পৃথিবীর সবচেয়ে ‘বিপজ্জনক মাদক’!

পৃথিবীতে মাদকের অভাব নেই। মাদকের করাল গ্রাস সম্পর্কে প্রায় সবাই অবহিত থাকলেও এর বিস্তার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না কিছুতেই। এর কারণ কী? উত্তর হলো এর আসক্ত করার ক্ষমতা। প্রায় যেকোনো মাদক একবার গ্রহণ করলেই তার প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হয়। আস্তে আস্তে তার ওপর নির্ভরতা চলে আসে, যা থেকে নিজেকে মুক্ত করা মোটেই সহজ কাজ নয়। এভাবেই মাদকে আসক্ত হয়ে একজন ব্যক্তি তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে যায়। এখন প্রশ্ন হতেই পারে সবচেয়ে আসক্তিকর মাদক কোনটি? ব্যক্তিবিশেষে এ প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন হতে পারে। একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর মাদক দেহের কতটা ক্ষতি সাধন করে, সেটি কত সহজে বা অনায়াসে পাওয়া যেতে পারে। তা মস্তিষ্কের ডোপামিন সিস্টেমকে কতটা প্রভাবিত করে, কত তাড়াতাড়ি একজন ব্যক্তি সেই মাদকের উপর নির্ভরশীল হয়ে যান- সহ আরো অনেক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে গবেষকরা সিদ্ধান্ত নেন সেটি কতটা আসক্তিকর।

এছাড়াও একটি নির্দিষ্ট মাদকদ্রব্যের আসক্তি ক্ষমতা আরো কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করতে পারে। গবেষকরা অনেক সময় এগুলো নিয়ে দ্বিধান্বিত থাকেন। তবে এখানে আমরা ২০০৭ সালে গবেষক ডেভিড নাট ও তার সহকর্মীরা বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে যে প্রতিবেদন তুলে ধরেন তার আলোকে সবচেয়ে আসক্তি ক্ষমতাসম্পন্ন ৫ টি মাদকদ্রব্যকে তুলে ধরব। যেহেতু এগুলো খুবই আসক্তিকর বলে প্রমাণিত, তাই পাঠকদের প্রতিও অনুরোধ থাকবে এগুলো থেকে সর্বদা দূরে থেকে মাদকের সর্বনাশা পরিণতি থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখার জন্য।

হেরোইন: নাট ও তার সহকর্মীবৃন্দ হেরোইনকে সবচেয়ে আসক্তিকর মাদকের তালিকার শীর্ষে রেখেছেন। সর্বোচ্চ ৩ নম্বরের মধ্যে হেরোইনকে তারা দিয়েছেন ৩! অর্থাৎ এই মাদকদ্রব্যটির আসক্তি ক্ষমতা শতভাগ! বিভিন্ন প্রাণীর উপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, হেরোইন মস্তিষ্কের ডোপামিন লেভেল দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়। হেরোইনের আসক্তি ক্ষমতা যে সর্বোচ্চ শুধু তাই নয়, এটি ভীষণ বিপজ্জনকও বটে।

কোকেন: ডোপামিনের মস্তিষ্কের এক নিউরন থেকে অন্য নিউরনে বার্তা বহনের ক্ষমতাকে সরাসরি প্রভাবিত করে কোকেন। উপরন্তু এ মাদকটি প্রয়োজন অনুসারে মস্তিষ্কের ডোপামিন ক্ষরণ বন্ধ করার ক্ষমতা কেড়ে নেয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারা বিশ্বে প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি মানুষ নিয়মিত কোকেন গ্রহণ করে। বিশ্বজুড়ে কোকেনের বাৎসরিক লেনদেন হয় ৭৫ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের!

মেথাডোন: মেথাডোন হলো খুবই শক্তিশালী ব্যাথানাশক। হেরোইন আসক্তদের চিকিৎসা হিসেবে মাঝে মাঝে মেথাডোন দেয়া হলেও এটি হেরোইনের চেয়েও আসক্তিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এর থেকে মুক্ত হওয়া বেশি কঠিন বলে অনেক বিশেষজ্ঞের অভিমত। মানুষের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ওপর মেথাডোনের প্রভাব এতোই বেশি যে একবার এটিতে আসক্ত হয়ে পড়লে ছেড়ে দেওয়া বেশ দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।

নিকোটিন: বৈজ্ঞানিক তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায়, তামাকের ব্যবহারে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি নিরাময়যোগ্য রোগ, পঙ্গুত্ব এবং মৃত্যু ঘটে। শুধুমাত্র আমেরিকাতেই প্রতি বছর গড়ে ১ কোটি ৬০ লাখ লোক নিয়মিত তামাক ব্যবহারের ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি ও রোগের সম্মুখীন হন। অন্যান্য ভয়াবহ মাদক দ্রব্যের মতোই নিকোটিন আমাদের মস্তিষ্ককে আক্রান্ত করে এর অ্যাসিটাইলকোলিন রিসেপ্টরগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার যথেষ্ট আসক্তি সৃষ্টি করে, নিয়মিত ব্যবহারে এর উপর মারাত্মক নির্ভরতা তৈরি হয়।

অ্যালকোহল: অ্যালকোহল মানুষের মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের জন্য বেদনা উপশমকারী হিসেবে কাজ করে, অবসন্নতা আনে, দুশ্চিন্তা কমায়, বিধিনিষেধ লোপ পায়। মদ পান করলে মস্তিষ্কে ডোপামিন ও এন্ড্রোফাইন নিঃসরণ করে, যার ফলে মনে সন্তুষ্টি আসে ও ব্যাথা কমায়। এর ফলেই তৈরি হয় আসক্তি, মস্তিষ্ক সন্তুষ্ট করতে মদ্যপ ব্যক্তি আরো বেশি মদ পানে উৎসাহিত হয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)