সিরাজগঞ্জে দেশের সবচেয়ে বড় নবরত্ন মন্দির
বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলায় অবস্থিত প্রায় পাঁচশ’ বছরের পুরোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির৷ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল ইউনিয়নে এর অবস্থান৷
সবচেয়ে বড় নবরত্ন মন্দির
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নবরত্ন মন্দির এটি৷ উঁচু একটি বেদীর উপর নবরত্ন পরিকল্পনায় নির্মিত মন্দিরের প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ১৫ দশমিক ৪ মিটার এবং প্রস্থ ১৩ দশমিক ২৫ মিটার৷
পোড়া মাটির অলঙ্করণ
হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দিরে চারপাশের দেয়ালে রয়েছে নানা রকম পোড়ামাটির অলঙ্করণ৷ এসব অলঙ্করণে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানান দেব-দেবীর মূর্তি, লতা-পাতা, ফুল ইত্যাদি৷
নির্মাণ শৈলী
তিনতলা এই স্থাপনার উপরের রত্ন বা চূড়াগুলো প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে৷ মূল মন্দিরের বারান্দায় সাতটি এবং ভেতরের দিকে পাঁচটি প্রবেশপথ আছে৷ দ্বিতীয় তলায় কোনো বারান্দা নেই৷ মন্দিরের নির্মাণের সময় সম্পর্কিত কোনো শিলালিপি পাওয়া যায়নি৷ আনুমানিক ১৭০৪ থেকে ১৭২৮ সালের মধ্যে নবাব মুর্শিদকুলি খানের শাসনামলে এটি নির্মিত হয়েছিল৷
নির্মাতা
রামনাথ ভাদুরী নামে জনৈক তহসিলদার এটি নির্মাণ করেন বলে জানা যায়৷ তবে অনেকের মতে, রামনাথ জামিদার ছিলেন৷ রাখাল জমিদার নামেও তাঁর পরিচিতি ছিল বলে জনশ্রুতি আছে৷
কান্তজিউ মন্দিরের মতো
জনশ্রুতি আছে, দিনাজপুরের রাজা প্রাণনাথ রায় কান্তজিউ মন্দির নির্মাণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে সংকটে পড়েন৷ ফলে বছরের রাজস্ব পরিশোধ করতেও ব্যর্থ হন৷ সেই সময় তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন বন্ধু রামনাথ ভাদুরী৷ নিজ কোষাগারের অর্থ দিয়ে রাজা প্রাণনাথের বকেয়া শোধ করে দেন তিনি৷ তবে এই অর্থ ফেরতের শর্ত হিসেবে দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দিরের মতো একটি একটি মন্দির নির্মাণের অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি৷
শিব-পার্বতী মন্দির
হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দিরের আশপাশে আরো তিনটি ছোট মন্দির রয়েছে৷ নবরত্ন মন্দিরের উত্তর পাশে আছে শিব-পার্বতী মন্দির৷
চণ্ডি মন্দির
শিব-পার্বতী মন্দিরের একটু পশ্চিমে রয়েছে দোচালা আকৃতির একটি মন্দির৷ এর নাম চণ্ডি মন্দির৷
শিব মন্দির
হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির লাগোয়া পুকুরের পশ্চিম পাশে আছে ছোট একটি শিব মন্দির৷ বাইরের চারপাশের দেয়ালে পোড়া মাটির অলঙ্করণে শোভিত এ মন্দিরটিও খুব সুন্দর৷
সংরক্ষিত পুরাকীর্তি
হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দিরসহ এখানকার সবগুলো মন্দিরই বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে স্বীকৃত৷ এগুলোর দেখভালও করে থাকে সরকারের এই সংস্থা৷