একাধিক সম্পর্কে স্ত্রী, আত্মহত্যার আগে যা লেখে গেলেন স্বামী!
ভালবেসে ঘর বেঁধে ছিলেন তারা। সেই সুখের সংসারে বিশ্বাস ভেঙে চলে আসে অবৈধ সম্পর্ক। আর স্ত্রীর এ সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করলেন স্বামী। ঘটনাটি চট্টগ্রামের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার।
আবাসিক এলাকাটির দুই নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাসায় থাকতেন চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ প্রকাশ আকাশ। ২০০৯ সালে ভালবেসে বিয়ে করেন তানজিলা হককে। প্রচুর ভালবাসতেন স্ত্রীকে। কিন্তু স্ত্রীর পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে কাউকে কিছু না বলেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ডাক্তার।
আত্মহত্যার আগে আকাশ তার নিজের নিজের ফেসবুকে স্ত্রীর উদ্দেশে একটি স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসটিতে স্ত্রীর প্রতি তার অভিমান ও ক্ষোভ প্রকাশ পায়।
নিহত আকাশ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বরকল এলাকার মৃত আবদুস সবুরের ছেলে। তিনি এমবিবিএস শেষ করে এফসিপিএস পড়ছিলেন। এর আগে নিজের ফেসবুকে আরো কয়েকটি স্ট্যাটাস দেন আকাশ। যেগুলো দেখলে যে কেউ বুঝবেন, আকাশ প্রচণ্ড অভিমান থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। স্ত্রীর আচরণে বিরক্ত ছিলেন তরুণ এ চিকিৎসক। স্ত্রীর চরিত্র নিয়েও খোলামেলা লিখেছেন তিনি। স্ত্রী তানজিলা হক মিতুর প্রতি পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ তোলেন আকাশ।
একটি স্ট্যাটাসে ডা. আকাশ লেখেন, আমার সঙ্গে তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর ২০০৯ সাল থেকে পরিচয়। প্রচণ্ড ভালোবাসি ওকে। ও নিজেও আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমরা ঘুরে বেড়াই, প্রেম করে বেড়াই আমাদের ভালোবাসা কমবেশি সবাই জানে। আমাকে অনেকে বউ পাগলাও ডাকত।
আকাশ লেখেন, ২০১৬-তে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক দিন আগে জানতে পারি- কিছু দিন আগে শোভন নামে চুয়েটের ৮ম ব্যাচের এক ছেলের সঙ্গে ও হোটেলে রাত কাটায়; আর কত কী লজ্জা লাগছে সব লিখতে। ততদিনে সবাইকে বিয়ের দাওয়াত দেয়া শেষ। আমাকে যেহেতু চট্টগ্রামের সবাই চিনে, তাই বিয়ে কেনসেল (বাতিল) করতে পারিনি লজ্জাতে।
স্ত্রী সম্পর্কে আকাশ লেখেন, তারপর ও দেশের বাইরে আমেরিকা গেল, মাঝখানে একবার ঈদ পালন করতে আসল সেপ্টেম্বরে ২০১৮ আবার চলে গেল ইউএসএমএলই এর প্রিপারেশন নিচ্ছিল। সাথে ফেব্রুয়ারিতে ২০১৯ এ আমার ইউএসএ যাওয়ার কথা।
‘বারবার বলছি- ভালো না লাগলে আলাদা হয়ে যাও চিট করো না, মিথ্যা বলো না বিশ্বাস ভাঙ্গিও না। হাজার হাজার ছবি আছে, আরো খারাপ খারাপ দিলাম না, যারা বিলিভ করবে এতেই করবে, না করলে নাই। এই ৯ বছরে বয়ফ্রেন্ড স্বামী স্ত্রীর মতো আবার সবি করে গেল।’
‘ও আমাকে আর কি ভালোবাসল? কিসের বিয়ে করল? আমি শেষ পর্যন্ত চাইছি সব চুপ রেখে সমাধান করে অকে নিয়ে থাকতে। আমার শ্বশুর আর শাশুড়িকে বারবার বলছি- উনারা সমাধান করতে পারত! আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী আমার বউ ৯টা বছর যাকে ১০০% ভালবাসছি, ওকে প্ররোচনা দিছে মইন মিথি নামে দুই ফ্রেন্ড ওর মা-বাবা আমাকে মানসিক কষ্ট দিয়ে মারছে। আমিই এই বেইমানি মেনে নিতে পারি নাই। তারপর ও ভুলে আমি সুন্দর সংসার করতে চাইছি।’
আকাশ আরেকটি স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘ও সুন্দরী, পড়াই ভালো, গান পারে সত্য; কিন্তু ও ভালো অভিনেত্রী ভালো চিটার। যাদের ইচ্ছা বিলিভ করবে, যাদের ইচ্ছা নাই করবে না। তবে কাউকে ভালোবেসে চিটার গিরি করো না।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার দুই নম্বর সড়কের ২০ নম্বরে নিজ বাসা থেকে চিকিৎসক হৃদয়ের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত নায়েক হামিদুল্লাহ জানান, সকাল ৬টার দিকে ডা. মোস্তফা মোরশেদকে হাসপাতালে আনলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ডা. মোস্তফা শরীরে ইনজেকশন পুশ করে আত্মহত্যা করেছেন। তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
তবে স্বজনরা জানান, পারিবারিক বিষয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ার জের ধরে রাতে আকাশ অভিমানে শরীরে ইনজেকশন পুশ করে আত্মহত্যা করেছেন।