পাটকেলঘাটা আখ মাড়াই কাজে ব্যস্ত আখ চাষিরা

চিরাচরিত গ্রাম বাংলার সংস্কৃত আর ঐতিহ্যের ধারক এবং বাহক আখের গুড় ও পাটালি। কালের বিবর্তনে আজ সেটি বিলুপ্ত হতে চলেছে। হ্রাস পেয়েছে মাঠ, ঘাট, আর বিল গ্রাম বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী আখ চাষ। শীতের শুরুতে আখ মাড়াই শুরু হয়ে যায়। আখ চাষিরা আপন মনে তৈরি করে চুলা (বান)। অবশেষে চুলা শুকিয়ে ও আখ মাড়াই মেশিন পুতে মাঝ রাতে কিংবা রাতের শেষ প্রহরে শুরু হয় সংগ্রহ স্বাদের রস। এক সময় স্বাদে আর গন্ধে শীতকালীন সময়ে গ্রাম বাংলার প্রতিটি বাড়িতে মাতিয়ে রাখত পিঠা, পুলি আর পায়েস। ঢেঁকিঘরে চাউল মাড়ানোর ঢক ঢক শব্দ শোনা যেত। শীতের সকাল হতেই যেন রোদে বসলে হাজির হতো নারকেল আর চালের গুড়ো দিয়ে তৈরি করা রসে ডোবানো টইটুম্বুর রস পিঠা। একখানা মুখে উঠাতেই যেন আরেকটি খাওয়ার স্বাদ মাথায় চেপে বসত। নতুন জামাইয়ের সামনে রস পিঠা হাজির না হলে যেন মহাভারত একেবারেই অশুদ্ধ হয়ে যেত। আবার গ্রামে ছেলে কিংবা মেয়ের বিয়ের ৩ দিন পূর্ব হতে শুরু হয়ে যেত মুখে রসের তৈরি গুড়ের ক্ষীর উঠানো। সকলে সাধ্যমতো টাকা দিয়ে ক্ষীর দ্বারা মিষ্টি মুখ করিয়ে থাকে। দানা পড়া খেজুরের গুড় আর নারকেল কুড়ার সাথে পান্তা ভাত মিশিয়ে খেতে সকলেই পছন্দ করতো। খেজুরের তৈরি আখের পাটালি তালা উপজেলায় বেশ নাম করা। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ তা হারিয়ে যেতে বসেছে। যদিও হাতে গোনা কিছু সীমিত গাছ উঠানো হয় তার দাম আকাশ চুম্বী। যে রস কলস (ভাড়) প্রতি ১০ টাকায় বিক্রি হতো আজ তা ডুমুরের ফুল হওয়ায় ১০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাঠ, ঘাট ছাড়াও নদীর চরজুড়ে ছিল শত শত খেজুর গাছ। নদী সচল থাকায় পানি সহজে নেমে যেত। কিন্তু বছরের ৬ মাস বন্যায় প্লাবিত হয়ে গাছের গোড়ায় জমে থাকায় আজ সেটি বিলুপ্ত হতে চলেছে। কুমিরা গ্রামের গাছি শুকুর আলী, ছোটন জানান, কার্তিক হতে চৈত্র পর্যন্ত প্রায় ছয় মাস আমরা খেজুর গাছ হতে রস বের করার কাজে ব্যস্ততার সহিত পার করতাম। রুটি, রুজির একমাত্র সম্বল ছিল খেজুর গাছ। এখন যে কয়টি গাছ কাটি তাতে আত্মতৃপ্তি হয় না। রাঢ়ীপাড়া গ্রামের নুর আলী,কুমিরা গ্রামের আব্দুস সালাম, নওয়াবআলী শেখ জানান, কয়েক বছর পূর্বে চতুর্দিকে খেজুর গাছের বেশ সমারোহ ছিল। বর্তমানে তার শিকে ভাগও নাই। বন্যার পানি, প্রতিকুল আবহাওয়া আর সংরক্ষণের মনোভাব এর একমাত্র কারণ। আবারও যাতে মাঠ, ঘাট আর চরবিল জুড়ে খেজুর গাছের সমারোহ সৃষ্টি হয় তার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির আহবান জানিয়েছেন পরিবেশ বিদগণ

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)