পুলওয়ামা হামলা : পাকিস্তানকে কী করতে পারে ভারত
ভারতশাসিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় ৪০ জনেরও বেশি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা রক্ষী নিহত হওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হুঁশিয়ার করেছেন, হামলার জন্য দায়ীদের চড়া মাসুল দিতে হবে। ভারত সরকার ওই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানকে কীভাবে সমুচিত জবাব দেয়া যেতে পারে তা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। সেই সঙ্গে রয়েছে জনমতের চাপ আর রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা।
কিন্তু ভারতের সামনে জবাব দেয়ার মতো বিকল্প কী কী রয়েছে-সম্ভাব্য এসব বিকল্প পদক্ষেপ জানাতে চেষ্টা করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। শনিবার সংবাদমাধ্যমটির বাংলা অনলাইন সংস্করণে জানানো হয়েছে, বিকল্প এসব পদক্ষেপের মধ্যে কূটনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে পাল্টা জবাব দেয়া।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যেসব বিকল্প আছে, তার কোনোটাই খুব সহজ হবে না ভারতের পক্ষে।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী বিবিসিকে বলেছেন, পাকিস্তানের মতো পারমাণবিক শক্তিধর কোনো দেশের বিরুদ্ধে চরম কোনো পথ নেয়া কঠিন সিদ্ধাস্ত।
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে শাসকপক্ষের ওপরে বিরোধীপক্ষর যথেষ্ট যেমন চাপ আছে সত্য তেমনই জনমতও তৈরি হয়েছে যে এই হামলার জবাব দেয়া দরকার। সেদিক থেকে মনে হয় সামরিক বিকল্পের দিকেই ভারত ঝুঁকবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সে রকম জবাব আবারও পাল্টা আঘাত টেনে আনবে কি না! কারণ দুটোই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ।’
অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরী মনে করেন, যেভাবে আত্মঘাতী হামলা হয়েছে, সেই একই পথে জবাব দেয়া কি না, তা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত ভারত সরকারের। তিনি বলছেন, কূটনৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক আর সামরিক-এই চারটে বিকল্পই আছে, যেগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এর বাইরে আরও একটা পদ্ধতি আছে, যেটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে উচিৎ পথ বলে মনে করি-নন স্টেট অ্যাক্টর্সদের (রাষ্ট্র নয় এমন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী) ব্যবহার করা হোক। যেভাবে পাকিস্তান থেকে আত্মঘাতী হামলা হচ্ছে, সেই একইভাবে এদিক থেকেও জবাব দেয়া হোক।
জেনালের রায় চৌধুরী মনে করেন, সরাসরি সামরিক বাহিনী বা কোনো সরকারি এজেন্সিকে যুক্ত না করে রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে নেই-এমন সব এলিমেন্ট ব্যবহার করে শায়েস্তা করার কথা ভারতের ভাবা উচিত। যদিও এ রকম কাজে পশ্চিমা দেশগুলো হয়তো ভারতকে সমর্থন করবে না, তবুও এই একটা বিকল্প নিয়ে ভাবা যেতে পারে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ায় জঙ্গিবাদ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্ত থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্টের পরিচালক অজয় সাহনীর মতে, হুট করে পাল্টা কোনো জবাব কোনো কাজেই আসবে না। তিনি মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ছাড়া কোনো বিকল্প ভারতের নেই।
সাহনীর ভাষ্য, যেসব বিকল্প নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেগুলো সবই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা। একটা হামলার প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভাবা হচ্ছে, কিন্তু কৌশলগত পদ্ধতি নিয়ে কারও ভাবনা নেই। একটা হামলা হয়েছে, কীভাবে তার পাল্টা জবাব দেয়া যায়-সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলা এভাবে করা যায় না। যখনই একটা বড় ধরনের হামলা হয়, তখনই এসব চিন্তাভাবনা শুরু হয়। কিন্তু প্রশ্নটা হলো এর আগের হামলা আর এই হামলার মাঝের সময়টাতে কী করা হলো? সামরিক ব্যবস্থাপনা বা গোয়েন্দা ব্যবস্থায় কী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?’
‘গতবছর মার্চে প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি রিপোর্ট দিয়েছিল যে সামরিক বাহিনীর ৬৮ শতাংশ সরঞ্জাম বহু পুরনো, সেকেলে। এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে ১০ দিন পর্যন্ত লড়াই করার গুলি বারুদ মজুদ রয়েছে ভারতের। যদি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না নেয়া হয়, তাহলে এভাবেই একেকটা হামলা হবে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মারা যাবেন আর সবাই ভাবতে বসবে কীভাবে পাল্টা জবাব দেয়া যায়!’-যোগ করেন এই থিঙ্কট্যাঙ্ক।