‘শুধু কেনাবেচা নয়, বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাঙালির ইতিহাস ত্যাগের ইতিহাস, আর এটাই আমাদের অর্জন। বইমেলা শুধু কেনাবেচা নয়, বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা।

শুক্রবার বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় এ আয়োজনের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৮ সালে ভাষার জন্য আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের পথ ধরে আমাদের স্বাধিকার আদায়। একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা করার উদ্যোগ আমাদের সরকারের আমলেই নেয়া হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের মর্যাদা দেয় ইউনেস্কো। আমাদের ইতিহাস জানা দরকার। বাঙালির ইতিহাস ত্যাগের ইতিহাস। আর সেটিই আমাদের অর্জন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলা ভাষার প্রতি মর্যদা দেখিয়ে বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন। আমিও যতবার জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছি, বাংলাতেই দিয়েছি।

তিনি বলেন, বাইমেলায় গিয়ে বই কিনে নতুন বইয়ের ওপর হাত দেওয়ার আনন্দই আলাদা। তবে বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ। তাই অন্যান্য লাইব্রেরির পাশাপাশি ডিজিটাল লাইব্রেরির প্রয়োজন রয়েছে। এর মাধ্যমে সহজে বই মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়।

সরকার প্রধান বলেন, আমাদের সরকার শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা পয়সায় বই তুলে দিয়েছে। আমরা বৃত্তি দিই, উপবৃত্তি দিই। শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে মানুষ যাতে দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে তার জন্য আমরা কাজ করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বইমেলা হচ্ছে বাঙালির প্রাণের মেলা। এখন বলতে গেলে এক ধরনের বন্দি জীবনই যাপন করতে হয়, সেই আসার সুযোগ হয় না। আসতে গেলে অন্যের অসুবিধা হয়। নিরাপত্তার কারণে মানুষের যে অসুবিধাগুলো হবে, সেটা বিবেচনা করে আর আসার ইচ্ছাটাও হয় না। আমার জন্য অন্যেরা কষ্ট পাবে। কিন্তু সবসময় সত্যি কথা বলতে কী, মনটা পড়ে থাকে-এই বইমেলায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিক্ষাগ্রহণ করে একটি জাতি আরো উন্নত হতে পারে। দারিদ্র-ক্ষুধামুক্ত হতে পারে, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি। তাই বইয়ের চাহিদা কিন্তু কখনো শেষ হবে না। এটা আমি বলতে পারি।

বাংলা একাডেমি এবার একুশে মাসব্যাপী বইমেলা উপলক্ষে সেমিনারের আয়োজন করেছে এ জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের শিক্ষাকে সব থেকে গুরুত্ব দেই এবং বছরের ১ম দিন সকল ছাত্রছাত্রীদের হাতে প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত সকলের হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেই। যাতে তারা লেখাপড়ায় আরো উৎসাহিত হয় এবং বৃত্তি-উপবৃত্তিও দিয়ে থাকি উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ। এটা ঠিক যে, এখন ছেলেমেয়েরা হাতের মধ্যে একটা …। এখন মোবাইল ফোনেই সব পাওয়া যায়। আবার কেউ ছোট ছোট ডিভাইস ব্যবহার করেন…এই হাতে একটা যন্ত্র নিয়ে পড়ার সত্যি কথা বলতে কি? আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়ে দেখি আমি, ওটা পড়ে কিন্তু শান্তিটা পাওয়া যায় না। বইয়ের পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে পড়ার মধ্যে যে একটা আনন্দ সেই আনন্দটা সব সময় আমরা পেতে চাই। তাই বইয়ের চাহিদা কিন্তু কখনো শেষ হবে না। এটা আমি বলতে পারি। যতই আমরা যান্ত্রিক ভাবে ব্যবহার করি না কেন কিন্ত ওই যে বইয়ের মলাট, একটা বই বুক শেলফে রাখা, এবং সেটা পড়ার মাঝে আলাদা একটা আনন্দ আছে’ বলেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারপরও আমি বলব, অনলাইনে থাকলে সারাবিশ্বের কাছে এবং সকলের কাছে খুব দ্রুত পৌঁছানো যায়। কাজেই ডিজিটাল লাইব্রেরি হওয়া এটাও একান্তভাবে প্রয়োজন। সেটা জরুরি বলে আমি মনে করি।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমরা দেশকে আজকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছি। এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশ আর্থ-সামাজিকভাবে বাংলাদেশ আরো উন্নত সমৃদ্ধশালী হোক, সেটাই আমরা কামনা করি। বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে, বাঙালি জাতি সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে, বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে উঠবে এই বাংলাদেশ; যেখানে জঙ্গিবাদ দুর্নীতি বা মাদক কোনো কিছুর স্থান থাকবে না। বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ায় সব থেকে উন্নত সমৃদ্ধ শান্তিপ্রিয় একটি দেশ। যা জাতির পিতা চেয়েছিলেন। কাজেই জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলবো, সেটাই আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

এরপর উদ্বোধনী স্মারকে স্বাক্ষর করে সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯’র শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।

গ্রন্থমেলা উদ্বোধনের আগে প্রধানমন্ত্রী এবারের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত চার কবি-সাহিত্যিকের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এবার কবিতায় কাজী রোজী, কথাসাহিত্যে মোহিত কামাল, প্রবন্ধ ও গবেষণায় সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে আফসান চৌধুরী বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তানি আমলের গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলো নিয়ে সংকলিত ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। বইটির মোট ১৪টি খণ্ড প্রকাশিত হবে।

বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ এবং মিশরের লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক মোহসেন আল-আরিশি, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনীর সভাপতি ফরিদ আহমেদ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিশিষ্ট সংস্কৃতিকর্মী রামেন্দু মজুমদার।

এবারের বইমেলায় ৫২৩টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। এছাড়া ১৮০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৪টি প্রতিষ্ঠানের ১৫০টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৯৫টি প্রতিষ্ঠানের ৬২০টি ইউনিটসহ মোট ৪৯৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭০টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে ১৮০টি লিটলম্যাগকে ১৫৫টি স্টল দেয়া হয়েছে। ২৫টি স্টলে দুটি করে লিটল ম্যাগাজিনকে স্থান দেয়া হয়েছে। স্টল পেয়েছে অন্য ১৩০টি প্রতিষ্ঠান।

প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত গ্রন্থমেলা উন্মুক্ত থাকবে। ছুটির দিনে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে মেলা। ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে গ্রন্থমেলা।

 

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)