোগান কম থাকায় পানের বাজারের অস্থিরতা দেখা দেয়। যার প্রভাব পড়ে প্রায় বৈশাখ মাস পর্যন্ত। পান চাষিরা জানান, পানের বরজে (পানের বাগান) এখন বৃষ্টির পানি প্রয়োজন। বৃষ্টি হলেই পানের দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পানের যোগান কম থাকায় এ এলাকার সব থেকে বড় মোকাম শিরোমণি, ফুলতলা বাজার, সিদ্ধিপাশা বাজার, বারাকপুর বাজার এবং রূপসা কাজদিয়া বাজারের পান ব্যবসায়ীরা এখন অনেকটা বিরতি কাটাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের হিসেব মতে, খুচরা বাজারে প্রতিটি পান পাতা বিক্রি হচ্ছে ৩ টাকা ৭৫ পয়সায়।বাগেরহাট যাত্রাপুর বাজার এলাকার পান চাষি মোঃ আবুল কালাম জানান, ভালো মানের পানের প্রতি কুড়ি (৫,১২০টি) বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৬ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা, যা তিন মাস আগে ছিল ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা, মাঝারি বা ছোট মানের প্রতি কুড়ি পান বিক্রি হচ্ছে ৩২শ টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা, যা আগে ছিল ১ হাজার ৬শ টাকা।এ বিষয়ে বাগেরহাটের পাইকারি পান ব্যবসায়ী কালা সাহা বলেন, বর্তমানে যে পান বিড়াপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন, সে পানের দর ২ মাস আগে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। আর যে পান বিড়াপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সে পান ১০০ টাকায় বিক্রি হতো। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি চাহিদা থাকলেও আমদানি কমে যাওয়া এবং পরিবহন ব্যয় না কমাকে দায়ী করেন।
খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি এলাকার পান চাষি মোঃ শহিদ বিশ্বাস জানান, শীত এবং কুয়াশার কারণে পান নষ্ট হয়ে গেছে। এখনও কুয়াশা পড়ছে। তবে বৃষ্টির পানি পেলে নতুন পান গজাবে। তখন দাম কমে যাবে। এখন বরজে (পানের ক্ষেত) পান নেই। কিন্তু বাগান পরিচর্যায় খরচ কমছে না।
নগরীর জোড়াগেট মহাজের কলোনি এলাকার খুচরা পান বিক্রেতা মোঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, বাজারে পানের দাম বাড়লেও কাস্টমার বাড়তি টাকা দিতে চায়না। চার টাকায় কেনা একটা পানে সুপারি, জর্দ্দা, চুন দিয়ে পাঁচ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছেনা। সে কারণে ভালো মানের প্রতিটি খিলি পান বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। তাতে কিছুটা খরচ পুষিয়ে যায়।
নগরীর নিউমার্কেট এলাকার মোকাররাম বিল্লাহ জানান, একটি খিলি পান এখন বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকায়। কোথাও কোথাও ১০ টাকায়। এ অঞ্চলের মানুষ অধিকাংশই পান খেতে ভালবাসে। কিন্তু দিকে কারো কোনো খেয়াল নেই।
খুলনা এলাকার পানের বড় মোকাম ফুলতলা বাজার এলাকার ব্যবসায়ী মোঃ আরিফুর রহমান জানান, আমরা যেমন ক্রয় করি তার সাথে একটু লাভ রেখে বিক্রি করি। তবে এবছর একটু দাম বেশি কিন্তু তারপরও পানের মান তেমন ভাল না।খুলনা যশোর পানচাষি সমবায় সমিতি লিমিটেড’র সভাপতি এসএম সেলিম বাচ্চু জানান, শীত এবং কুয়াশার কারণে পানের ক্ষতি হয়েছে। সেসময় প্রতিটি চাষির ৮০-৯০ শতাংশ পড় (পান গাছ) মরে গেছে। এরমধ্যে যেসব চাষি বিভিন্নভাবে কিছু পান বাঁচাতে পেরেছে সেসব পান এখন বাজারে আসছে। যা এ অঞ্চলের মানুষের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে বাজারে পানের দাম আকাশচুম্বি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের করণীয় বিষয়ে আমরা এ এলাকার পানচাষিদের নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। তবে এপ্রিলের মধ্যে পানের দামে স্বস্তি ফিরে আসবে