বাণিজ্য যুদ্ধের সুফল বাংলাদেশ পাবে কী?
বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে গেল অর্থবছরে (২০১৭-১৮) বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিতে ছিল নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। ওই বছরে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি কমে যায় সাড়ে চার শতাংশ। তবে এবার তা বেশ চাঙা।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০১৮-১৯) প্রথম দশ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে সাড়ে ছয় শতাংশেরও বেশি। যাতে অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে প্রবৃদ্ধি হয় ২১ শতাংশ।
এছাড়া বছরের প্রথম দশ মাসে দেশটির বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ৭ হাজার ১০২ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। এক্ষেত্রে চীন ও ভিয়েতনামের পরেই রয়েছে বাংলাদেশ।
ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কেউ কেউ মনে করছেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে তৈরি পোশাক রফতানি খাতে সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে তারা চীনে ক্রয় আদেশ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ এর সুফল পাচ্ছে বলে মত দেন। ফলে ব্যবসায়িক মহলে প্রশ্ন উঠছে- বৈশ্বিক বাজারে পোশাক রফতানিতে এই বাণিজ্য যুদ্ধের সুফল বাংলাদেশ পাবে কী?
তবে কেউ কেউ মনে করলেও, বাণিজ্য যুদ্ধের বিষয়টি পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন পোশাক খাতের ব্যবসায় প্রতিনিধিদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।
তিনি বলেন, বাণিজ্য যুদ্ধের জন্য যে আমরা উপকৃত হচ্ছি, তা কিন্তু নয়। কারণ এখনো চীনের মার্কেট শেয়ার বৈশ্বিক বাজারে ৩৪ শতাংশ। আর আমাদের মার্কেট শেয়ার সাড়ে ছয় শতাংশের একটু বেশি। তাহলে চীনের অংশ যদি একেবারে কমে যেত। আর আমাদের ওইভাবে না বাড়ত, তাহলে আমরা বুঝতাম। আমরা এখন বলতে পারি যে, আমাদের এখনকার ইন্ডাস্ট্রিগুলো নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব। নিজেদের সক্ষমতার গুণেই আমরা আজ এই অবস্থায় এসেছি বলে মনে করি।
সিদ্দিকুর রহমানের দাবি, নিজেদের সক্ষমতার কারণেই বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে। আর শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেই নয়, বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই পোশাক রফতানি বেড়েছে বাংলাদেশের। কারখানার উন্নয়নের ফলেই রফতানির এই প্রবৃদ্ধি।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ট্রাম্প ইফেক্টের প্রভাব বৈশ্বিক পোশাক খাতে এখানো পড়েনি। তবে অন্যান্য খাতে পড়েছে। আর ভবিষ্যতে চীন যদি পোশাক খাত থেকে সরে আসে, তাহলে বাংলাদেশকে এই বাজার দখলে এগিয়ে আসতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে বিশ্ববাজারে চীনের রফতানি কমলে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ এর সুযোগ নিতে পারে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা। এর অংশ হিসেবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্য যুদ্ধের এই সময়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পারে।
ইপিবি’র হালনাগাদ তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বাংলাদেশের রফতানি আয় হয়েছে ১ হাজার ৭০৭ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১২ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ যা ছিল ১ হাজার ৪৫৬ কোটি ডলার। এই হিসেবে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক ২৪ শতাংশ।
এতে সংস্থাটির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি বছরে জুলাই থেকে নভেম্বর সময়ে মোট রফতানি আয়ে বড় অবদান রেখেছে তৈরি পোশাক খাত। এই সময়ে তৈরি পোশাক খাত থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৪১৮ কোটি ৬২ লাখ ডলার। যাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। এই হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ শতাংশ। আর গত বছর একই সময়ে আয় বেড়েছে ১৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
গত অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশের মোট ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ৮২ লাখ ডলার আয় হয়। যার মধ্যে ৩০ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারই এসেছিল তৈরি পোশাক থেকে।