সম্পাদক হত্যা ও কারাগারে হামলার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের’
কারাগারে থাকা আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) প্রধান নেতা জসিম উদ্দিন রহমানীকে মুক্ত করতে না পারলে কারগারে হামলার পরিকল্পনা ছিল এবিটির সদস্যদের। সেই সঙ্গে একটি জাতীয় দৈনিকে বিবাহ সংক্রান্ত হাদিস নিয়ে কটুক্তি করায় ওই পত্রিকার সম্পাদককে হত্যার পরিকল্পনাও করেছিল জঙ্গিরা।
শুক্রবার সকালে কাওরান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান। এসময় তিনি বলেন, সম্পাদককে হত্যার চূড়ান্ত পথে যাওয়ার আগেই এই চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত জঙ্গিরা হলেন- মো. শাহরিয়ার নাফিস ওরফে মোঃ আম্মার হোসেন (২০), মো. রাসেল ওরফে সাজেদুল ইসলাম গিফারী (২৪), মো. রবিউল ইসলাম ওরফে নুরুল ইসলাম (২৪) ও মো. আব্দুল মালেক (৩১)। এসময় তাদের কাছ থেকে উগ্রবাদী বই, মোবাইল ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি আশুলিয়া এলাকা থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য মো. আব্দুস ছোবহান ওরফে হাবিব (২৮) কে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে রাজধানীর উত্তরা থেকে সম্পাদককে হত্যা পরিকল্পনায় থাকা ওই চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
জঙ্গিদের বরাত দিয়ে মুফতি মাহমুদ বলেন, বর্তমানে গোপনে তারা সংগঠনকে উজ্জীবিত করার কাজ করছে। তাদের অন্যতম পরিকল্পনা ছিল- সংগঠনের প্রধান জসিম উদ্দিন রহমানীকে কারাগার থেকে মুক্ত করা। যদি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নেতাকে মুক্ত করতে না পারে, তাহলে কারাগারে হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। জসিম উদ্দিনকে মুক্ত করতে এরইমধ্যে তারা অর্থ সংগ্রহও করেছে। এই অর্থের একাংশ গ্রেফতারকৃত রাসেলের কাছে জমা ছিল বলেও জানান র্যাব মুখপাত্র।
গ্রেফতারকৃতদের পরিচয় সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রেফতার শাহরিয়ার বগুড়ার ধনুট উপজেলার বিভিন্ন মাদরাসায় ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। এরপর ফেসবুকে এবিটির সক্রিয় সদস্য আমানের সাথে পরিচয় হয়। এরই সূত্র ধরে শাহরিয়ার এবিটিতে যোগ দেয়। এরপর আমানের নির্দেশে সে ৪-৫টি ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করে প্রচার প্রচারণা চালান এবং জঙ্গি সদস্য সংগ্রহ করতে থাকে। এভাবে সে সাত আটজনকে এবিটিতে যুক্ত করে। সে এবিটির টার্গেট কিলিং মিশনের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনলাইনে বিভিন্ন এ্যাক্টিভিস্টদের নজরদারির কাজও করে।
ওই ধারাবাহিকতায় গ্রেফতারকৃত শাহরিয়ার ছদ্মবেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি এ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপে ঢুকে পড়ে। এরপর সংগঠনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপের এক সদস্যকে হত্যার পরিকল্পনা করে। উক্ত মিশনে গ্রেফতারকৃত শাহরিয়ার ও অপর দুই সদস্যকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এ উদ্দেশ্যে গত সপ্তাহে ঢাকা থেকে একজন ধারালো অস্ত্রসহ এবং অপর একজন বরগুনা থেকে বগুড়া যায়। সেখানে পৌঁছে তারা অনলাইনে ফোন করে ওই এ্যাক্টিভিস্টকে সাক্ষাত করতে বলে। কিন্তু ওই ব্যক্তি সাক্ষাত না করায়, মিশনটি সম্পন্ন হয়নি।
গ্রেফতারকৃত মো. রাসেল সাজেদুল ইসলাম গিফারী ভোলার ফুলকাছিয়া গ্রাম থেকে ২০১৩ সালে এসএসসি পাশ করে গামেন্টর্সে চাকরি করে। তখন সে ফেসবুকে উগ্রবাদী পোস্ট ও ভিডিও দেখত এবং অন্যদের সঙ্গে এনিয়ে আলোচনা করত। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি ফেসবুকের মাধ্যমে উল্লেখিত গ্রুপের নিয়ন্ত্রক আমানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সে সূত্রে আমান তাকে জঙ্গি সংগঠনে যোগদানে উদ্বুদ্ধ করে। সে ছদ্মবেশে একটি কনস্ট্রাকশন ফার্মে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিল। সে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একাংশের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করত। আমানের নির্দেশনায় রাসেল বিভিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ, অর্থ ও সদস্য সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করে আসছিল।
অন্যদিকে নুরুল ইসলাম ২০১০ সালে দাখিল পাস করে। তারপর সে বগুড়া পলিটেকনিকে ভর্তি হয়ে ২০১৫ সালে ডিপ্লোমা ডিগ্রি সম্পন্ন করে। নুরুল ২০১৮ সালে শাহরিয়ারের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেয়। অপর জঙ্গি মোঃ আব্দুল মালেক পেশায় একজন প্রাইভেট গাড়ি চালক। সে ২০১৮ সালে রাসেলের মাধ্যমে একই গ্রুপে যুক্ত হয়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান র্যাব মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান।