চা চক্রে মান ভাঙবে ১৪ দলের?

নির্বাচনের পর থেকেই টানাপোড়েন চলছে ১৪ দলের। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখা পাননি ১৪ দলের নেতারা। ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিমও ছিটকে পড়েছেন মন্ত্রিসভা থেকে। তাই ১৪ দলের বৈঠকেও এখন অনাগ্রহ। এই পরিস্থিতিতে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি গণভবনে ১৪ দলের নেতারা চা চক্রের নিমন্ত্রণ পেয়েছেন। যদিও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এই চায়ের দাওয়াত প্রত্যাখান করেছে। বাম গণতান্ত্রিক মোর্চাও বলেছে তারা এই চা চক্রে অংশ নেবে না। ১৪ দল এই সুযোগটা নিতে চায়। তারা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চায়।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন যে, ১৪ দলের ভান ভাঙাতে এই চা চক্র ভাল টনিক হিসেবে কাজ করবে। গত এক মাসে ১৪ দলের চেনা নেতারা অচেনা হয়ে গেছেন। তারা কর্মহীন। কেউ কেউ ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে উষ্ণা প্রকাশ করলেও প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলছে না। তারা একটু দেখতে চাচ্ছে।

নির্বাচনের পর ১৪ দলের শরিকরা অনেকগুলো ধাক্কা খেয়েছে। প্রথম ধাক্কাটি ছিল মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়া। দ্বিতীয় ধাক্কা খেলো যখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বললেন, ১৪ দলের শরিকদের বিরোধী দলে থাকাই ভালো। তৃতীয় ধাক্কাটি ছিল, নির্বাচনের পর আওয়ামী বিজয় সমাবেশে আমন্ত্রণ না পাওয়া। আর চতুর্থ ও সর্বশেষ ধাক্কাটি ছিলো, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একলা চলো নীতি। ফলে ১৪ দলের অধিকাংশ শরিক দলই আওয়ামী লীগের উপর গোপনে গোপনে অসন্তোষ প্রকাশ করছে। কিন্তু তারপরও তারা মনে করছে যে, ১৪ দল থেকে সরে যাওয়া কিংবা আওয়ামী লীগে বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া ভালো সিদ্ধান্ত হবে না। তারা অপেক্ষা করছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি সাক্ষাতের। এ জন্য তারা চেষ্টা তদবিরও যে করেননি তা নয়। চেষ্টা করেও ১৪ দলের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ত সময় থেকে তাদের জন্য কিছু সময় বের করতে পারেননি। বরং এই চা চক্রে ১৪ দলের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চায়ের ফাঁকে ফাঁকে কথা কয়েকটি বিষয়ে কথা বলতে চান।

১৪ দলের একাধিক নেতা বলেছেন যে, তারা মোটামুটি ৫টি বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চা চক্রে কথা বলতে চান।

(১) ১৪ দলের ভবিষ্যৎ কী:  ১৪ দলের ভবিষ্যতের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ১৪ দলের নেতারা একটি সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা চাইবেন। যেহেতু ১৪ দল গঠিত হয়েছিল এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে। সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ২০০১ সালের পর ১৪ দল গঠিত হয়েছিল। যে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ১৪ দল গঠিত হয়েছিল তার বাস্তবতা এখনও রয়ে গেছে। এ বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি দিক নির্দেশনা চাইবেন।

(২) জাতীয় সংসদে ১৪ দলের ভূমিকা: একাদশ জাতীয় সংসদে ১৪ দলের ভূমিকা কী হবে সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকেই শুনতে চাইবেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কিংবা অন্য কোন নেতার বক্তব্যে নয়, ১৪ দলের মূল নেতা শেখ হাসিনার কাছ থেকেই সংসদের ১৪ দলের ভূমিকা সম্পর্কে শুনতে চান তারা।

(৩) সরকাররে কর্মকাণ্ডে ১৪ দলের ভূমিকা: সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি ও কর্মকাণ্ডে ১৪ দল কী ভূমিকা পালন করবে, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর একটি সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা তারা চাইবেন।

(৪) জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ দমনে ১৪ দলের ভূমিকা: জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবাষ্প এখনও রয়ে গেছে সেখানে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে ১৪ দল কী ভূমিকা পালন করতে পারে সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনা চাইবেন ১৪ দলের নেতারা।

(৫) রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মসূচি: আওয়ামী লীগে পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুতে ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মসূচি দিতে পারবে কি না সে ব্যাপার প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব জানতে চাইবেন।

৭ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার পর থেকে ১৪ দলের কোন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। যার ফলে এই চা চক্রটিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ২০ দল, বিএনপি, বাম ফ্রন্ট আসুক বা না আসুক ১৪ দলের আসা অন্য রকম একটি তাৎপর্য বহন করছে। এই চা চক্র শেষ পর্যন্ত ১৪ দলের মান ভাঙানোর চা চক্র হিসেবে পরিণত হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)