জাপায় হাওলাদারকে নিয়ে এরশাদ-রওশন বিরোধ
দেশের সমস্যা ও সম্ভাবনা মাথায় রেখে ভবিষ্যত তরুণ প্রজন্ম ও নারীদের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তায় রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট ইশতেহার দিচ্ছে। এর বিপরীতে এরশাদের জাপার নির্বাচনী ইশতেহার একেবারেই সাদামাটা। অথচ দলটি গত পাঁচবছর সংসদের বিরোধী দল ছিল।
জাপা ইশতেহারে ক্ষমতায় গেলে প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা ও নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু এরশাদের মতো আনপ্রেডিক্টেবল ও বয়জেষ্ঠ্য রাজনীতিক কি আসলেই এরকম কিছু করতে তা পারবে, এই নিয়ে সংশয় রয়েছে জনমনে।
নির্বাচনে জয়ী হয়ে জাপা ক্ষমতায় যেতে পারলে দলটির চেয়ারম্যান এরশাদ দেশে প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা, নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার, ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ ১৮টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন।
শুক্রবার জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে এরশাদের অনুপস্থিতিতে সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও পার্টির সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এসব অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরে একাদশ সংসদ নির্বাচনে পার্টির ইশতেহার ঘোষণা করেন।
দলের জ্যেষ্ঠ কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের এমনকি দলের মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা দেশে রয়েছেন। দলের ইশতেহার ঘোষণার মত গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি তো, তাদেরই ঘোষণা করার কথা, কিন্তু সে জায়গায় মনোনয়ন বাণিজ্যে লিপ্ত থাকার অভিযোগে বিতর্কিত ও মহাসচিব থেকে সরিয়ে দেয়া হাওলাদারকে দিয়ে ইশতেহার ঘোষণায় দলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ক্ষুব্ধ হয়েছেন রওশন, জিএম কাদেরসহ রওশনপন্থী নেতারাও। একারণে রওশনপন্থী নেতারা যাননি হাওলাদারের অনুষ্ঠানে। তারা হাওলাদারের ইশতেহার কর্মসূচি বর্জন করেছেন বলে জানিয়েছে পার্টির বিশ্বস্ত সূত্র। এ নিয়ে দিনভর কানাঘুষাও চলছে জাতীয় পার্টিতে।
জানা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারো বিভক্ত হয়ে পড়েছে এরশাদের জাতীয় পার্টি। রুহুল আমিন হাওলাদার, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, এসএম ফয়সল চিশতী, সোহেল রানা, অ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম, সুনীল শুভরায়, মেজর অবসরপ্রাপ্ত খালেদ আখতার, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভুইয়া, আরিফ খান, মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, সুমন আশরাফ, রাজ্জাক খানসহ উল্লেখযোগ্য নেতাকর্মী এরশাদের পক্ষে।
অন্যদিকে জিএম কাদের, জ্যেষ্ঠ নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ, ফখরুল ইমাম, মশিউর রহমান রাঙ্গা, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মুজিবুল হক চুন্নু, লিয়াকত হোসেন খোকা, সেলিম ওসমান, আবুল কাসেম, গোলাম কিবরিয়া টিপু, নুরুল ইসলাম ওমর, শওকত চৌধুরীসহ শীর্ষ ও মধ্য সারির একটি অংশ রওশনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে এখনও সবচেয়ে বড় অংশটুকু আছেন এরশাদের সঙ্গে।
সূত্র জানায়, বিরোধী দলীয় নেতা রওশনের চাপে দলের মহাসচিবের পদ থেকে হাওলাদারকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হলেও বিষয়টি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না দলের চেয়ারম্যান এরশাদ। কারণ দলের মনোনয়ন বাণিজ্যের নেতৃত্বে দলের মহাসচিব হিসেবে হাওলাদারকে দায়ি করা হলেও, এতে খোদ দলের চেয়ারম্যান এরশাদসহ প্রভাবশালী সিন্ডিকেট জড়িত ছিলেন বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ।এরশাদ নিজে বাঁচতে ওই সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্যের কুবুদ্ধিতে সব দোষ হাওলাদারের উপর চাপিয়ে তাকে দল থেকে অব্যহতি দিতে বাধ্য হন। হাওলাদারের স্থলে মহাসচিব করা হয় রওশনপন্থী প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গাকে। এতে বিরোধীনেতা ও পার্টির জ্যেষ্ঠ কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, কো চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ দলের একটি বড় অংশ খুশি হলেও মনে মনে নাখোশ ছিলেন এরশাদসহ সিন্ডিকেট সদস্যরা। তাই বাধ্য হয়ে অব্যহতির শাস্তি দিয়ে পরে খুশি করতে হাওলাদারকে সাংগঠনিক অবস্থান থেকে নিজের পরে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে নিয়োগ দেন। গঠনতন্ত্রে এমন কোন পদের নজির নেই বললেই চলে।
চিকিৎসার উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুর যাওয়ার প্রাক্কালে জেদ করে এরশাদ তার অনুপস্থিতিতে (এরশাদের পরে) দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে হাওলাদারকে সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়ে যান। এতে হাওলাদারই এখন পদমর্যাদা ও ক্ষমতায় কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ ও কো চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের উপরে এবং এরশাদের পরে অবস্থান করছেন। সেই ক্ষমতায় এরশাদের অনুপস্থিতিতে দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন হাওলাদার।