আজ মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৫তম জন্ম দিন

আজ ২৫ জানুয়ারি শুক্রবার আধুনিক বাংলা সাহিত্যের রূপকার মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৫তম জন্মদিন। ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি সাগরদাঁড়ি গ্রামে জমিদার পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ও মাতা জাহ্নবী দেবীর কোল আলোকিত করে সোনার চামচ মুখে নিয়ে তিনি জন্ম নিয়েছিলেন। প্রাকৃতিক অপূর্ব লীলাভূমি, পাখি ডাকা, ছায়া ঢাকা, শস্য সম্ভারে সমৃদ্ধ সাগরদাঁড়ি গ্রাম আর বাড়ির পাশে বয়ে চলা স্রোতস্বিনী কপোতাক্ষের সাথে মিলেমিশে শিশু মধুসূদন ধীরে ধীরে শৈশব থেকে কৈশোর এবং কৈশোর থেকে পরিণত যুবক হয়ে উঠেন। কপোতাক্ষ নদ আর মধুসূদনের দু’জনার মধ্যে গড়ে উঠে ভালবাসার এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন। মধুকবি যখন জন্ম গ্রহণ করেন সে সময়ে আজকের এই মৃত প্রায় কপোতাক্ষ নদ কাকের কালো চোখের মত স্বচ্ছ জলের জোঁয়ার ভাটায় ছিল পূর্ণযৌবনা। নদের প্রশস্ত বুক চিরে ভেসে যেত পাল তোলা সারি সারি নৌকার বহর আর মাঝির কণ্ঠে শোনা যেত হরেক রকম প্রাণ উজাড় করা ভাটিয়ালী গান। শিশু মধুসূদন এ সব অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে দেখত আর মুগ্ধ হয়ে যেত। স্রোতস্বিনী কপোতাক্ষের অবিশ্রান্ত ধারায় বয়ে চলা জলকে মায়ের দুধের সাথে তুলনা করে তাই কবি সুদূর ভার্সাই নগরে বসে রচনা করলেন বিখ্যাত সনেট কবিতা ‘কপোতাক্ষ নদ’। তিনি লিখলেন- ‘সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে, সতত তোমারি কথা ভাবি এ বিরলে’।
মহাকবির জন্মদিন উপলক্ষে সাগরদাঁড়িতে উদ্বোধন করা হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ সপ্তাহ ব্যাপী মধুমেলা। এ উপলক্ষে সাগরদাঁড়িকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। এসএসসি পরীক্ষার কারণে ২৫ জানুয়ারির পরিবর্তে ২২ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে মধুমেলা যা চলবে ২৮ জানুয়ারি। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় কবির জন্মস্থান সাগরদাঁড়িতে ২২ জানুয়ারি বিকালে প্রধান অতিথি হিসেবে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার উদ্বোধন করেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এমপি।
প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০০১ সালে ১১ কোটি টাকা ব্যায়ে বাস্তবায়ন করা হয় মধুপল্লী নির্মাণ কাজ। সাগরদাঁড়ি মধুসূদন মিউজিয়াম, পিকনিক কর্নার, মধু মঞ্চ, সুদৃশ্য গেট নির্মিত হয়। এ ছাড়া রয়েছে পর্যটন কেন্দ্র । প্রতিবছর শীতের শুরু থেকে বিভিন্ন পরিব্রাজক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা ভ্রমণ ও পিকনিক পার্টিও আগমন ঘটে থাকে সাগরদাঁড়িতে। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ মেলায় রূপ নেয় মধু মেলা। কেশবুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহিন জানান, মেলার মাঠ নিরাপত্তা চাদরে মোড়া হয়েছে।
মেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানূর রহমান সাংবাদিকদের জানান, মেলায় মধু ভক্তদের নিরাপত্তা বিধানে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতিদিন চলছে সার্কাস, মৃত্যুকূপ, নাগরদোলা, বিসিকের কুঠির শিল্প স্টল সহ প্রতিদিন উন্মুক্ত মঞ্চে থাকছে মহাকবির সাহিত্য সৃষ্টির উপর বিষয় ভিত্তিক আলোচনা, নাটক ও যাত্রানুষ্ঠান।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)