নেশার জগতে সাতক্ষীরার হাজার হাজার শিক্ষার্থী !
সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন অভিভাবক তাদের সন্তানদের ব্যবহৃত ট্যাবলেটের খালি পাতা নিয়ে রোববার সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিকার চাইতে আসেন। তাদের কাছে ছিল কয়েক শত ট্যাবলেটের খালি পাতা। এ সময় তারা তাদের সন্তানদের শারীরিক অবস্থার বর্ননা দিতে গিয়ে বলেন এ ট্যাবলেট খেতে বাধা দেওয়ায় তারা আত্মঘাতি হয়ে উঠতে পারে বলে আশংকা করেন।
সাতক্ষীরার পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘিরে অনুসন্ধান চালিয়ে নেশার ট্যাবলেট গ্রহণের নানা তথ্য পাওয়া গেছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বর্জ্য স্থানে পড়ে থাকতে দেখা গেছে বিপুল সংখ্যক ট্যাবলেটের খালি পাতা। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা এসব তথ্য জানালেও আসক্ত ছাত্রছাত্রীরা তা অস্বীকার করেছে। এ প্রসঙ্গে তারা বলেছে নেশার জন্য নয় , লেখাপড়ার কারণে তাদের ঘুম আসে না। তাই ঘুমের জন্য এবং শাররিক ক্লান্তি দুর করার জন্য তারা এমন সব ট্যাবলেট খেয়ে থাকে। তবে অভিভাবকদের দাবি তাদের ছেলেমেয়েরা আসক্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু তা জেনেও তার ওপর কঠোর আচরন করতে পারছেন না তারা।
অনুসন্ধানে জানাগেছে ছাত্র ছাত্রীরা ছয় ধরনের ট্যাবলেট ব্যবহার করছে। এর মধ্যে রয়েছে মাইলাম ৭.৫,সিন্টা ৫০,পেন্টাডল ৫০,ডর্মিকাম ৭.৫, ডিসোপান ২,ট্যাপেন্টাডল ৫০। ইংরাজী ভাষায় ওষুধগুলির নাম MILAM 7.5,SYNTA 50,PENTADOL 50,DORMICUM 7.5, DISOPAN 2,TAPENTADOL 50 । ভুক্তভোগী অভিভাবকরা সংগ্রহে রেখেছেন এসব ট্যাবলেটের খালি পাতা। সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের দফতরে নিয়ে আসা হয় এসব পাতা।
ভুক্তভোগী অভিভাবকরা জানান, তারা এ বিষয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছেন দীর্ঘদিন এসব ট্যাবলেট খেলে তাদের সন্তান মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে । তাদের ছেলেমেয়েরা দৈনিক এক সাথে ৭/৮ টিরও বেশি ট্যাবলেট খেয়ে ফেলে। কয়েক বান্ধবী এক সাথে তা খেয়ে ফেলে। বাধা দেওয়ায় তারা আত্মহননের হুমকি দেয়। বাসা বাড়িতে বসে সবার সামনেই এসব ট্যাবলেট গ্রহণ করে তারা। এতে তাদের হত্যাশা দুর হয, ভাল ঘুম হয়, বলে দাবি তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সাতক্ষীরা শহরে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, সিটি কলেজ , দিবা নৈশ কলেজ এবং সরকারি পলিটেকনিক কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩০ হাজারের কম নয়। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী মেয়েদের ৫০ শতাংশ এই নেশার জগতে ঢুকে গেছে। ছাত্রদের মধ্যে এই ট্যাবলেট গ্রহণের পরিমান অপেক্ষাকৃত কম লক্ষ্যনীয়। বিশেষ করে যারা গ্রাম এলাকা থেকে সাতক্ষীরায় এসে ভাড়া বাড়ি করে কিংবা মেসে অবস্থান করে লেখাপড়া করে তাদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি লক্ষ্যনীয় হয়ে উঠেছে। তারা অভিভাবকদের কাছ থেকে নিয়মিতভাবে টাকা নিচ্ছে। সেই টাকায় কিনছে এসব ট্যাবলেট। রাতে ঘুম হয়না এমন যুক্তি দেখিয়ে বাবা মার চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা এসব ট্যাবলেট ব্যবহার করে নিজেদের শেষ করে দিচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় অভিভাবকরা তাদের নিয়ে যাচ্ছেন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার সব কিছু জেনে বুঝে ওষুধও দিচ্ছেন। একই সাথে এসব ট্যাবলেট ব্যবহার না করার পরামর্শ দিলেও তারা তা মানছে না।
এদিকে সাতক্ষীরা শহরের সব ফার্মেসীতে চিকিৎসকের কোনো প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এসব ট্যাবলেট বেচাকেনা হচ্ছে। এতে ট্যাবলেট সহজলভ্য হওয়ায় ছেলেমেয়েরা তা গ্রহন করছে। অভিভাবকরা এভাবে ট্যাবলেট বিক্রির ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা দাবি করেছেন।
জানতে চাইলে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন,এসব ট্যাবলেট , ঘুম , ব্যথা নাশক এবং শারীরিক উপশমের জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এক নাগাড়ে দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে তা তার জীবনের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তিনি প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধ বিক্রি অপরাধ জানিয়ে বলেন এ ব্যাপারে সরাসরি আমাদের নজরদারি করা জরুরি হয়ে পড়েছে।