চাঁদ কি সত্যিই পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে!

বাংলায় বলা হয় চাঁদ, ইংরেজিতে দ্য মুন অথবা লুনা। চাঁদ হল পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ। এর উৎপত্তি হয় আজ থেকে আনুমানিক ৪৬০ কোটি বছর আগে, সৌরজগতের উৎপত্তির ৩ থেকে ৫ কোটি বছরের মধ্যে। আমরা সবাই জানি চাঁদ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের ঘূর্ণন গতি হল সিনক্রোনাস রোটেশন, যার মানে চাঁদের একটি নির্দিষ্ট পৃষ্ঠ সব সময় পৃথিবীর দিকে মুখ করে থাকে এবং এভাবেই পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে। ১৯৫৯ সালে লুনার প্রোগ্রামের আওতায় চাঁদে সর্বপ্রথম মনুষ্যবিহীন অভিযান পরিচালনা করে সোভিয়েত ইউনিয়ন।১৯৬৯ সালে সর্বপ্রথম অ্যাপোলো ১১ অভিযানের মাধ্যমে মনুষ্যবাহী মহাকাশযান চাঁদে পাড়ি দেয়।

চাঁদের ব্যাস ৩ হাজার ৪৭৫ কিলোমিটার। চাঁদ সৌরজগতের পঞ্চম বৃহত্তম প্রাকৃতিক উপগ্রহ। এর ভর পৃথিবীর ১০০ ভাগের প্রায় এক ভাগ। চাঁদের কক্ষপথের মোট দূরত্ব ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। মোটামুটি সাড়ে সাতাশ দিনে চাঁদ তার কক্ষপথকে একবার পরিক্রমণ করতে পারে। চাঁদের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা -২৩৩ থেকে ১২৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারে।শুরুতেই চাঁদের সিনক্রোনাস রোটেশনের কথা বলা হয়েছে, চাঁদের শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট পৃষ্ঠই পৃথিবীর দিকে মুখ করে থাকে সর্বদা।এ থেকে অনেকেই ধারণা করেন যে চাঁদের অপর পৃষ্ঠটি ঘুটঘুটে অন্ধকার। পৃথিবী থেকে চাঁদের এ অদৃশ্যমান পৃষ্ঠকে অনেকেই ‘দ্য ডার্ক সাইড অফ দ্য মুন’ তকমা দিয়ে থাকেন।

তবে এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। চাঁদের উভয় পৃষ্ঠই সূর্য থেকে সমানভাবে আলোকিত হয়। তবে চাঁদ যে বেগে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে ঠিক সেই বেগেই নিজ অক্ষ বরাবরও ঘুরতে থাকে অনবরত, এ কারণে আমরা পৃথিবী থেকে চাঁদের শুধুমাত্র একটি পৃষ্ঠই দেখতে পাই। তবে মহাকাশচারীরা মহাকাশযানে করে যাওয়ার সময় চাঁদের অপর আলোকিত পৃষ্ঠও দেখতে পেয়েছেন।চাঁদের আকর্ষণেই পৃথিবীতে জোয়ার ভাটা হয়। চাঁদ পৃথিবীর উপর যে মহাকর্ষ বল প্রয়োগ করে, তাতে পৃথিবীতে দু’টি স্ফীতির সৃষ্টি হয়। একটি স্ফীতি ঘটে সেখানে যেখানে পৃথিবী চাঁদের দিকে মুখ করে আছে। অন্য স্ফীতিটি হয় পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের বিপরীতে থাকে সে অংশে। পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে এর এক অংশ একবার চাঁদের মুখোমুখি হয়, আবার আবর্তন এর পর চাঁদের বিপরীত দিকে চলে যায়। এভাবেই যথাক্রমে পৃথিবীতে জোয়ার ও ভাটার সৃষ্টি হয়।

জানলে অবাক হবেন, চাঁদ ক্রমশ পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। হিসেব করলে দেখা যায় প্রতিবছর চাঁদ পৃথিবী থেকে ৩ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার দূরে সরে যাচ্ছে। অনুমান করা হয় আগামী ৫০ বিলিয়ন বছর যাবত চাঁদের পৃথিবী থেকে এই দূরে সরে যাওয়া অব্যাহত থাকবে। যদি সত্যিই তাই হয়, তখন পৃথিবীর চারপাশে চাঁদের আবর্তন কাল ২৭ দশমিক ৩ দিন থেকে বেড়ে হবে ৪৭ দিন! পৃথিবীর যেকোনো বস্তুকে চাঁদে নেয়া হলে তার ওজন অনেক কম অনুভূত হবে। এর কারণ পৃথিবীর থেকে চাদেঁর অভিকর্ষ বল অনেক কম। চাঁদের অভিকর্ষ বল পৃথিবীর মাত্র ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ, প্রায় ছয় ভাগের এক ভাগ। এ কারণেই চাঁদের বুকে মহাকাশচারীরা লাফিয়ে অনেক উঁচুতে উঠতে পারেন।এখন পর্যন্ত চাঁদের মাটিতে হাঁটার সৌভাগ্য হয়েছে মাত্র ১২ জনের। যারা সকলেই মার্কিন এবং তারা পুরুষ

মোটামুটি সকলেই জানেন, মানব জাতির পক্ষ থেকে চাঁদে সর্বপ্রথম পা রেখেছিলেন ১৯৬৯ এর অ্যাপোলো ১১ অভিযানের নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং। চাঁদে পা দেয়া সর্বশেষ ব্যক্তি হলেন দিন কারনান, ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো ১৭ মিশনের একজন নভোচারী হিসেবে চাঁদে গমন করেছিলেন তিনি।চাঁদের কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। ফলে বিভিন্ন মহাজাগতিক রশ্মি, উল্কাপিণ্ড ও সৌর বায়ুর কবল থেকে চাঁদ অনেকটাই অরক্ষিত, এ কারণেই চাঁদের তাপমাত্রায় অনেকটা তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। বায়ুমণ্ডল না থাকায় চাঁদে কোন শব্দ শোনা যায় না এবং চাঁদের আকাশ সর্বদা কালো দেখায়।চাঁদে প্রতিনিয়তই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর কারণ হলো চাঁদের ওপর পৃথিবীর আরোপিত মহাকর্ষ বল। চন্দ্র অভিযানের সময় নভোচারীরা চাঁদের পৃষ্ঠে সিসমোগ্রাফ ব্যবহার করেন এবং চাঁদের ভূমির বেশ কয়েক কিলোমিটার নিচে থেকে উৎপন্ন ভূমিকম্পের অস্তিত্ব টের পান। এর ফলে চাঁদের পৃষ্ঠে অনেক ফাটলও দেখা দেয়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, পৃথিবীর মতো চাঁদের কেন্দ্রভাগও গলিত পদার্থে পরিপূর্ণ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)