‘নির্বাচন কমিশন রেফারি অথচ তারাই ফাউল করছে’
‘মাঠে খেলোয়াড় ফাউল করলে রেফারি বাঁশি বাজিয়ে ব্যবস্থা নেয়। নির্বাচনও একটি খেলা। বিভিন্ন দল নির্বাচন নামের খেলায় নেমেছে। ফাউল হতেই পারে। ব্যবস্থাও আছে। তবে ফাউল হলেও এখনও আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখছি না। নির্বাচন কমিশন (ইসি) রেফারি অথচ তারাই ফাউল করছে।’
কথাগুলো বলছিলেন রাজনীতি, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। বল সরকারের কোর্ট থেকে নির্বাচন কমিশনের কোর্টে চলে গেছে বলে মত দেন। তবে সরকার চাইলে এক ঘণ্টায়ই সব সংকট কেটে যাবে।
তিনি বলেন, ‘মানুষ এখন অধিকারহারা। উন্নয়নের কথা শুনিয়ে নাগরিকের মৌলিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে। ভোট দেয়ার জন্য মানুষ অধীর আগ্রহে রয়েছে। ভোট দিতে পারা মানুষের তৃপ্তির ব্যাপার। গত কয়েক বছর ধরে মানুষ অতৃপ্তিতে রয়েছে। এটি সরকারের বোঝা উচিত। বারবার ঠকলে ঘৃণা তৈরি হয়। এ পরিস্থিতি কোনোভাবেই রাষ্ট্র, সমাজের জন্য শুভকর নয়। চাপা ভয় সবার মধ্যেই আছে, তা মন্ত্রীদের কথা শুনলেই ধারণা করা যায়।’
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বদিউল আলম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। যারা অন্যায় করছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মানুষ মরছে, আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিব্রত বোধ করেই দায়মুক্তি নিতে চাইছে। এভাবে দায় এড়ানো যায় না। এতে মানুষের মধ্যে ভয় আরও বাড়ছে। এ ভয় কমিয়ে আনতে পারে এখন কমিশনই।’
সামনের দিনে সংঘাত আরও বাড়তে পারে এমনটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুলিশের কারণেই এ সংঘাত বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ পুলিশ এখন নিদির্ষ্ট পক্ষ হয়ে কাজ করছে। সরকারবিরোধীদের গ্রেফতার, মামলা, হামলায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ছে পুলিশ।’
‘নির্বাচনী মাঠে সাধারণত তিনটি পক্ষ থাকে। সরকার, বিরোধীপক্ষ আর প্রশাসন। তিনটি পক্ষের সহাবস্থান থাকলে মানুষ আস্থা পায়, ভোট সুষ্ঠু হয়। কিন্তু প্রশাসন আর সরকার দল মিলে যদি একটি পক্ষ হয়, তখন আর ভারসাম্য থাকে না। বিরোধীপক্ষের ওপর জুলুম নেমে আসে। এখন তাই হচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।
সংকট উত্তরণ প্রসঙ্গে বদিউল আলম বলেন, ‘দুইভাবে সংকট উত্তরণ হতে পারে। প্রশাসন আরও নিপীড়ক হয়ে বিরোধীপক্ষকে মাঠ ছাড়া করতে পারলে ভোটের দিন সংকট কমতে পারে। সরকার হয়তো সেটাই চাইছে। তবে এতে দেশে বিপর্যয় নেমে আসবে, যেখান থেকে কেউ রক্ষা পাব না। আর সরকার ও প্রশাসনের শুভবুদ্ধির উদয় হলেই সত্যিকার অর্থে সংকটের উত্তরণ ঘটবে। জানি না সেই বিবেচনা সরকার আদৌ করবে কী-না?’