একটি ভিন্ন ধারার ভালোবাসার গল্প- কুং-লুং অতঃপর
টবের পাতা বাহার গাছের তুলনামূলক অন্ধকার একটি পাতায় কুং এক মনে বসে আছে। দিনের বেশিরভাগ সময় তার কেটেছে উদাসীন ভাবে। অন্য কোন কাজে তার মন বসছে না। নর্দমার পাশের ড্রেনে আজ একটা পার্টি ছিল।
সেখানে আশেপাশের অনেক জ্ঞানী গুণী মশা-মশীর আসার কথা। কিন্তু এই পার্টিতেও তার যেতে মন চাইছে না। প্রতিমুহূর্তেই কুন এর চোখের সামনে শুধু একটি মুখ ভেসে উঠছে। তার চঞ্চল ভাবে একে-বেকে উড়ার দৃশ্য তার মনকে আরও উতলা করে তুলছে। দিন কয়েক আগে বড় রাস্তার পাশের নির্মাণাধীন বিল্ডিং এর জলের চৌবাচ্চার দেওয়ালে কুন সেই ললনা মশীকে দেখেছে।
তার এই বয়সে অনেক মশীই তার আশেপাশে এসেছে সঙ্গ পেতে চেয়েছে কিন্তু কখনই কুং তাতে কোন আকর্ষণ অনুভব করেনি। যেচে অনেক মশীয় তাকে প্রেম প্রস্তাব দিয়েছে কিন্তু কুং এর মন তাতে এক বিন্দু সায় দেয় নি। নাম না জানা, পরিচয়হীন এক মশী, এক মুহূর্তের জন্য তার চোখে দেখা দিয়েই তার সাজানো জীবনটাকে এলোমেলো করে দিল। এখন কুং এর ঘুম নাই, গাছের পাতার রসও তার এখন আর ভাল লাগছে না। ফুলের পরাগ খেতেও সে ওড়ে না। অন্য কোন সঙ্গও তার মনকে নাড়া দিতে পারছে না।
তার শুধু মন চাইছে সেই চৌবাচ্চার কাছে যেতে। যদি সেখানে সে আবার সেই রমণী মশীকে দেখতে পায়। সে তার অন্য সখী মশীদের সাথে চঞ্চল ভাবে কখনও চৌবাচ্চার বন্ধ পানির উপর গিয়ে বসছিল, আবার কখনও নীচের ড্রেনের স্যাঁতসেঁতে দেওয়ালে বসে দুই পাখায় নিজের হুল পরিষ্কার করছিল। কুং যে দূর থেকে এক দৃষ্টিতে তার সব কর্মকাণ্ড দেখছিল তা সেই রমণী মশী কিছুতেই বুঝতে পারেনি। কুং চোখ বন্ধ করলেই তার কানে ভেসে আসছে সেই মশীর পাখা নাড়াবার মধুর শব্দ।
এদিনও গাছের পাতার আড়ালে বসে কুং এক মনে সেই মশীর কল্পনা করছিল। হঠাৎ অন্য মশা-মশীদের চিৎকার আর শোরগোলে তার মধুর কল্পনা ভেঙে যায়। কুং বুঝতে পারছে না দিনের এই বেলায় অন্য মশারা দিকবেদিক ছুটোছুটি করছে কেন? পাতার আড়াল থেকে সে মুখ বের করে বিষয়টি বুঝার চেষ্টা করল।
ঝং নামে তার এক বন্ধু উড়তে উড়তে তাকে জানাল, পাশের বনে ও ড্রেনের ধারে মানুষ বিষাক্ত ধোঁয়া নিক্ষেপ করছে। ঐ সব এলাকার মশাদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ধোয়া থেকে বাঁচতেই তারা এই দিকে আসছে। কুং আত্মকেন্দ্রিক ভাবে আবার নিজেকে পাতার আড়ালে লুকতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই তার চোখ পড়ল একটু দূরের একটি মশীর উপর। যে চোখ সে খুঁজছে, যে পাখার শব্দ তাকে পাগল করে দিয়েছে, সেই মশীই অত্যন্ত কষ্টে উড়তে উড়তে এই দিকে আসছে। কুং লক্ষ্য করল তার পাখা টলছে। ধোয়াতে সেই মশীর দম আটকে যাচ্ছে। যাদের সাথে সে উড়ছিল সে তাদের হারিয়েছে। কুং দেখল তার পাখার ঝাপটানি প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
সে শূন্য থেকে নীচের ড্রেনের জলের ভেতরে পড়ে যাচ্ছে। কুং আর নিজেকে স্থির রাখতে পারল না। নিজের সর্বস্ব জোর দিয়ে উড়ে সেই মশীর হাত ধরে ফেলল। মশীটি চোখ বন্ধ করার আগে শুধু দেখল, অন্য এক পুরুষ মশা, পরম যতেœ তাকে জড়িয়ে ধরেছে। মশীটি কানে ভেসে এলো কুং এর ডানা ঝাপটানির শব্দ।
দুই
মানুষের খাটের নীচে দুই ডাসার মাঝে কুং এর ঘর। খুব পরিপাটি করে সাজানো এই স্থানে সে বাস করে। কুং এর প্রথম প্রেম এই রূপসি মশী কাকতালীয় ভাবে অচেতন অবস্থায় তার ঘরেই শুয়ে আছে। হারানো জিনিস খুঁজে পেয়ে বুক থেকে তার পাথর নেমে গেছে। আনন্দে আত্মহারা সে।
কুং পাশে বসে এক দৃষ্টিতে সেই মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। সে আবিষ্কার করল, কি মায়ায় ভার সেই কালো দুটো চোখ। সেই রমণীর আকর্ষণীয় হুলটি অপেক্ষায় আছে কুং এর হুলের ছোঁয়া পাবার জন্য।
কুং এরও ইচ্ছা করছে সেই হুলে নিজের হুলটি ছোঁয়াতে কিন্তু নৈতিকতায় বাধায় সে তা করতে পারল না। পুরো পৃথিবীতে তিন হাজারের বেশি মশার প্রজাতির মধ্যে কুং এর মন এই মশীতেই আটকে গেল। কুং বুঝতে পেরেছে এই মশীকে ছাড়া সে বাঁচবে না। প্রথম দেখায় যে প্রেম হয় সেই প্রেম ভুলা মোটেও সহজ না।
কতটুকু সময় সে অপ-লোক চোখে তার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল তা হিসাব কুং রাখতে পারেনি।
অচেতন শরীরটা হঠাৎ নড়ে উঠল। মৃদু চোখে তাকাল সে। কুং পরম আবেগে তার আরও কাছে এসে বসল। সেই মশীকে যতœ সহকারে ধরে বসিয়ে দিল সে।
কুং বলল, আস্তে আস্তে। এখন কেমন লাগছে? এখানে আপনাকে ধোয়া কিছু করতে পারবে না।
এটা আমার ঘর। আমার নাম কুং। এখন আপনার কোন ভয় নেই। এই গাছের পাতার রসটা একটু খেয়ে নিন। তা হলে গায়ে জোর পাবেন।
রমণী মশী কোন কথা না বলে রস টুকু খেয়ে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইল। পর মুহূর্তেই তার সব মনে পড়ে গেল। জ্ঞান হারাবার আগে এই পুরুষটিই তাকে আগলে ধরেছিল।
সে তাকে না ধরলে ড্রেনের রাতে ডুবে যেত সে। নতুন জীবন ফিরে পেয়ে পরম কৃতজ্ঞতায় কুং এর দিকে তাকিয়ে সে বলল আমি লুং। এখন আমার অনেক ভাল লাগছে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
কুং মনে মনে বলল, এই রূপসির নাম তবে লুং। সত্যিই নামের সাথে রূপের দারুণ মিল রয়েছে। কি জানি অন্য কোথায়ও লুং নিজের মন দিয়ে রেখেছে কি না? কুং এর এসব ভাবনার ভিতরেই লুং উঠে বসতে যাচ্ছিল।
সাথে সাথে কুং বলে উঠল- থাক থাক উঠতে হবে না। আপনি এখানে বিশ্রাম নিন। সুস্থ হলে আমি নিজে আপনাকে বাড়ি পৌচ্ছে দিয়ে আসবো। শুনেছি আপনাদের এলাকার ধোয়ার ঝাঁজ শেষ হতে একটু সময় লাগবে।
লুং নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, আপনাকে আমি বেশ ঝামেলায় ফেলে দিলাম। আমার জন্য আপনার কত কষ্ট হচ্ছে।
কুং বলল, কি যে বলেন কষ্ট হবে কেন? আমার একা জীবন। একাই এখানে থাকি। টবের বন্ধ জলে আমার জন্ম। শৈশব কেটেছে পাশের ঝোপে। যৌবনে পা দিতেই এখানে চলে আসি।
এই বাড়ির বারান্দায় রকমারি গাছের পাতার রসে নিজের দিব্যি চলে যায়। আমি কিন্তু আপনাকে চিনি। যদিও আপনি মনে হয় আমাকে চেনেন না।
একথা শুনেই লুং বলল, আপনি আমাকে চেনেন? কিন্তু কি ভাবে?
কুং জানাল, কয়েক দিন আগে আপনাকে আমি চং পাড়ায় চৌবাচ্চার পানিতে অন্যদের সাথে দেখেছি। আপনি সেখানে ছোটাছুটি করছিলেন। লুং একমনে ভেবে বলল, চং এর চৌবাচ্চায়? সেখানে আমার এক আত্মীয় ডিম পেড়েছিল।
আমি সেখানে তাদের নতুন ডিম গুলো দেখতে গিয়েছিলাম। আপনার তো মুখ মনে রাখার ক্ষমতা প্রখর।
একথা শুনে কুং হাসি দিয়ে বলল, সব মুখ-কি মনে রাখা যায়? যে মুখ মনে দাগ কাটে সেই মুখই মনে চিরকালের জন্য নিজের স্থান তৈরি করে নেয়।
কথাটা শুনেই লুং এর মুখখানা লজ্জায় লাল হয়ে গেল।
তিন
কু ও লুং এর সম্পর্কটা গড়িয়েছে বেশ কদিন হল। এখন তারা আপনি থেকে তুমিতে চলে এসেছে। দুজনে সারাদিন গাছের পাতায় পাতায় উড়ে বেড়ায়। কুং প্রতি সেকেন্ডে ৩০০ থেকে ৬০০ বার নিজের ডানা নাড়িয়ে লুংকে গান শোনায়। নির্বাক শ্রোতা হয়ে লুণও মন দিয়ে সেই গান শোনে। একটি মুহূর্ত দু’জন দুজনকে ছাড়া থাকতে পারে না। নিভৃতে দু’জন দু’জনের হুলে ছুঁয়ে দেয় প্রেমের পরশ।
লুং লজ্জায় পাখা দিয়ে নিজের হুল ঢাকলে কুং ভালোবাসার অধিকারে সেই পাখা সরিয়ে দেয়। চোখে চোখ রেখে আবার হুলে হুল মেশায়। দু’জনে বারো পা ছড়িয়ে পাতায় পাতায় ভালোবাসার আল্পনা আকে। একটু সুযোগ পেলেই দু’জনে ঘন ঝোপঝাড়ের আশেপাশে অন্ধকার বা ভ্যাপসা জায়গা ঘুরতে চলে যায়। একান্তে সেখানে দু’জন সময় কাটায়। একজন আরেক জনের কানে প্রেমের গোপন কথা বলে।
আজ কুং নিজেকে অন্য দিনের তুলনায় একটু বেশি গুছিয়ে লুংকে নিয়ে মেহেদি পাতার ঝোপে বেড়াতে এসেছে। অনেক কথা বলার পরে কুং নিজের হুলটি একটি মেহেদি পাতায় পুরে দিয়ে খানিকটা রস বের করে লুং এর হুলে লাগিয়ে দিয়ে বলল, তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে? লুং এর কানটাও যেন এই কথা শুনার জন্য অস্তির হয়ে ছিল। সেও একটা মেহেদি পাতায় নিজের হুল লাল করে কুং এর হুল রাঙিয়ে দিয়ে নিজের সম্মতি জানিয়ে দিল।
কুং আনন্দে কয়েক পাক উড়ে লুং এর কাছে এসে বলল আর কদিন পরেই আম গাছে মুকুল আসবে। মৌ মৌ গন্ধে ছেয়ে যাবে আশপাশ। সেই আমের মুকুলের মাঝে আমাদের বাসর হবে। লুং আর কোন কথা না বলে কুং এর বুকে নিজের মুখ লুকাল।
চার
আজ বেশ সমারোহে কুং ও লুং এর বিয়ে। আশে পাশের সব মশা-মশীর দল বেধে তাদের বিয়েতে এসেছে। রাস্তার পাশের বড় আমগাছের মুকুলে মাঝে চলছে বিয়ের উৎসব। পড়ন্ত বেলার সূর্য প্রায় ঢেকে গেছে মশার দলের আড়ালে। জি…ম… শব্দে দলীয় গানে সবাই নতুন দম্পতিকে অভিভাবক জানাচ্ছে।
কুং ও লুং হাসি মুখে একটি মুকুলের মাঝে বসে আছে। নতুন দম্পতিকে নানা জন নানান আশীর্বাদ করছে। বয়স্ক মশী ঝং এসে লুং কে আশীর্বাদ করল তিন হাজার ডিম পাড়ো। মানুষের কোন বাধাই যেন তোমাদের বংশ বিস্তারে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে। এই আশীর্বাদেই লুং লজ্জার হাসি দিয়ে মাথা নিচু করল।
একে একে সবাই বিদায় নীল। কাছের বন্ধুরা নতুন জুটিকে বাসর ঘরে পৌচ্ছে দিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান হল।
একান্তে কুং নতুন বধূকে কাছে পেয়েই আলতো করে হুলে হুল ছুঁয়ে দিল। লুং ও আর নিজেকে লুকিয়ে রাখল না। আমের মুকুলের গন্ধে কুং এবং লুং হারিয়ে গেল সৃষ্টির খেলায়।
পাঁচ
মানুষের বাড়ির বন্ধ জলে লুং তিনশোটি ডিম পেড়েছে। কুং সেই খুশিতে বা-রেবারে লুংকে বুকে জড়িয়ে ধরে। কুং উড়ে উড়ে প্রতিটি ডিমের উপরে বসে আর বলে, কিরে তোরা সবাই কেমন আছিস? লুং শুধু স্বামীর উচ্ছ্বাস দেখে আর হেসে কুটি কুটি হয়। একপর্যায় লুং স্বামীকে থামিয়ে দিয়ে বলে, এই ডিম গুলো ফোটাতে তো দরকার হিমোগ্লোবিন। তার জন্যতো মানুষের রক্ত চুষে আনতে হবে।
ডিমগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে এখন তাজা রক্ত লাগবে। কুং বলে উঠল, কিন্তু রক্ত আনতে গিয়ে তোমার যদি কিছু হয়? তখন কি হবে? লুং বলল, তুমি ও নিয়ে ভেবো না। এখন ঠিকমতো রক্ত সরবরাহ করতে না পারলে ডিমগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। আমি চাই-না আমাদের সন্তানদের কিছু হোক। তুমি দেখ আমার কিছুই হবে না।
কুং করুন ভাবে বলে উঠল, তুমি কি জানো মানুষের রক্ত কি ভাবে চুষতে হয়? লুং বলে উঠল, আমরা নারী জাতি। প্রাকৃতিক ভাবেই অনেক কিছু জানতে পারি। এর জন্য আলাদা করে কিছু শিখতে হয় না।
তার পরেও আমি তোমাকে বলছি, শোন। প্রথমে আমি একটা টার্গেট ঠিক করব। তারপরে সেখানে বসে ও আশপাশটা দেখে ঠিক করব, কোথায় আমি হুল ফোটাব। তারপরে চোয়াল দিয়ে ঘষে ঘষে ওখানকার চামড়াটা কেটে ফেলব। অনেকটা করাত দিয়ে কোন কিছু কাটার মতো।
কি বুঝতে পারছ? এরপর সেই কাটা স্থান দিয়ে হুল ঢুকিয়ে রক্তনালী, মানে মানুষের ধমনি-শিরা-উপশিরা খুঁজতে থাকব। কোনও রক্তনালী পেয়ে গেলে তো হয়েই গেলো, হুলটা দিয়ে চোঁ চোঁ করে রক্ত চুষে আমার সোনামনিদের জন্য নিয়ে আসবো।
কুং প্রিয়তমার হাত ধরে বলে উঠল, কিন্তু আমার যে ভয় হয়। মানুষ আমাদের মারতে ঘরে কোয়েল জ্বালিয়ে রাখে, স্প্রে বা নানান বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করে। ঘুমানোর সময় মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমায়। এতো সাবধানতার মধ্যেও তুমি কীভাবে মানুষের রক্ত আনতে পারবে?
লুং সান্ত্বনা দেয়, এতো চিন্তা করলে কি চলে? দেখ আমার কিছুই হবে না। আমাদের ভালোবাসার নিদর্শন এই ডিম গুলো ফোটাবার জন্য আমাকে যে যেতেই হবে। কান পাতলেই আমি শুনতে পারছি ডিম গুলোর ভিতর থেকে আমার সোনারা আমাকে মা মা করে ডাকছে। কুং আর কোন কথা বলতে পারে না, এক অজানা আতঙ্কে তার মুখ শুকিয়ে যায়।
ছয়
উড়ে মানুষের কাছাকাছি লুং চলে এসেছে। ঘরের কোনে বসে সে নিজের টার্গেট ঠিক করছে। পাশেই কুং বসে লুং এর মনোবল বাড়াচ্ছে। এদিকে সেই বন্ধ জলে তিন-শত সাদা ডিম তাদের বাবা-মার জন্য অপেক্ষা করছে। লুং নিজের ৪৭ টি দাঁত এর মাঝে হুলটি শূন্যে দু’বার ঘুরিয়ে শানিয়ে নীল। কুং আবেগে লুংকে জড়িয়ে ধরল বুকে। লুং স্বামীর চোখের আড়ালে দু’ফোটা অশ্রু মুছে লক্ষের দিকে উড়াল দিল।
কুং দূর থেকে এক দৃষ্টিতে লুং এর দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষের হাতের বাহুতে লুং বসে রক্ত চুষছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তার পেট ভরে যাবে। হাসি মুখে পৃথিবীর মুখ দেখতে পাবে নতুন শাবকেরা।
মানুষের একটু নড়াচড়াতেই কুং এর বুক ধড়ফড় করে উঠছে। সময় যেন তার কাছে থেমে গেছে। কিছুতেই সময় তার শেষ হচ্ছে না, নিজের বুকের কম্পন নিজেই শুনতে পারছে কুং।
লুং রক্ত চোষার মাঝেই স্বামীর দিকে তাকিয়ে বিজয়ের একটি হাসি হাসল। রক্ত চোষা প্রায় শেষ। এখন সে উড়াল দেবে। ঠিক তখনই মানুষের অন্য একটি হাত উড়ে এসে মুহূর্তেই লুংকে পিষ্ট করে দিল।
মানুষের শরীরে লেগে থাকল লাল রক্তের রেখা। চোখের পলকেই এই ঘটনা ঘটার পরে কুং আত্মচিৎকার দিয়ে লুংকে ডাকল, লুং তুমি কোথায়? কিন্তু কোথাও লুং এর আর কোন সাড়া পাওয়া গেল না।